/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/11/lead-24.jpg)
ছবি সৌজন্য: বিনীতা
বিনীতা চট্টোপাধ্যায়কে বাংলার দর্শক মূলত 'মেমবউ' বলেই মনে রেখেছেন। ২০১৬-তে স্টার জলসা যখন 'মেমবউ' ধারাবাহিকটি লঞ্চ করে তখন অসম্ভব ট্রোল ও মিমের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল এই অভিনেত্রীকে। ২০১৭-র শেষদিকে, ধারাবাহিক শেষ হওয়ার পরে দীর্ঘ সময় বাংলা টেলিভিশন থেকে দূরে থেকেছেন বিনীতা। অ্যাঙ্করিং, স্টেজ শো, গান ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন। সম্প্রতি আকাশ ৮-এর একটি ক্রাইম স্টোরি-তে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু 'মেমবউ'-এর সেই ট্রোল-মিম নিয়ে তাঁর মধ্যে এখনও কোনও অভিমান আছে কি? এই ইমেজ থেকে বেরিয়ে কী কী আগামী পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর-- ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে উঠে এল সব কথা--
এখনও পর্যন্ত তোমাকে অনেকেই মেমবউ বলেই মনে রেখেছেন। অথচ ওই সময় প্রচুর ট্রোল ও মিম হয়েছে। তোমার সেটা কতটা খারাপ লেগেছিল বা এখনও কি খারাপ লাগে?
'মেমবউ' শেষ হয় ২০১৭-র শেষের দিকে। তার পরে ২০১৮ থেকে আমি একটা লন্ডন-বেসড নিউজ চ্যানেল জয়েন করি। আমার কাজটা মূলত ছিল মুম্বইতে কিন্তু লন্ডনেও গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, প্রবাসী বাঙালিরা মেমবউ-কে কী অসম্ভব ভালোবেসে ফেলেছিল। অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল যাঁরা কিন্তু কাজটাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করেছেন। আর শুধু বাংলার দর্শক নন, বাংলাদেশের দর্শকের থেকেও অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। কলকাতার বাইরে, মুম্বইতেও কাজ করতে গিয়ে, অনেক প্রবাসী বাঙালিরা এসে বলেছেন যে তাঁদের মায়েরা, তাঁদের পরিবারের অনেকই 'মেমবউ' খুব পছন্দ করতেন।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/11/WhatsApp-Image-2019-11-08-at-20.19.50.jpeg)
আমার মনে হয় এই ট্রোলের যে কনসেপ্টটা ছিল, সেটা আমাকে অনেকটা হেল্প করেছে। মানুষের তো প্রশ্ন ছিল প্রাথমিকভাবে যে কেন উইগ, কেন সাদা মুখ... কিন্তু এটা করতে গিয়ে যত মানুষ দেখেছেন সিরিয়ালটা, যদি ট্রোলিং না হতো তাহলে অত দর্শক পেতাম কি না জানি না। আমার ক্ষেত্রে তো ব্লেসিং ইন ডিসগাইজ হয়েছে। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতেও কতজন আমাকে বলেছেন, তুমি সিরিয়াল করেছিলে না। আসলে কলকাতার বাইরের মানুষ যাঁরা বাংলাকে এবং বাঙালিয়ানাকে খুব মিস করেন, তাঁরাই দর্শক ছিলেন আমার সিরিয়ালের। ক্যারল যেহেতু ওই সিরিয়ালে বাঙালি সংস্কৃতিকে তুলে ধরতো, তাই মানুষের খুব পছন্দ হয়েছে। আর একজন বিদেশিনীর যে অ্যাকিউরেট অ্যাকসেন্ট হওয়া উচিত, সেটা পারফেক্টলি পেয়েছিলেন বলেই আরও পছন্দ করেছিলেন প্রবাসীরা।
আরও পড়ুন: বিয়ের পিঁড়িতে প্রিয়ম-শুভজিৎ, আগামী মাসেই শুভদিন
তোমার সেই ট্রোলদের কারও সঙ্গে কি কথা হয়েছে কখনও?
হ্যাঁ তো, আমিও সেই ট্রোলদের কয়েকজনকে খুঁজে বার করেছি। তারা তো পরে বলেছিল, দিদি কিছু মনে কোরো না। আমরা প্রথমে তো বুঝতে পারিনি। কিন্তু তুমি ট্রোলটাকে এত পজিটিভলি নিয়েছ, কখনও কিছু বলোনি। আমি বললাম, আরে তোমরা তো আমার টিআরপি বাড়িয়েছ, তোমরা তো আমাকে হেল্প করেছ! আসলে সকলের একটাই বক্তব্য ছিল যে একটি বিদেশিনী চরিত্রে কেন একজন বিদেশনীকে কাস্টিং করা হল না, তার বদলে একজন ইন্ডিয়ানকে ওরকম সাজানো হল কেন। কিন্তু যাঁরা সিরিয়ালটা দেখেছেন, তাঁরা জানেন যে ক্যারল কিন্তু হাফ বিদেশিনী কারণ ওর বাবা বাঙালি। সেটা তো তখন রিভিল করা যায়নি। তাই দর্শকের মধ্যে এই কাস্টিং নিয়ে অনেক 'কেন' ছিল। সেই কেন-টাই অনেক বিতর্ক তৈরি করেছিল। আর যে কোনও বিতর্কই ভালো।
মেমবউ তোমাকে প্রচুর জনপ্রিয় করে তুলেছে কিন্তু এই জনপ্রিয়তার কোনও নেগেটিভ দিক আছে কি?
হ্যাঁ, সেটা আছে। 'মেমবউ' করার পরে যখন ফিল্মমেকারদের সঙ্গে দেখা করতে গেছি, বা এখনও যখন দেখা করতে যাই, আমার মনে হয় বেশিরভাগই আমাকে খুব স্টিরিওটাইপ করে ফেলেছেন। তখন সকলের ধারণা হয়েছিল যে আমাকে টিপিকাল ওয়েস্টার্নাইজড কোনও চরিত্র ছাড়া মানাবে না। একজন সাধারণ এই সময়ের মেয়ে বা একেবারেই পুরোপুরি বাঙালি মেয়ের চরিত্র মানাবে না। এরকম একটা ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। টেলিভিশনে বিশেষ করে যদি প্রথম প্রজেক্ট খুব সাকসেসফুল হয়, তবে কোথাও না কোথাও সেই প্রজেক্টটার ছাপ রয়ে য়ায়। সেটা একটা নেগেটিভ দিক তো বটেই। কিন্তু আমি এখন এমন এমন চরিত্র চয়েস করছি যাতে ভার্সেটাইলিটি আসে, মানুষের ভুলটা ভাঙে।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/11/WhatsApp-Image-2019-11-05-at-16.02.39.jpeg)
সম্প্রতি তুমি আবার অভিনয় শুরু করলে, মাঝখানে তো নিউজ চ্যানেল, স্টেজ শো, গান নিয়ে ব্যস্ত ছিলে। তুমি কি মিস করেছ অভিনয় নাকি অভিনয় না করাটা একটা কনশাস চয়েস ছিল?
আসলে আমার তো অভিনয় করব বলেই ইন্ডাস্ট্রিতে আসা নয়, এটা লাক বাই চান্স হয়েছে। আমি জার্নালিজম নিয়ে পড়াশোনা করেছি, সিএনএন-এ কাজ করেছি। আরও অনেক নিউজ চ্যানেলে কাজ করেছি। আমার বরাবরই প্যাশন ছিল ট্রাভেল অথবা এনভায়রনমেন্টাল জার্নালিজম। অভিনয়ে আসার এই সুযোগটা অবশ্যই একটা অন্য ডায়মেনশন তৈরি করেছে আমার জীবনে। কিন্তু কলেজে যখন আমি ফিল্ম স্টাডিজ পড়েছি, গোদার, ত্রুফো, কুরোসাওয়ার ছবি দেখেছি, তখন থেকেই মনে হতো যে এই মাধ্যমে যদি যেতে পারি তবে একটা বিরাট বড় ক্রিয়েটিভ ফিল্ড আনফোল্ড হবে আমার কাছে। আসলে আমি একঘেয়ে কাজে টিকতে পারি না। অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিলে অনেক ধরনের চরিত্র করা যায় তাই কাজটা কখনও একঘেয়ে লাগে না। আমি আগেও অনেক ইন্টারভিউতে বলেছি, আই লাভ টু প্লে মেনি রোলস ইন ওয়ান লাইফটাইম। 'মেমবউ'-এর পরে আমার সঙ্গে বাংলার অনেক ডিরেক্টরের দেখা হয়। তাঁরা সবাই বলেছিলেন যে তুমি একটা কাল্ট চরিত্র প্লে করেছ, নেক্সটটা খুব ভেবেচিন্তে কোরো। সত্যি বলতে কী, এর মধ্যে আর সেরকম ভালো অফার আসেনি। এসেছে কিন্তু সেগুলো ঠিক মনের মতো হয়নি। তাই আমি ভাবলাম যে আমি তো নিউজ চ্যানেলের কাজটা করছি, পাশাপাশি আমার প্রোডাকশন হাউসটা শুরু করি। ২০১৮ থেকে শুরু করলাম। প্রথম মিউজিক ভিডিও ছিল গালিবয়-এর ফিমেল ভার্সন র্যাপ, 'আপনা টাইম আ গয়া', যেটা আমি গেয়েছি। থিমটা ছিল উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট নিয়ে, যার ভিউ হয়েছে ২.৮ মিলিয়নের উপর। আমাকে একজন বলেছিলেন যে তুমি অভিনয় করতে পারো, গান গাইতে পারো, অ্যাঙ্করিং করতে পারো, এখন যখন তোমার হাতে সময় আছে, যে যে ইচ্ছেগুলো আছে সেগুলো পূরণ করে নাও।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/11/WhatsApp-Image-2019-11-08-at-20.20.19.jpeg)
যখন শান নিজে থেকে আমার সঙ্গে মিউজিক ভিডিও করতে চাইলেন, আই ওয়াজ থ্রিলড। তার মধ্যেই টিভিসি করেছি, অভিনয়টা একেবারেই ছেড়ে দিয়েছিলাম তা নয় বরং একটা ফ্রিডম পেয়েছিলাম। ২০১৮-তে যে নিউজ চ্যানেলে আমি কাজ করতাম, তারই একটা অ্যাসাইনমেন্টে গিয়ে তিন মাস ছিলাম হিমাচল, রাজস্থান ও উত্তরাখণ্ডে। ওখানে থাকতে থাকতে নিউজের কাজও যেমন করতাম, পাশাপাশি নিজের ট্রাভেল শো শুরু করেছি। বিনি ডায়েরিজ, আমার শোয়ের নাম, যেটা আর কিছুদিনের মধ্যেই রিলিজ হবে। ওই শোয়ের ২৭টা এপিসোড এখন রেডি হয়ে গিয়েছে। তাই আমি আমার সব ইচ্ছে পূরণ করেছি এই ব্রেকের সময়টাতে। কিছুদিন আগে কলকাতা ফিরেছি, এখানে একটা মিউজিক ভিডিও শুট করেছি-- প্রপার পটোলা রিমিক্স। পুরনো গানটাই রিক্রিয়েট করলাম বলা যায়। এই সদ্য রিলিজ হয়েছে গানটা। আমার প্রোডাকশন হাউস থেকে দুটো শর্ট ফিল্মও আমি প্রোডিউস করছি। আর একটা কথা বলতে চাই। আমি মুম্বইতে থাকার সময়েই ভেগান অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে পিটা-র হয়ে অনেক কাজ করেছি। আরও একটা কাজের কথা বলি। ফ্রাঙ্কো ডুবিনি, আমেরিকান কনটেন্ট ডেভেলপার, তাঁর একটা প্রজেক্ট ছিল চাইল্ড সেক্স ট্রাফিকিংয়ের উপর, সংলাপ-কে নিয়ে। ওই কাজটাও করলাম। সিরিয়াল করলে এতগুলো কাজ করতে পারতাম না হয়তো। আমি এখন মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। শুধু সেলিব্রিটি হয়ে ফিতে কাটা বা হাত নাড়ানো নয়।
আরও পড়ুন: ক্যানসারে মনের জোর গুরুত্বপূর্ণ, কখনও ভাবিনি জীবন এখানে শেষ: ঐন্দ্রিলা
তুমি কি এখন তাহলে টেলিভিশনে নিয়মিত কাজ করবে?
আমি ডিজিটাল মিডিয়ায় কাজ করতে চাই আর চেষ্টা করছি বাংলা সিনেমাতে ভালো কাজ করার। তেমন কিছু কাজ করে তার পরে টিভিতে কামব্যাক করতে পারি। আসলে টেলিভিশনের প্রজেক্ট মানেই এক বছর-২ বছর ব্লক করে দেয়। একটা শর্ট ফিল্ম করলাম রাহুলের (রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে-- ক্লোন। চরিত্রটা খুব মডার্ন ও ম্যাটার অফ ফ্যাক্ট বলতে পারো। রাহুল আমার বয়ফ্রেন্ড। আমাদের জীবনে কীভাবে টুইস্ট আসছে, ঝড় আসছে, আমি কীভাবে ওকে সাপোর্ট করছি, সেটাই ছবির গল্প। ছবিটা ওটিটি-তেই আসবে, কয়েকটি পোর্টালের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে।
কিন্তু তুমি যে সম্প্রতি মুম্বইতে ফ্ল্যাট কিনলে, বাংলায় তার মানে খুব বেশিদিন থাকবে না, তাই তো?
না না, একেবারেই তেমন নয়। কলকাতায় আমার বাড়ি আছে, মুম্বইতেও একটা থাকার জায়গা হল। অনেক আর্টিস্টই তো আছে যারা দুটো শহরেই কাজ করছে। বাংলা আমার মনের খুব কাছাকাছি, বাংলা আমাকে যা দিয়েছে, মুম্বই এতটাও দিতে পারেনি। যখন গ্রামে গেছি শো করতে, মানুষের মধ্যে কী যে উন্মাদনা দেখেছি। ১ লাখ লোক এসেছে আমার শো দেখবে বলে। মুম্বইতে প্রচুর কাজ করেছি, যেমন সবাই করে। বাংলায় আমি গ্রামের মানুষের যে ভালোবাসাটা পেয়েছি, সেটা পাইনি আর অন্য কোথাও। তাই আমি বাংলায় এমন কিছু করে যেতে চাই, যাতে বাঙালিরা গর্ব বোধ করে।