/indian-express-bangla/media/member_avatars/2024/12/18/2024-12-18t155945930z-whatsapp-image-2024-12-15-at-102343-am.jpeg )
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/02/08/S6sNeJzo86JmKR3hEiKS.jpg)
সোহম-শ্রাবন্তীর পুরনো জুটির ফ্লেভারটা ফেরানোই আমার টার্গেট: সপ্তাশ্ব বসু
'দুর্গানগর' ছবিতে সোহম-শ্রাবন্তীকে কেমন চরিত্রে দেখা যাবে?
এখানে শ্রাবন্তীকে একেবারে অন্যরকম একটি চরিত্রে দেখা যাবে। ওঁর চরিত্রের নাম গায়েত্রী। পাহাড়ি গ্রামের একটি নাচের স্কুলের শিক্ষিকা। যে গ্রামে বৃষ্টি হয়না, খুব কষ্টের মধ্যে দিয়ে বাচ্চাদের দিন কাটে সেইরকম একটি গ্রামের অনাথ বাচ্চাদের নাচ শেখায় গায়েত্রী। তার পাশাপাশি ওই বাচ্চাগুলোর অভিভাবকেরও একটা ভূমিকা পালন করে। সোহম একজন গবেষক। ওঁর চরিত্রের নাম রুদ্র। সে প্রত্যন্ত গ্রামগুলো ঘুরে সেখানের মানুষদের দুঃখ কষ্ট দূর করার চেষ্টা করে। বিশেষ কোনও টেকনোলজির মাধ্যমে সেই কষ্ট দূরীকরণের চেষ্টা করে রুদ্র। ঠান্ডা প্রকৃতির মানুষ হলেও রেগে গেলে রুদ্র মূর্তি ধারণ করে। স্বভাবের সঙ্গে মিলিয়েই চরিত্রের নামকরণ করা হয়েছে। রুদ্র শিবের নাম আর গায়েত্রী মা দূর্গার অপর নাম। শিব-দুর্গার মর্ডান সিম্বলিক চরিত্র সোহম-শ্রাবন্তী।
সিনেমার নাম দুর্গানগরের নেপথ্য কারন...
দুর্গানগর নারীকেন্দ্রিক একটি ছবি। এই জায়গায় কী কী ঘটে সেই প্রেক্ষাপটেই ছবির গল্প এগবে। মার্চ মাস থেকে সিনেমার শুটিং শুরু হবে। গায়েত্রী মা দুর্গার মতোই সবদিক সামলায়। এমন একজন মানুষ যাঁর নিজের কাঁধে একটা নাচের স্কুলের দায়িত্ব। সেই সঙ্গে দুষ্টু লোকের হাত থেকে দুর্গানগরকে রক্ষা করার লড়াই। দেবী দুর্গা শেষ পর্যন্ত অসুরের (ভিলেন) হাত থেকে নিজের দুর্গানগরকে বাঁচাতে পারে কিনা সেটাই এই গল্পের রসদ। পুজোর সময় আমরা যেমন শিব-দুর্গা-অসুরকে দেখি এই সিনেমাটাও ত্রয়ীকে কেন্দ্র করে মর্ডান রূপের উপস্থাপন।
সোহম-শ্রাবন্তী দুজনেই টলিউডের হেভিওয়েট স্টার। এখনও পর্যন্ত কোনও ট্যানট্রাম সহ্য করতে হয়েছে?
এখনও পর্যন্ত আমাদের লুক সেট, স্ক্রিপ্ট পড়া, রিহার্সলের কাজগুলো হয়েছে। শুটিং সেটে তো এখনও যাইনি। তবে এই পর্যন্ত সবটাই ভাল। এতদিন এই কাজগুলো যখন একসঙ্গে করেছি, ফার্স্ট লুকের জন্য শুট হয়েছে আমি ভাগ্যবান যে এইরকম কিছু ঘটেনি। ওঁরা দীর্ঘদিন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন। স্কুলিংটা ভীষণ ভাল। সিনেমাকে ভালবেসে কাজ করেন। একটা ভাল ছবি দর্শককে উপহার দিতে যা যা প্রয়োজন সেগুলো করছেন। আমাদের সঙ্গে একজন নতুন আর্টিস্ট আছে সঙ্ঘপ্রিয়। অসুরের চরিত্রটা করছে। দুজনেই ওকেও খুব সাহায্য করছেন। চরিত্র নির্বাচনের পরদিন থেকেই নিজেদের তৈরি করছেন ওঁরা। আমার সঙ্গে আলোচনা করছেন।
সোহম-শ্রাবন্তীর জুটির সেই নস্টালজিয়া ফিরবে দুর্গানগরে?
অবশ্যই। থ্রিলার বা মিস্ট্রি ধর্মী ছবিতে সম্পর্কের একটা সমীকরণ তো থাকেই। এখানেও সোহম-শ্রাবন্তীর একটা সম্পর্কের গল্প আছে। তবে নয়ের দশকে যেভাবে উপস্থাপন করা হত তার থেকে একটু আলাদা। স্কুল-কলেজে পড়ার সময় আমরা এই জুটির রসায়ন যেমন উপভোগ করতাম সেইরকম একটা স্বাদ কিন্তু, দুর্গানগরেও দর্শক পাবে। আমি তো সেই জন্যই এই জুটিকে নিয়ে কাজের সিদ্ধান্তটা নিয়েছি। ওঁরা অনেকদিন একসঙ্গে কাজ করেনি। সোহম-শ্রাবন্তী পুরনো জুটির ফ্লেভারটা ফেরানোই আমার টার্গেট।
সিনেমার প্রস্তাবে প্রথমেই সোহম-শ্রাবন্তী রাজি হয়েছিলেন?
সৌভাগ্যবসত একবারেই রাজি হয়েছেন। শ্রাবন্তীদি তো ফোনে শুনেই প্রাথমিকভাবে সম্মতি জানিয়েছিলেন। আর সোহমের সঙ্গে একটা মিটিংয়ের পরই রাজি হয়ে যান। ওঁদের দুজনের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে চরিত্র জানার পরই নিজেদের লুকের পারফেকশন নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। একটা বিষয় খুব ভাল লেগেছিল ওঁরা কিন্তু, এটা ভাবেনি আগে অ্যাকাউন্টে টাকা পড়বে তারপর কাজ নিয়ে ভাবব। এর চেয়ে বড় পাওনা আর কী হতে পারে।
নতুন সিনেমার শুটিং শুরু করবে তার আগে ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে যে দোলাচল তা নিয়ে চিন্তিত?
আমাদের শুটিংটা আউটডোরেই হবে। আর টলিপাড়ার যে সমস্যাটা আবার তৈরি হয়েছে সেটা তো গতবছর পুজোর সময় থেকেই শুরু হয়েছিল। একটা ভয়ের জায়গা তো থাকেই। কখন আবার কী কারণে শুটিং বন্ধ হয়ে যায়! তবে আমরা যাঁরা ডিরেক্টর কমিটিতে আছি তাঁদের কিন্তু, কোনও অভিপ্রায় নেই যে কাজ বন্ধ হয়ে যাক। পরিচালক ছাড়া যেমন ছবি হয় না তেমনই টেকনিশিয়ান ছাড়া কিন্তু, একটা সিনেমা তৈরি অসম্ভব। আমার সিনেমার শুটিংয়ে নিজে ওঁদের খেয়াল রাখি। প্রত্যেকের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। শনি-রবি ছুটি এটা ভাল কিন্তু, কর্মবিরতিতে চলে যাওয়াটা কাম্য় নয়। শুটিং ছাড়া আমার দ্বিতীয় কোনও পেশা নেই। তাই পরিচালক হিসেবে আমি সবসময় কাজের মধ্যেই থাকতে চাই।
পুজো রিলিজের কম্পিটিশনের মাঝেই কেন ছবি মুক্তির ভাবনা?
আমি চাই পুজোতেই মুক্তি পাক যদিও জানি সেই সময় বড় প্রযোজনা সংস্থার ছবি হয়ত বেশি হল পাবে। পুজো রিলিজ নিয়ে প্রতিটি প্রযোজকের মধ্যেই একটা হেলদি কম্পিটিশন তৈরি হয়। আমি যেহেতু নতুন প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কাজ করছি তাই সাহস করে একটু রিস্ক তো নিতেই হবে। দুর্গা পুজোর থিমে যেহেতু ছবিটি তৈরি হবে তাই ওই সময় মুক্তি পাওয়াই শ্রেয়। হয়তো দেবদার সিনেমা ৫০টি হল পেল, আমি সেখানে ২০টা পেলাম। দেবদা যেভাবে খাদানের প্রচার করল তা সত্যিই অসাধারণ। বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে এই সাফল্যটা প্রয়োজন ছিল। আমি তো চাইব যদি ১০০টি হল থাকে তাহলে সবগুলোতেই বাংলা ছবি চলুক। হিন্দি-দক্ষিণী ছবি যেন হল কবজা করে বাংলা সিনেমাকে কোণঠাসা না করে দেয়।
বলরাম কান্ড মুক্তি পাবে, দুর্গানগরের শুটিং শুরু করবেন। একসঙ্গে সব কাজ সামলানোর অনুপ্রেরণা কে?
একটি ছবির পোস্ট প্রোডাকশনের কাজের সঙ্গে অন্য ছবির প্রাথমিক কাজগুলো করতে সমস্যা হয় না। আমি যেহেতু শুধুই পরিচালনার কাজ করি তাই আমার ক্ষেত্রে এটা সত্যিই কোনও সমস্যা নয়। আর এই মুহূর্তে ইন্ডাস্ট্রির যা পরিস্থিতি সেখানে কাজ না করে বসে থাকলে টেকা দায়। সেই জন্যই দুটো ছবির কাজ একসঙ্গে করাটা খুব দরকার বলে আমার মনে হয়। ইন্ডাস্ট্রিতে এমন অনেক পরিচালক আছেন যাঁরা এভাবে কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে একজন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। উনি একইসঙ্গে ছবি বানান আর প্রচারটাও করেন। উনি আমার অনুপ্রেরণা। প্রথম থেকেই আমি ওঁর পথ অনুসরণ করি। একটা ছবি শেষ করতে করতেই পরবর্তী ছবির কাজ শুরু করে দেন। আমিও সৃজিতদার মতোই সারা বছর সিনেমার সঙ্গেই থাকতে চাই।
দুর্গানগর আর বলরাম কান্ড দুটি সম্পূর্ণ ভিন্নস্বাদের ছবি। দর্শক টানতেই একই বছরে দু'রকমের এক্সপেরিমেন্টাল কাজের পরিকল্পনা?
এক বছরে যখন দুটি ছবি মুক্তির প্ল্যান করি তখন চেষ্টা করি ভিন্ন ধারার ছবি বানাতে। সব ছবিই পরীক্ষামূলক। অনেকসময় খুব ভাল সিনেমাও বক্স অফিসে ব্যবসা করে না। আবার অনেক সিনেমা দেখার পর দর্শক সমালোচনা করে তবুও দেখতে যায়। এই রকম ঘটনা বলিউড-টলিউড দুই জায়গাতেই হয়। বলরাম কান্ডের শুটিংটা হয়েছে নৈনিতালের একটা বাংলোতে। সিনেমার ট্রেলার দেখতেই বোঝা যাবে কোনও জায়গায় কমেডির স্বাদ আনতে যৌন সুরসুরি দেওয়া হয়নি। সিচুয়েশন কমেডি বানানো কিন্তু, বেশ কঠিন। আমার যদি শুধু দর্শক টানাই উদ্দেশ্য হত তাহলে দ্বৈত অর্থের কয়েকটি সংলাপ দিয়েই সেটা করে ফেলতাম। ডঃ বক্সী কিন্তু, আমার এক্সপেরিমেন্টাল ছবি ছিল। থ্রিলার যেহেতু আমি ভালবাসি তাই আমি ছবি নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে ভালবাসি। যাতে কেউ না বলে বাংলা ছবিতে নতুনত্ব নেই। শুধুই রিমেক।