Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

প্রশ্ন করলে কি 'স্বার্থে ঘা' লাগে, জানতে চাইলেন সৃজিত?

চন্দ্র বসুর সাংবাদিক সম্মেলন, নেতাজী গুণমুদ্ধদের আইনি নোটিস সবকিছু পেরিয়ে কেন্দ্রীয় বডির ছাড়পত্র- এই প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে পরিচালকের একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এল নানা কথা

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
srijit

সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ফোটো- ফেসবুক

ইউ সার্টিফিকেট পেয়ে গিয়েছে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের 'গুমনামী', তাও আনকাট, এর পরেও বির্তক চলছে। বসু পরিবারের তরফে বারবার আপত্তি এসেছে এই ছবি নিয়ে। ছবির নাম ঘোষণার থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। নেতাজী বিশেষজ্ঞরা মনে করেছেন নেতাজীই যে গুমনামী সেই থিওরিই দৃঢ় করতে এহেন নামকরণ। সাংবাদিক সম্মেলন, নেতাজী গুণমুদ্ধদের আইনি নোটিস সবকিছু পেরিয়ে কেন্দ্রীয় বডির ছাড়পত্র- এই প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে পরিচালকের একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এল নানা কথা।

Advertisment

পরিচালক মনে করছেন চারিদিকে অকারণ ব্যক্তিগত আক্রমণের ঢল নেমেছে। অনেকেই প্রায় দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে আক্রমণ করে চলেছেন যে আক্রমণের পিছনে যুক্তি কম। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক বলেন, ''চন্দ্রবাবুর কিছু টুইট দেখছিলাম, সুগত বাবু যুক্তি ছেড়ে কুরোসওয়ায় ঢুকে গেছেন। এগুলো এখন হবে, আসলে যুক্তি জিতে যাচ্ছে। তাঁরা প্রমাণ করার চেষ্টা করে চলেছেন, গুমনামী আসলে গুমনামী বাবা-র থিওরিটা দেখাচ্ছে।''

তাহলে কি ছবির নাম নিয়ে কোনও সমস্যা?

সৃজিতের বক্তব্য, না! গুমনামী থিওরিটা নিয়েই উঠছে সমস্যা। ''আমার ছবি প্রশ্ন করে, চর্চা করে'', বলেন পরিচালক, ''যদি বিমান দুর্ঘটনার থিওরি দেখাই এবং রাশিয়ার থিওরিটা দেখাই তাহলে গুমনামীর থিওরিটাও দেখাবো।'' এই প্রসঙ্গে কিছু মানুষের স্বার্থে ঘা লাগছে, এবং তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন বলে মৃদু অভিযোগও রয়েছে তাঁর।

আরও পড়ুন, প্রসেনজিৎ থেকে গুমনামী হওয়ার নেপথ্য কাহিনি

''তবে চন্দ্রকুমার বসু-সহ বসু পরিবারের বেশিরভাগই বিমান দুর্ঘটনার তত্ত্বের বিপক্ষে, আজ থেকে নয় ঐতিহাসিকভাবে বিপক্ষে। তার মানে নিশ্চিতভাবে কেউ কিছু জানে না। কেন্দ্রীয় সরকার টুইট করে টুইট ফেরত নিয়ে নিচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮ অগাস্ট বলছেন, আমরা জানতে চাই, অধিকার আছে। স্বাধীন দেশে কেউ কোনও বিশ্বাস প্রকাশ করলে তা যদি রোধ করার চেষ্টা করেন তাহলে আপনি ফ্যাসিস্ট। যেটা চন্দ্রকুমার বসু করার চেষ্টা করছেন'', বেশ খানিকটা উষ্মা ধরা পড়ল পরিচালকের গলায়।

gumnami prosenjit প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

এই বিতর্কের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের বডি সিবিএফসি ছবিটিকে 'আনকাট ইউ' দিয়েছে শুধু নয়, ছবির অ্যাপ্রোচ যে নিরপেক্ষ এবং নন-জাজমেন্টাল, তাও বলেছে এই সেন্ট্রাল বডি। অথচ এর পরেও পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ চলছে বলে অভিযোগ তাঁর এবং গোটা ঘটনায় একটু আহতই হয়েছেন তিনি। সেই খারাপ লাগাটা ধরা পড়ল তাঁর বক্তব্যে, ''ছবিটি কোনও কিছু প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে না। এরপরেও উনি ব্যক্তিগত আক্রমন করছেন, টুইট করছেন- (একটু থেমে) কষ্ট হচ্ছে, খারাপ লাগছে ওনার জন্য। যুক্তি শেষ হয়ে গেলে বোধহয় মানুষ ক্রোধে অন্ধ হয়ে যান। ওনাকে আমি প্রিমিয়ারে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এসে যদি খোলা মনে ছবিটা দেখেন বুঝতে পারবেন কোনও বিশেষ তত্ত্বকে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়নি।''

আরও পড়ুন, ‘গুমনামী’-র জন্য আইনি নোটিস পেলেন সৃজিত

বিতর্ক ঘনীভূত হয়েছে নেতাজীর মেয়ে অনিতা পাফের মন্তব্যেও। একটা সময়ে অনিতাকে নেতাজী-র মেয়ে হিসেবে মেনে নিতে অনেক সময় নিয়েছিলেন ভারতীয়রা। অনিতাকে বসু পরিবার স্বীকৃতি দেওয়ার আগে পর্যন্ত এদেশের মানুষের কাছে নেতাজী ছিলেন ব্রহ্মচর্যের প্রতীক, যাঁর কোনও ব্যক্তিগত জীবন থাকতে পারে না। একদিন অনিতা পাফ এবং তাঁর মায়ের সঙ্গে নেতাজির সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এদেশের মানুষ। আজ অনিতা গুমনামীর তত্ত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললেও পরিচালকের দৃষ্টিভঙ্গি ও ক্রিয়েটিভ লিবার্টি নিয়ে কিন্তু কোনও অভিযোগ করেননি।

srijit জয়ন্তী রক্ষিত এবং আর্য কুমার বসুর সঙ্গে সৃজিত। ফোটো- ইনস্টাগ্রাম

সৃজিত মুখোপাধ্যায় জানালেন, ''নেতাজীর মেয়ে অনিতা পাফ বলেছেন, গুমনামীর তত্ত্বে আমি বিশ্বাস করি না, আমার বাবা গুমনামী হতে পারে না। কিন্তু কেউ যদি বিশ্বাস করেন সেই ভিত্তিতে ছবি তৈরির সম্পূর্ণ অধিকার তাঁর রয়েছে। আমি বুঝতাম ছবির কোনও পোস্টার এবং ট্রেলার বেরোয়নি তাহলে বিতর্ক মেনে নিতাম, আর চিত্রনাট্য দু'পাতা লেখার পর বুঝেছি শুধু কোনানড্রাম বইটার ভিত্তিতে ছবিটা তৈরি করা যাবেনা। একটা নিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করতে হবে।''

আরও পড়ুন, প্রজাপতির সন্ধানে আনকোরা গোয়েন্দা, তবে রহস্য জমল কি?

কিন্তু ছবিটা তৈরির আগে পরিচালক ভালো করেই জানতেন যে গুমনামী নিয়ে বিতর্ক হবে। তবে কি জেনেশুনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি? পরিচালক জানালেন, এই পরিমাণ বিতর্ক এবং স্ববিরোধী মন্তব্য যে আসবে তা তিনি আগে থেকেই জানতেন। ''আমি তো একেবারে এইটাই চেয়েছিলাম। এবার যদি আপনি জিজ্ঞেস করেন তাহলে বলবো, নেতাজীর তত্ত্ব নিয়ে রায় দেওয়ার কোন দায় আমার নেই। আমার নিজেরও গুমনামী, বিমান দুর্ঘটনা এবং রাশিয়ান থিওরি নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন রয়েছে। ছবিতে সেই প্রশ্নগুলো রেখেওছি। ছবিটা তৈরির মূল উদ্দেশ্য হল আবার আলোচনা হোক, মানুষ প্রশ্ন করুক'', বলেন পরিচালক।

publive-image নেতাজীর লুকে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

এই ছবি এবং ছবি সংক্রান্ত বিতর্ক নিয়ে তাঁর স্ট্যান্ডপয়েন্টটি বেশ পরিষ্কার-- নেতাজী কোনও পরিবারের সম্পত্তি নয়, উনি সমগ্র দেশবাসীর দেশনায়ক। নেতাজীর মৃত্যু নিয়ে যে ধোঁয়াশাটা ৭৪ বছরেও থেকে গিয়েছে নানান রাজনৈতিক সমীকরণের জন্য সেটা দেশনায়কের পক্ষে সবথেকে বড় অপমান বলেই মনে করেন তিনি। পাশাপাশি আরও একটি প্রশ্ন তুলেছেন বাংলার ফ্রন্টলাইন পরিচালক- ''একতা কাপুর যখন ওয়েব সিরিজ করলেন তখন এনারা কোথায় ছিলেন? সমস্যা কি তাহলে বাংলা নিয়ে? এটা তো তাহলে হিপোক্রেসি। যখন বাংলা ধারাবাহিকে একের পর এক ফ্যাক্ট বিকৃত করা হচ্ছে তখনও কেউ কিছু বলছেন না!''

আরও পড়ুন, বাংলার ওয়েব সিরিজে দর্শকের আস্থা ফেরাবে ‘কৃশানু কৃশানু’

এই গোটা ঘটনায় একদল কিন্তু বরাবর সৃজিতের পাশে থেকেছেন এবং তাঁরা হলেন নেটিজেনরা। এই সমর্থন যে পরিচালককে অনেকটা শক্তি জোগাচ্ছে, তা ধরা পড়ল তাঁর কথায়-- ''মানুষ তো সত্যিটা বুঝতে পারছেন। আর কতদিন ভুল বোঝানো হবে? তারাও তো জানতে চায়। বিপুল জনসমর্থন আমাদের সপক্ষে। তারা চায় ছবিটা হোক, বোগাস হলে সেটাও তারা বলবেন। সেটা জনসাধারণের দাবি হোক। কেন মুখার্জি কমিশনের রিপোর্টটা খারিজ করা হল? তিনটে থিওরির দুটো ফিকশন একটা ফ্যাক্ট। কিন্তু কোনটা কি সেটা আমরা জানিনা, সেটাই প্রশ্নের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাহলে প্রশ্নে এত ভয় কেন? আপনারা কি কিছু লুকোচ্ছেন? স্বার্থে ঘা লাগছে? কই অনিতাদেবী তো ভয় পাচ্ছেন না। একটি ইন্টারভিউতে ওনাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, আপনার বাবার মৃত্যু কীভাবে হয়েছে? ওনার বক্তব্য, ''ইট ইজ ভেরি ডিফিকাল্ট টু সে।'' আমারও তো তাই বক্তব্য। নেতাজী রহস্য নিয়ে চাই বিতর্ক হোক, চর্চা হোক, আলোচনা চলুক। প্রশ্ন করতে আমি ভয় পাইনা।''

netaji Srijit Mukherji
Advertisment