ছবি: শান্তিলাল ও প্রজাপতি রহস্য
পরিচালক: প্রতীম ডি গুপ্ত
অভিনয়: পাওলি দাম, ঋত্বিক চক্রবর্তী, গৌতম ঘোষ, অম্বরিশ
রেটিং: ৩/৫
নতুন গোয়েন্দা গল্প ফেঁদেছেন, তাও অবলম্বনে নয় এক্কেবারে নিজ মস্তিষ্কপ্রসূত। ছবির কিছু ঝলক আগেই বাতলে দিয়েছিল ঋত্বিকের শান্তি অভিযানে ধোঁয়াশা রয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কতটা সফল হল পরিচালক প্রতীম ডি গুপ্তর প্রজাপতি খোঁজার অভিযান! 'শান্তিলাল ও প্রজাপতি রহস্য'-র ধাঁধার সমাধানের মাঝপথে তালভঙ্গ হতে পারে গল্পের বাঁধন আগলা হওয়ার কারণে।
একজন ছাপোষা মধ্যবিত্ত সাংবাদিক। বাড়ি থেকে মায়ের রাঁধা ডাল-ভাত নাকে মুখে গুঁজে অফিসে যায়। 'দ্য সেন্টিনেল'-এর ওয়েদার রিপোর্টার প্রতিদিন এক কলমের ওয়েদার কপি লেখে পাতার ফাঁকা জায়গা ভরাতে। অফিস শেষে কলিগ দাদার সঙ্গে মদ্য পান এবং কাগজের কাজের প্রতি বিতৃষ্ণা উগরে দেওয়া। মায়ের বলে দেওয়া ডাল আনতে ভুলে গিয়ে, রাতের খাওয়ার শেষে নীল ছবি দেখে রাত্রিযাপন। এই তাঁর রোজনামচা। ইনি শান্তিলাল।
আরও পড়ুন, কেন্দ্রে অক্ষয় ‘মিঃ ইন্ডিয়া’ কুমার, বাকিরা উপগ্রহ, তবু মুখে হাসি আনবে এই ছবি
এদিকে জনপ্রিয় অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত জীবন ও পরে তাঁর রাজনীতিতে আসা নিয়ে উত্তাল কলকাতা। সাংবাদিক থেকে সমাজ কোনও কিছুই পার পাচ্ছেনা নন্দিতার কাছে। অনায়াসে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সত্যিটা বলে অস্বস্তি ফেলছেন পুরুষ সাংবাদিক থেকে সহকর্মী প্রত্যেককে। এই সময়েই অনেকটা অযাচিতভাবেই বড় ব্রেকিংয়ের লিড চলে আসে এই শান্তিলালের কাছে। অফিসে বললে পত্রপাঠ নাচক, অগত্যা নিজেই পাড়ি দেয় চেন্নাই। সেখানে হঠাৎ করেই উদয় হয় রকেট রঞ্জন, পরে তারই সাহায্যে রহস্যের জট খুলতে সিঙ্গাপুরে শান্তিলাল। ফিরে এসে ব্রেকিং স্টোরি বাইলাইনে প্রথম পাতায় ছাপার চেষ্টা করে।
সাংবাদিক থেকে শান্তি যখন গোয়েন্দা হয়ে উঠছে সেখানেই তাল কেটে যেতে পারে ছন্দের। কারণ ছবির প্রথম অংশের পরই দর্শক বুঝতে শুরু করবে শেষ কোথায়।ছবির চলন একধরনের। ছবিতে কোনও লেয়ার নেই।সাব প্লট তৈরির সামান্য জায়গা থাকলেও তা নজর এড়িয়েই যাবে। ছবির চরিত্রগুলোর বুননে ডিটেলসের অভাব রয়েছে। নন্দিতা কে কেন কি সেটা দর্শক জানতে পারবে। কিন্তু শান্তিলালের জার্নি আর একটু কঠিন করা যেত, বিশেষ করে রকেট রঞ্জন চরিত্রের হঠাৎ আবির্ভাব কেন, শুধু বাঙালি বলে এতটা সাহায্য করতে চাওয়া? আর ফ্র্নট পেজ কপির যোগ্য একটা বিতর্কিত স্টোরির সমাধানটাও কেমন সহজ বলে ঠেকল। একটি ক্যামিও চরিত্রে সৃজিত, যদিও সেও বড় অবিচ্ছিন্ন। আর প্রজাপতির গ্রাফিক্স তার মানও খারাপ। মনের আবেগ বোঝাতে ঋত্বিকের এক্সপ্রেশনই যথেষ্ট ছিল।
আরও পড়ুন, সেক্রেড গেমস টু: সপ্তাহান্তের ছুটির জন্য এক্কেবারে পারফেক্ট
এদিকে চিত্রনাট্যের বাঁধনও হালকা মনে হয়েছে।রহস্য আরও দানা বাঁধতে পারত। তবে প্রধান চরিত্রকে নিখুঁত তৈরি করেছেন পরিচালক এটা মানতেই হবে। একটি মলের মহিলা টয়লেটে ঢুকে লুকিয়ে থাকা সহজ নাকি? তবে নন্দিতা চরিত্রের ব্যক্তিত্ব, মনস্ত্বত্ত্ব সবটাই অনবদ্য ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক, যদিও এর ধন্যবাদ বেশি করে প্রাপ্য পাওলির। ঋত্বিক নিজ গুণে শান্তিলালের ভূমিকায় ভাল অভিনয়ে আবার বেরিয়ে গেলেন। অম্বরিশ ভাল, চমকে দেবেন সংঘশ্রী। অর্কর আবহ মানানসই।
তবে শান্তিলাল প্রজাপতির জট খোলার আগেই দর্শক রহস্যের সমাধান করে দিতে পারে। কিন্তু আনকোরা গোয়েন্দা ও প্রজাপতি রহস্যের সমাধানের থ্রিলটা নিতে দর্শক ছবিটা দেখতেই পারেন, গোয়েন্দা গল্পের উত্তেজনা এই ছবিতে বিদ্যমান।