পাঁচটি গেট, কিন্তু খোলা ছিল মাত্র দুটো। প্রচুর ভিড় সেই গেটও হার মানে। দরজা ভেঙে পিল পিল করে লোক ঢুকে পড়ে। নজরুল মঞ্চে এতদিন ধরে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। কত শো, কত কনসার্ট হয়েছে। কিন্তু কোনওদিন এত মানুষের দাপাদাপি দেখেননি নিরাপত্তা কর্মী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই কর্মী বলছেন, এত ভিড়, এসি কাজ না করা, এত আবদ্ধ পরিবেশই কাল হল। এমনটা হবে তিনিও ভাবতে পারেননি।
কেকে-র মৃত্যু অনেক প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে কলকাতাকে। এই শহরের সঙ্গীতপ্রেমী মানুষদের। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের নামে ফ্রি-তে গান শোনার হ্যাংলামিকে। যে নজরুল মঞ্চে প্রায় তিন হাজার কাছাকাছি আসন। সেখানে মঙ্গলবার কেকে-র লাইভ কনসার্টে হাজির হয়েছিল তিন গুণ বেশি দর্শক। ফুলবাগানের গুরুদাস মহাবিদ্যালয়ের ফেস্ট ঘিরে অনেক দিন আগে থেকেই উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। কলকাতায় কোনও বিখ্যাত শিল্পীকে নিয়ে এমন উন্মাদনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু মঙ্গলবার সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় অনুষ্ঠানের নামে দাপাদাপি।
আরও পড়ুন বড্ড দেরি হয়ে যায়, CPR দিলেই প্রাণে বাঁচতেন KK!
নিরাপত্তা কর্মী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানিয়েছেন, "যত মানুষ বসতে পারে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ সেদিন ঢুকে পড়ে। পাঁচিল টপকে, গেটের দরজা ভেঙে ঢোকেন অনেকে। সিটগুলির পিছনদিকে কাঠের পাটাতন বা তক্তার মতো রাখা হয়েছিল মানুষ দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। সেগুলিতেও এত মানুষ দাঁড়ায় যে ভেঙে যায় সেটি। তার পর এত মানুষের ভিড়ে এসি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। দরজা খোলা থাকার কারণে এসি কাজ করেনি।"
জানা গিয়েছে, অনুষ্ঠানের মধ্যেই কেকে বার বার ঘাম মুছছিলেন। এত ভিড়ে আবদ্ধ নজরুল মঞ্চে অস্বস্তি বোধ করেছিলেন তিনি। উদ্যোক্তাদের বার বার অভিযোগ করছিলেন তিনি। বলছিলেন, কেমন অডিটোরিয়াম যেখানে এসি কাজ করে না। স্পটলাইটও বন্ধ করতে বলেন তিনি। এর পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনুষ্ঠান শেষ হতেই বিধ্বস্ত অবস্থায় স্টেজ ও নজরুল মঞ্চ ছাড়েন কেকে। গাড়িতে করে ফেরেন হোটেলে।
আরও পড়ুন ‘কলকাতা KK-কে মেরে ফেলল’ CBI তদন্তের দাবি বলিউড অভিনেত্রীর
গাড়ি করে ফেরার পথেই শিল্পী বার বার বলছিলেন, ”আমার সাংঘাতিক ঠান্ডা লাগছে। গাড়ির এসি বন্ধ করো।” একথা জানিয়েছেন স্বয়ং তাঁর ম্যানেজার রীতেশ ভাট। অথচ প্রকাশ্যে আসা বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গিয়েছে শো চলাকালীন মারাত্মক ঘামছেন কেকে। বারবার তোয়ালেতে মুখ মুছছেন। ছায়াসঙ্গী ম্যানেজার বলেন, গাড়িতে উঠতেই মারাত্মক হাতে-পায়ে ক্র্যাম্প ধরে কেকে-র। তখনও বোঝা যায়নি আর কিছুক্ষণ পরই শেষ হয়ে যাবে সবকিছু। সবাইকে বিদায় জানাবেন শিল্পী। আর এত গৌরবের সাক্ষী নজরুল মঞ্চের ইতিহাসে কালির ছোপ পড়বে আজীবনের জন্য।