/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/04/sarika-2025-09-04-12-54-19.jpg)
যা হয়েছিল এই অভিনেত্রীর সঙ্গে...
বলিউডের ‘ট্র্যাজেডি কুইন’ মীনা কুমারীর নাম আমরা সবাই জানি। কিন্তু তাঁর মতোই আরেক অভিনেত্রীর জীবনও ছিল এক রোলার কোস্টারের মতো- যেখানে শৈশব হারিয়ে গিয়েছে সংগ্রাম ও দায়িত্বের বোঝায়।
অভিনেত্রী সারিকা, মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই চলচ্চিত্রে পা রাখেন। ১৯৬৭ সালে সুনীল দত্তের হামরাজ ছবিতে তিনি এক ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই স্কুলে যাওয়ার বদলে তাঁকে হয়ে উঠতে হয়েছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য। সিমি গারেওয়ালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সারিকা বলেছিলেন- “আমি কখনও স্কুলে যাইনি। একবার বাবা-মা স্কুলে নিয়ে গিয়েছিলেন বটে, কিন্তু অভিনয় শুরু করার পর আর সম্ভব হয়নি। শৈশব হারানোর কষ্ট এখনও বয়ে বেড়াই।”
শিশুশিল্পী হিসেবে তাঁকে প্রায়ই বাবা-মা হারানোর মতো বেদনাদায়ক দৃশ্যে অভিনয় করতে হত। “ছোট্ট শিশুদের গ্লিসারিন মাখিয়ে কাঁদানো হতো, খারাপ কথা শুনিয়ে আবেগ বের করা হতো। শটে সফল হলে আমাদের চকলেট, বিস্কুট দিয়ে পুরস্কৃত করত,” স্মৃতিচারণ করেছিলেন তিনি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও, ২১ বছর বয়সে সারিকার জীবন আবারও ওলটপালট হয়ে যায়। মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে তিনি ঘরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন, হাতে ছিল মাত্র ৬০ টাকা আর একটি গাড়ি। বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে স্নান করা, রাতে গাড়িতে ঘুমানো- এভাবেই চলত তাঁর দিন।
মায়ের মৃত্যুর পর ২০১৭ সালে, মুম্বইয়ের জুহুর ফ্ল্যাট নিয়ে তিনি আইনি লড়াইতেও জড়িয়ে পড়েন। ফ্ল্যাটটির মালিকানা নিয়ে এক চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ আইনি টানাপোড়েন চলে। এই অস্থির সময়েই সারিকার জীবনে আসেন কমল হাসান। ১৯৮৪ সালে রাজ তিলক ছবির শ্যুটিং সেটে দু’জনের দেখা হয়। বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক, আর তারপর শুরু হয় বিতর্কিত প্রেমের কাহিনি। কমল হাসান তখনও বিয়ে করা মানুষ- স্ত্রী ছিলেন বাণী গণপতি।
সারিকা স্মৃতিচারণ করেছিলেন- “আমরা জানতাম পরিস্থিতি আমাদের বিরুদ্ধে। আকর্ষণ থাকলেও তা দমিয়ে রাখতে চাইতাম।” অন্যদিকে কমল হাসান বলেছিলেন, “এটা যেন এক ঝড় ছিল, যেটা থেকে পালাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বারবার টেনে আনত। তাদের সম্পর্ক ঘিরে নিন্দা, তীব্র সমালোচনা, এমনকি একঘরে হওয়ার অভিজ্ঞতাও পোহাতে হয়। কিন্তু সব পাল্টে যায়, যখন সারিকা প্রথম কন্যা শ্রুতি হাসান-এর জন্মের খবর দেন। সারিকার কথায়- “আমি শুধু ওকে জানিয়েছিলাম যে আমি তার সন্তানের মা হতে চলেছি। বিয়ে বা একসঙ্গে থাকার শর্ত দিইনি। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সন্তানের জন্ম।”
Taslima Nasrin-Anirban: 'খুশি করে চলতে পারবেন না অনির্বাণ', '৩ ঘোষ' প্রসঙ্গে এবার অভিনেতার পাশে তসলিমা
কমল হাসানও তখন প্রকাশ্যে স্বীকার করেন, সন্তানের দায়িত্ব তিনি নেবেন। ১৯৮৬ সালে জন্ম হয় শ্রুতির। পরে, ১৯৯১ সালে দ্বিতীয় কন্যা অক্ষরা হাসান-এর জন্মের পর তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে, সারিকা স্পষ্টই বিশ্বাস করতেন- বিয়ে কোনো সম্পর্ককে ধরে রাখতে পারে না। তাঁর ভাষায়- “আজ আমরা বিবাহিত, কিন্তু কাল কী হবে কেউ জানে না।” অবশেষে ২০০৪ সালে এই দম্পতির বিচ্ছেদ ঘটে। সারিকা তখন দুই কন্যাকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান।
বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ নিয়ে শ্রুতি হাসান এক সাক্ষাৎকারে বলেন- “এটা কষ্টদায়ক বটে, কিন্তু অনেক পরিবারেই এখন এটা ঘটে। কখনও কখনও বাবা-মা একসঙ্গে থেকেও অখুশি থাকেন, সেটাই আরও বেদনাদায়ক। আমি খুশি যে তাঁরা আলাদা থেকেও সুখী।”
তিনি আরও যোগ করেন- “যখন মা-বাবা একসঙ্গে থাকতেন, তাঁরা আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর দম্পতি ছিলেন। সিনেমার সেটে আমরা ছিলাম একদম পারিবারিক টিম- মা পোশাক সামলাতেন, আমি কস্টিউমে, অক্ষরা সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করত। পরিবার মানেই ছিল সিনেমা। কিন্তু সম্পর্ক খারাপ হলে তাঁরা যথেষ্ট পরিণত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন আলাদা হওয়ার। এটা আমাদের জন্যও ভালো।”