একটা প্রজন্মের কাছে সঞ্জীব কাপুর মানেই, দু হাত নেই শোলের ছবির ঠাকুর। এই অভিনেতাকে নিয়ে নানা ধরণের গল্প আছে। এমনকি বাংলা ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে কান পাতলে শোনা যায় তিনি নাকি মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের মেয়ে মুনমুনের, কন্যা সম্প্রদান পর্যন্ত করেছিলেন।
সঞ্জীব কুমারের জীবন কাহিনী কোনও সিনেমার চেয়ে কম নয়। গুজরাটের সুরাটের একটি মধ্যবিত্ত গুজরাটি পরিবার থেকে উঠে আসা সঞ্জীব, হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে বড় জায়গা করে নিয়েছিলেন। তাঁর না কোনও গডফাদার ছিল, না তো তিনি স্টারকিড ছিলেন। শুধু ছিল উচ্চাকাঙ্খা। যদিও তিনি দিলীপ কুমার, রাজেশ খান্না এবং শত্রুঘ্ন সিনহার মতো তাঁর সমসাময়িকদের মতো জনপ্রিয়তা উপভোগ করতে পারেননি। তবে তিনি খিলোনা, আঁধি, মৌসম, নামকিন, কোশিশ, অনামিকার মতো ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে একটি তুখোড় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তিনি সেই বিরল অভিনেতাদের মধ্যে একজন, যিনি প্রথম দিকে ভূমিকা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পিছপা হননি, এমনকি ত্রিশূল এবং শোলের মতো ছবিতে বয়স্ক চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
Bollywood Actor Tragic Life: ভয়ঙ্কর দৃশ্য! বাবার হত্যালীলা স্বচক্ষে দেখ…
কতজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান?
তাঁর ভক্তরা তাঁর শক্তিশালী অনস্ক্রিন উপস্থিতি নিয়ে ভাবলেও, সঞ্জীবের ব্যক্তিগত জীবনই সবসময় স্পটলাইটে রয়ে গেছে। অভিনেতা, মহিলাদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন, এবং তিনি বহুবার সেই নিয়ে কথাও বলেছেন। ফিল্মফেয়ারের সাথে একটি পুরানো সাক্ষাত্কারে, অভিনেতা অঞ্জু মহেন্দ্রু, যিনি সঞ্জীবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন, তিনি বলেছিলেন অভিনেতা নাকি গুনতেন তাঁর কয়টি প্রেমিকা আছে বা ছিল। তিনি বলেন, "যখনই কোনও মহিলাকে ডেট করত, আমার সঙ্গে শেয়ার করত। আমরা তার বান্ধবীদের সংখ্যা দিয়ে মনে রাখতাম, ১-২-৩ এরকমভাবে। তিনি ফোন করে বলতেন, '৩ নম্বর আমাকে আজ ফোন করেছিল এবং ৯ নম্বর এভাবে কথা বলেছে।"
সঞ্জীব তাঁর জীবদ্দশায় সায়রা বানু, হেমা মালিনী, জয়শ্রী টি, শাবানা আজমি এবং সুলক্ষণা পণ্ডিত সহ অনেক অভিনেত্রীর সাথে যুক্ত ছিলেন। তবে হেমা মালিনীর সঙ্গে তাঁর প্রেমের গল্প সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছিল। সেই সময় হেমার অনেক গুণগ্রাহী ছিল। অনেকেই তাঁর প্রেমে পড়েছিলেন। জিতেন্দ্রও তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। তিনি সীতা অর গীতা (১৯৭২) ছবির সেটে সঞ্জীবের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন এবং অভিনেতা তাকে বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে বিয়ের পর কাজ বন্ধ করে দেওয়ার শর্তে তাদের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। অ্যান অ্যাক্টর'স অ্যাক্টর বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, "সাংস্কৃতিক পার্থক্য কোনও বাধা সৃষ্টি করেনি, তবে হেমা মালিনীর কেরিয়ার ছাড়ার প্রসঙ্গই বিতর্ক সৃষ্টি করে।"
Actress Tragic Death: ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার পচা-গলা দেহ, অকালমৃত্যু অভিনেত্রীর..
নারীরা শুধু তাঁর সম্পত্তি চিনতেন?
যদিও সঞ্জীবের অনেক সম্পর্ক ছিল, তিনি তার জীবনে কখনই মহিলাদের সত্যিকারের বিশ্বাস করেননি। কিছুটা হৃদয় ভাঙার কারণে এবং কিছুটা তার চারপাশের লোকেরা তাকে যা বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছিল তার কারণে। অঞ্জু মহেন্দ্রু একবার প্রকাশ করেছিলেন যে কীভাবে তিনি মহিলাদের কারণে একটু বেশিই সতর্ক থাকতেন। সন্দেহ করতেন, যে তারা কেবল তার অর্থের প্রতি আগ্রহী। তিনি বলেন, 'আমি জানি না ও বারবার প্রেমে পড়েছিল, নাকি মহিলারা বারবার ওর প্রেমে পড়েছিল। কিন্তু তার চারপাশে সব সময় অসংখ্য নারী থাকতেন। তিনি মনোমুগ্ধকর ছিলেন, তাঁর হাসিতে মজে থাকতেন সকলে। তারা তাকে ডাব্বা পাঠিয়ে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করতেন। কেউ কেউ আবার সত্যিকার অর্থেই তার প্রেমে পড়েছিল। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতেন যে তারা তার সম্পত্তির জন্যই তাঁর কাছে এসেছিলেন।
আকাঙ্খার অবসান
জীবনসঙ্গীর আকাঙ্ক্ষার পাশাপাশি নিজের বাড়িতে থাকার স্বপ্নও দেখতেন সঞ্জীব। জীবনের শেষ দিকে এসে তিনি বিশাল সম্পত্তি ক্রয় করেছিলেন। তবে বিক্রেতার পরিবারের মধ্যে আইনি বিরোধের কারণে তিনি কখনই এর মালিকানা দাবি করতে পারেননি। প্রচণ্ড মদ খেতেন তিনি। হার্ট অ্যাটাকের পর তাঁর বাইপাস পর্যন্ত হয়। সঞ্জীব কুমার ১৯৮৫ সালে ৪৭ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, স্ত্রীর সাথে জীবন কাটানো এবং একটি বাড়ির মালিক হওয়ার দুটি স্বপ্ন পূরণ না করেই।