সৃজা দত্ত
২ জানুয়ারি অরুণা স্যার চলে গেলেন। কাল সারাদিন শেষবারের মতো ওনার সঙ্গেই ছিলাম। আমি, দেব দা, রুক্মিণী দি সহ আরও অনেকেই শ্মশানে গিয়েছিলাম। আমি অরুণ স্যারের মৃত্যুটা একদমই মেনে নিতে পারছি না। বিশ্বাসই হচ্ছে না অরুণ স্যার আর নেই। পরিস্থিতিটা সামলে উঠতে পারছি না। কাল সারাটা দিন আমার কী ভাবে কেটেছে সেটা একমাত্র আমিই জানি। আমি কাল সব কিছু থেকে দূরে ছিলাম। কোনও ফোনও ধরিনি। শুধু ভেবেছি যে মানুষটার হাত ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে এলাম, কাজ শিখলাম সে আজ আর নেই। দুদিন আগেও কথা হল, হাসপাতালে দেখে এসেছি। তারপরই সব শেষ!
ইন্ডাস্ট্রিতে দুজন আমার কাছের মানুষ। একজন দেব দা আর অপরজন অরুণ স্যার। আমার যখনই কোনও সমস্যা হয়, কোনও কিছু নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হয় এই দুজন মানুষকেই ফোন করি। জানি না, এবার থেকে কাকে করব। অরুণ স্যার তো বলেই গিয়েছেন, ওঁর দুই মেয়ে একজন ওঁর ছাত্রী আর একজন আমি। আমাকে ইন্দু বলেই ডাকতেন। অরুণ স্যারই আমাকে ওয়ার্কশপ করিয়ে হাত ধরে সবটা শিখিয়েছিলেন। ফ্রেম থেকে শুরু করে অভিনয়ের যবতীয় খুঁটিনাটি আমাকে অরুণ স্যার শিখিয়েছিলেন।
উনি আমার বাবার মতো। আমাকেও মেয়ে হিসেবে দেখতেন। সম্পর্কটা এতটাই ভাল ছিল...। আর কোনও দিন আমাদের কথা হবে না! কোনও সমস্যার কথা জানাতে পারব না! সব মিলিয়ে আমি অরুণ স্যারের মৃত্যুটা কিছুতেই মন থেকে মানতে পারছি না। ফোনে ওনার মেসেজগুলো দেখছি, আরও খারাপ লাগছে। যে মানুষটার সঙ্গে কাজ শুরু করলাম, এতদিন শ্যুটিং করলাম সে নেই ভাবতে পারছি না। মানতে সত্যিই খুব কষ্ট হচ্ছে।
অরুণ স্যারের প্রতিটা কথা আমি সারাজীবন মনে রাখব। আমাকে এত ভালবাসতেন...। ওঁর মতো একজন মানুষ আমাকে এত স্নেহ করেন এটা ভেবেই নিজেকে ধন্য বলে মনে হয়। আমি প্রথমে সকলের সঙ্গে কথা বলতে খুব ভয় পেতাম। শুধু ভাবতাম যদি কেউ কিছু মনে করে। তাই একদমই কথা বলতাম না। সবকিছু নিয়েই একটু বেশি ভেবে ফেলতাম। অরুণ স্যার সবসময় বলতেন, 'একদম এসব ভাববি না। লোকে কি বলল সেটা তোর ভাবার বিষয় নয়। তুই তোর কাজ করবি। যে যা ভাবার ভাববে'।
আমি এটা এখন মেনে চলি। অরুণ স্যার কোনও কিছুতে ভয় না। সবসময় আনন্দে থাকতে ভালবাসতেন। ক্যানসারের মতো রোগ নিয়েও একটানা কাজ করে গিয়েছেন। যদি কখনও বলতাম, স্যার আপনার শরীরটা খারাপ লাগছে? সঙ্গে সঙ্গে বলতেন, 'এই তুই চুপ কর তো। আমার কিছু হয়নি। দিব্য আছি। ডাক্তার চিকিৎসা করবে। আমার তো কিছু করার নেই'।
একদম অন্যরকম একজন মানুষ ছিলেন। এইরকম মানুষ সত্যিই খুব কম দেখা যায়। উনি তো আমাকে নিজের মেয়ের মতো দেখতেন। কত কিছু নিয়ে আলোচনা করতেন। কত স্ক্রিপ্ট পড়ে শুনিয়েছেন। শুধু আমি নয়, দেব দা, রুক্মিণী দি সকলকে শোনাতেন। ছবি করার খুব ইচ্ছে ছিল। সেই জন্যই বাঁচতে চেয়েছিলেন।