ঋত্বিক ঘটকের চরিত্রে অভিনয় করতে তো প্রথমে ভয় পেয়েছিলেন। পরে কী ভাবে রাজি হলেন?
হ্যাঁ, আমি প্রথমে শুনেই না বলেছিলাম। ঋত্বিক ঘটকের মতো একটা চরিত্রে অভিনয় করা মুখের কথা? ওঁর মতো কোনও একটা চরিত্রকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলার বিষয় যদি হত তাও না হয় চেষ্টা করতাম। কিন্তু, ঋত্বিক ঘটকের মতো একটা কাল্ট ফিগার, তাঁর বায়োপিক সেটা কতটা চ্যালেঞ্জিং বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আমার চেহারার সঙ্গে ঋত্বিক বাবুর বিন্দুমাত্র মিল নেই। শুধু ওঁর মতো পোশাক পরলেই তো শিলাজিৎ ঋত্বিক ঘটক হয়ে উঠতে পারবে না। এইসব নানা কিছু ভেবেই প্রথমে ভয় পেয়ে না বলে দিয়েছিলাম। পরে যখন জানলাম প্রস্থেটিক মেকআপ হবে তখন ভয়টা একটু কাটল। ময়দানে নেমেই পরলাম।
মেক-আপ রুমে শিলাজিৎ থেকে ঋত্বিক ঘটক হওয়ার জার্নিটা কেমন ছিল?
প্রস্থেটিক মেক-আপের দ্বারা শেষ পর্যন্ত শিলাজিৎকে ঋত্বিক ঘটক বানানো যায়নি। প্রস্থেটিক মেক-আপের কোনও আইডিয়া ছিল না। পাঁচ-ছ'টা সিটিং নিলাম। তারপর নিজেকে দেখে তো, বাপরে! মারাত্মক। কোনওভাবেই ঋত্বিক বাবুর লুক আসছিল না। আমি তখনও বলেছিলাম আমাকে দেখে যদি কোনও অংশে মনে হয় শিলাজিৎ তাহলে আমার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। আমি ওঁর মতো বাচনভঙ্গি, হাঁটাচলার ধরন ওগুলো আমি আমার সাধ্যমতো আয়ত্তে নিয়ে আসার চেষ্টা করব। কিন্তু, আগে আমাকে অ-শিলাজিৎ কর। চুল চেঁছে কপাল বাড়ানোর পর নিজেকে দেখে স্বস্তি পেলাম। ঋত্বিক বাবুর চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়াটা তো ভাগ্যের ব্যাপার।
পর্দায় ঋত্বিক ঘটক হিসাবে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে কোন কোন বিষয় নিয়ে রিসার্চ করেছেন?
যেদিন এই চরিত্রের জন্য আমি নিশ্চিত হলাম ঋত্বিক বাবুর মতো কথা বলা, হাঁটাচলা নিজের মধ্যে আনার চেষ্টা করেছি। সেই জন্য আমি একজন অ্যাসিসটেন্ট রেখেছিলাম। যাতে আমার মধ্যে যদি কখনও শিলাজিতিয় ব্যাপারটা চলে আসে সঙ্গে সঙ্গে শুধরে দিতে পারে। তছা়ড়া ঋত্বিক ঘটকের সিনেমাগুলো দেখেছি। বিশেষ করে যেটায় উনি নিজে অভিনয় করেছিলেন মানে 'যুক্তি তক্কো গপ্পো', ওটা বেশি করে দেখেছি।
শুটিংয়ের সময় কোন দৃশ্যটা সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছিল বা একটা শট বারবার দেওয়ার প্রয়োজন হয়েছে?
প্রথমদিন থেকেই সেটে সকলের ইতিবাচক রেসপন্সই পেয়েছি। স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী সবটা করে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। তাই কোনও শটই আমার কাছে খুব কঠিন মনে হয়নি। তবে নিজেকে ঋত্বিক ঘটকের চরিত্রে ভাবতে বারবারই খুব অবাক লাগছিল। যেটা আমি নিজে নই, সেটার সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে পড়ে শুটিংটা করেছি। যেমন ধরুন একটা ওয়েব সিরিজে আমার চরিত্রটা ছিল দাদাকে সম্পত্তির জন্য খুন করছি। সেটা তো বাস্তবে আমি নই। কিন্তু, ওই আক্রোশটকে ফুটিয়ে তুলতে টেকনিক্যাল ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ঋত্বিকবাবুর চরিত্রটাকে ফুটিয়ে তুলতেও টেকনিক্যাল হেল্প লেগেছে। ওঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো তো আমার মধ্যে নেই। কিন্তু, যখন চরিত্রের মধ্যে ঢুকে গিয়েছি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছি। আর আমার ব্যক্তিগত কারনে কোনও শট বারবার দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। সূর্যাস্তের আগে বালুচরে একটা শট দেওয়া নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। সেটা আলোর জন্য।
ফিল্মি কেরিয়ারে ঋত্বিক ঘটকের চরিত্রে অভিনয় করাটা একটা মাইলস্টোন হিসেবে রয়ে যাবে?
অবশ্যই। সেটা বলার অপেক্ষাই রাখে না। ছবি হিট হোক না হোক, আমার জীবনের এটা পরম প্রাপ্তি। এত কঠিন, চ্যালেঞ্জিং চরিত্র আগে কখনও করিনি। এই ছবির ক্ষেত্রে ব্যবসা নিয়ে ভাবছিই না। এটা ঋত্বিক বাবুর জীবনী। যা চিরদিনের মতো এই ছবির মাধ্যমে একটা ডকুমেন্ট হয়ে থেকে যাবে।
পায়েল সরকারের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
ভীষণ ভাল, মিষ্টি একটা মেয়ে। সেটে তো পুরে দিদিগিরি করেছে আমার উপর। আসলে ছোটরা আমার সঙ্গে খুব মজা করে।
নতুন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে কোনও সমস্যা?
কোনও পরিচালকের সঙ্গে আমার কখনই কোনও সমস্যা হয় না। তা সে নতুন হোক বা পুরনো। আমাকে যদি চরিত্রটা বুঝিয়ে দিতে পারেন আর আমি একবার বুঝে যাই তারপর বিন্দাস কাজ চলতে থাকে। পরিচালককে আমি সবসময় প্রাধান্য দিই। সখানে আমি নিজের নাক কখনও গলাই না। আমার কাছে সিনেমার ক্ষেত্রে পরিচালকই শেষ কথা।