Sonagachi women acting in serials: রাজ্যের মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান লীনা গঙ্গোপাধ্যায় একটি অভিনব উদ্যোগ নিয়েছিলেন কলকাতার যৌনপল্লির মহিলাদের জন্য। চিত্রনাট্যকার-প্রযোজক এবং পরিচালক লীনা গঙ্গোপাধ্যায় সোনাগাছি এলাকার প্রায় ৩০ জন যৌনকর্মীকে অভিনয় প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়মিত অভিনয়ের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই সুযোগ পেলে এখনও সোনাগাছির অন্ধকার জগৎ থেকে বেরিয়ে আলোকোজ্জ্বল বিনোদন জগতে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন।
বছর কয়েক আগে সোনাগাছি এলাকায় একটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, যেখানে প্রশিক্ষক হিসেবে গিয়েছিলেন বাংলা ছোটপর্দা ও বড়পর্দার প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ও মাধবী মুখোপাধ্যায়ের মতো কিংবদন্তি অভিনেত্রীরাও অংশ নিয়েছিলেন এই সাধু উদ্যোগে। সেই ওয়ার্কশপের মাধ্যমেই সোনাগাছির প্রায় ২০ জন যৌনকর্মী পর্দায় অভিনয়ের বেসিকটুকু শেখেন। কিন্তু শুধু প্রশিক্ষণ দিয়েই থেমে থাকেননি লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি তাঁদের অভিনয়ের সুযোগও করে দেন তাঁর প্রযোজনায় নির্মিত ছোটপর্দার বিভিন্ন ধারাবাহিকে।
আরও পড়ুন: প্রসঙ্গ মিটু: আমি কাউকে কতটা অনুমতি দেব সেটা ভাবতে হবে
''ওই এলাকার ৫০ জন মেয়েকে নিয়ে আমি একটা ওয়ার্কশপ করেছিলাম। ড্রপআউট হয়ে যায় কিছু। ৩০ জনের মতো ফাইনালি ছিল। তাদের মধ্যে জনা কুড়ি আমাদের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করেছে। অনেকে গিয়েছিলেন ওই ওয়ার্কশপে। সাবিত্রীদি, মাধবীদি এঁরাও ছিলেন। বেশ ভালো হয়েছিল। এখনও কাজ থাকলে আমরা ওদের ডেকে কাজ দিই'', বলেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, ''ওদের তো অন্য প্রফেশনও আছে, তাই সব সময় হয়তো আমাদের কাজ করে উঠতে পারে না। তবে ওরা ভীষণ চায় এই কাজটা করতে। আমরা এটা জানাইনি কখনও... এমনি যেন আর্টিস্ট হিসেবে আসছে তারা। তাদের অনেক এসএমএস আছে আমার কাছে। তারা খুব হ্যাপি। একটা অন্য জগৎ, অন্য আলোও তো চায় ওরা।''
পরিচালক লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা ছোটপর্দার সবচেয়ে প্রশংসিত চিত্রনাট্যকারদের মধ্যে একজন এবং ম্যাজিক মোমেন্টস প্রযোজনা সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। এই সংস্থাটি এই মুহূর্তে বাংলা ছোটপর্দার প্রথম সারির সাতটি প্রযোজনা সংস্থার অন্যতম। 'ইষ্টিকুটুম' থেকে সাম্প্রতিক 'শ্রীময়ী'-- লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের ধারাবাহিকে বার বার উঠে আসে মহিলাদের বিভিন্ন ক্রাইসিসের প্রসঙ্গ। যৌনপল্লির মহিলাদের সম্পূর্ণ পুনর্বাসন দেওয়া তাঁর একার পক্ষে সম্ভব নয় কিন্তু তিনি তাঁর সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেই যতটা সম্ভব এই মহিলাদের একটা অন্য রকম জীবনের স্বাদ দিতে চেয়েছেন।
আরও পড়ুন: ‘সাঁঝবাতি’ চেনা গণ্ডির বাইরে সম্পর্কের সংজ্ঞা
''দেখো ওরা পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারবে না তার কারণ আমরা কত টাকাই বা দিতে পারব। ওদের তো একটা এস্টাবলিশমেন্ট হয়ে গিয়েছে। অনেকের বাচ্চা আছে, তাদের স্কুল আছে। এতটাই সমস্যা যে আলাদা করে কোনও প্রযোজকের পক্ষে ওদের পুরোপুরি পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। সেখানে সরকারী উদ্যোগ প্রয়োজন। যদি ওরা পুরোপুরি বেরিয়ে এসে থাকতে চায়, তার জন্য ওদের হোম আছে। কিন্তু একটা পরিবারকে তো আর হোমে রাখা যাবে না, তাই ওরা পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারে না'', বলেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, ''তবে এদের মধ্যে যদি কেউ আউটস্ট্যান্ডিং কিছু করে, সে হয়তো পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারবে। তেমন সম্ভাবনা যেমন রয়েছে, তেমনই আবার এটাও আছে যে অনেকেই এসকর্ট সার্ভিসে বেশি স্বচ্ছন্দ কারণ সেখানে ইজি মানি।''
একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে অনেক মহিলাই সহজ উপার্জনের লক্ষ্যে এই ধরনের পেশা বেছে নেন। শহরে ক্রমশ বাড়তে থাকা এসকর্ট সার্ভিস নেটওয়ার্কই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। কিন্তু সোনাগাছির যৌনকর্মীদের ৮০ শতাংশ পরিস্থিতির শিকার। এঁদের অনেকেই দুঃস্থ পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদন করতে এই পেশায় এসেছেন, অনেকে এসেছেন পাচারচক্রের হাত ধরে আবার এমন নজিরও বিরল নয় যে কারও পরিবারের সদস্যরা এসে তাঁদের জবরদস্তি রেখে গিয়েছেন। তাঁরা মানিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন এই জগতে। সেই সব নারীদের সামনে এই অন্ধকার থেকে চিরমুক্তির পথ হয়তো খোলা নেই কিন্তু এই জগতের বাইরে এসে নিজের যোগ্যতায় কোনও কাজ করার আনন্দ অপরিসীম। ওঁদের সেই আনন্দটুকুই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় এবং এখনও করে চলেছেন।