ক্যামেরার নেপথ্যে কিশোর কুমার (Kishore Kumar)। পরিচালকের আসনে বসে স্বয়ং শট দেখছেন। রিলের ওপারে বাধ্য ছাত্রের মতো এক কমেডি দৃশ্যের শট দিচ্ছেন বাপ্পি লাহিড়ী (Bappi Lahiri)। সাধ করে কিশোরকে 'মামা' বলে ডাকতেন বাপ্পি। তখনও 'ডিস্কো কিং' হয়ে ওঠা হয়নি তাঁর। মুম্বই ইন্ডাস্ট্রিতে সদ্য পা রেখেছেন বঙ্গসন্তান অলোকেশ লাহিড়ী ওরফে বাপ্পি। বয়স তখন উনিশ-কুড়ি। কিশোর মামার সঙ্গে বেজায় ভাব জমে উঠেছিল বাঙালিয়ানা আড্ডা, গান-গল্প, খাওয়া-দাওয়া নিয়ে। সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে হিন্দি সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে সেভাবে পাড়ি জমানোর আগেই মামার তরফে ভাগ্নের কাছে প্রস্তাব গেল অভিনয়ের জন্য। তারপর? কিশোর কুমারের জন্মদিনে (Kishore Kumar Birthday) জানুন সেই অজানা গল্প।
Advertisment
১৯৭৪ সাল। লতা মঙ্গেশকরকে দিয়ে বাংলা ছবি 'দাদু'র একটি গান গাইয়ে ফেললেন বাপ্পি লাহিড়ী। সেই সময়ে কলকাতা-মুম্বই করছেন তিনি। কারণ, তার আগের বছরই পরিচালক সোমু মুখোপাধ্যায় অর্থাৎ কাজলের বাবার পরিচালনায় 'নানহা শিকারি'র মিউজিক কম্পোজ করেছিলেন বাপ্পি। অভিনয়ে দেব মুখোপাধ্যায় ও সোমু-পত্নি অভিনেত্রী তনুজা। একদিকে যখন সিনেমার গান কম্পোজ করছেন, অন্যদিকে তখন কিশোর কুমার পরিচালিত সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ এল। মামার হাত ধরে অভিনয়ে হাতেখড়ি করে ফেললেন 'অলোকেশ' বাপ্পি।
১৯৫৮ সালে প্রেক্ষাগৃহে রমরমিয়ে চলেছে 'চলতি কা নাম গাড়ি'। অভিনয়ে কিশোর কুমার, মধুবালা, অশোক কুমার। পর্দায় কিশোর-মধু জুটি, পাশাপাশি এক্স-ফ্যাক্টর অশোক কুমারের উপস্থিতি… দর্শক হলে টানার জন্য নামগুলোই যথেষ্ট। সেই সুপারহিট ছবির নামের অনুকরণেই দু-দশক পর কিশোর কুমার একটি সিনেমার পরিচালনা করেন। নাম 'বাড়তি কা নাম দাড়ি'। আর সেই ছবিতেই এক বিশেষ চরিত্রে জন্য ডাক পড়ে তরুণ বাপ্পির। মামার ডাকে সাড়া না দিয়ে পারেননি ভাগ্নে। 'বাড়তি কা নাম দাড়ি'তে (Badhti Ka Naam Dadhi) ভোঁপুর ভূমিকায় দেখা গেল তরুণ বাপ্পিকে।
কমেডি ছবি। গল্পের প্রেক্ষাপট- এক বিত্তশালীর আজব শখ লম্বা দাঁড়িওয়ালা লোকের হাতেই নিজের সমস্ত সম্পত্তি তুলে দিয়ে যাবেন। সেই ছবিতে বাপ্পির পাশাপাশি ছেলে অমিত কুমারকে দিয়েও অভিনয় করিয়েছিলেন কিশোর। পরিচালনার পাশাপাশি নিজেও অভিনয় করেন 'বাড়তি কা নাম দাড়ি'তে। এই হিন্দি কমেডি দিয়েই অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন বাপ্পি লাহিড়ী।
কিশোর কুমারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক এতটাই নিবিড়, ঘনিষ্ঠ ছিল যে, কিশোরের মৃত্যুর পর সঙ্গীত দুনিয়া থেকেই বিদায় নেবেন বলে মনস্থ করে ফেলেছিলেন বাপ্পি। মামা যেমন ভাগ্নেকে দিয়ে অভিনয় করিয়েছিলেন নিজের ছবিতে, তেমনই বাপ্পির করা সুরে একাধিক গান গেয়েছেন কিশোরও। তাই তাঁর মৃত্যুশোক মেনে নিতে না পেরে ভেবেছিলেন, গানের সুর করাই বন্ধ করে দেবেন। পরে অবশ্য মুম্বইয়ের একাধিক সিনে-প্রযোজকদের বোঝানোয় সেই সিদ্ধান্তে বদল আনেন।
মহম্মদ রফি, কিশোর কুমারের সঙ্গে বাপ্পি লাহিড়ী
সাতের দশকে আরেক অসাধ্যসাধন করে ফেলেছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। বম্বের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে তখন কিশোর-রফির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। প্রযোজকদের কাছেও দর কষাকষি! ১৯৭৫ সালে 'জখমি' সিনেমায় সুর করার সময়ে সেই জখম ভরে দেন 'ডিস্কো কিং'। কিশোর কুমার ও মহম্মদ রফিকে দিয়ে গান রেকর্ড করান একই ছবির জন্য। 'জখমি'তে বাপ্পির গাওয়া দোলের গান 'আই রে আই রে হোলি..' অবশ্য তুমুল হিট করে। তারপর থেকে 'গোল্ড ম্যান' বাপ্পির কেরিয়ারগ্রাফ উর্ধ্বমুখী।
আটের দশকে মঞ্চে একসঙ্গে বাপ্পি-কিশোর জুটি। দেখুন মামা-ভাগ্নের যুগলবন্দি
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন