Aloukik Na Loukik Serial review: 'অলৌকিক না লৌকিক', স্টার জলসা-র উইকএন্ড সিরিজটি অনেক আশা জাগিয়েছিল প্রোমো লঞ্চ থেকেই। ৬টি এপিসোড সম্প্রচারের পরে বলাই যায় যে আশাপূরণে অনেকটাই সফল এই ধারাবাহিক। বাংলা টেলিভিশনে অনেক দিন পরে এমন একটি উইকএন্ড সিরিজ এল, যার জন্য সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করবেন দর্শক।
নয়ের দশকে অত্যন্ত সাড়া ফেলে দিয়েছিল বাংলার যুক্তিবাদী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা প্রবীর ঘোষের বই 'অলৌকিক নয় লৌকিক'। কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস কীভাবে সমাজের গভীরে বাসা বেঁধে রয়েছে, সেই নিয়েই কিছুটা আত্মজৈবনিক লেখা। প্রবীর ঘোষের বইতে উল্লিখিত বেশ কিছু সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি স্টার জলসা-র 'অলৌকিক না লৌকিক'। এই সিরিজে রয়েছে মোট ১৬টি গল্প যার মধ্যে তিনটি ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছেন দর্শক।
আরও পড়ুন: দুর্গা রূপে ফিরছেন ‘জগদম্বা’, আসছে নতুন ধারাবাহিক
তবে বইতে উল্লিখিত কয়েকটি ঘটনার সাযুজ্য ছাড়া ধারাবাহিকের চিত্রনাট্যটি অরিজিনালই বলা যায়। পর্দার সিরিজের উপযোগী করতে পাঁচটি কাল্পনিক চরিত্র তৈরি করা হয়েছে যারা আদতে অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে এক দীর্ঘমেয়াদী সংগ্রামে বদ্ধপরিকর। এই পাঁচটি চরিত্রকে দেখে দর্শকের মনে পড়ে যেতেই পারে ফেমাস ফাইভ অথবা বাঙালির পরিচিত পাণ্ডব গোয়েন্দাকে। ব্যক্তিগত জীবনের একটি ঘটনার অনুসন্ধান থেকেই শুরু হয় মানুষকে সচেতন করতে পাঁচ বন্ধুর একটি যাত্রা।
প্রাথমিকভাবে পরিচিত গণ্ডির মধ্যেই কিছু ঘটনার সমাধান। পরে সেই বৃত্তই বাড়তে থাকবে ক্রমশ। এখনও পর্যন্ত মোট তিনটি গল্প দেখেছেন দর্শক। প্রথম গল্পে আরও একবার সামনে এসেছে ভবিষ্যৎদর্শনের নাম করে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা ও শোষণ। দ্বিতীয় গল্পে এসেছে ক্ষমতালোভী ও দুর্নীতিপরায়ণ তান্ত্রিকের প্রসঙ্গ। তৃতীয় গল্পে ধরা পড়েছে ডাইনি অপবাদে নিরপরাধ মানুষের মর্মান্তিক পরিণতির বিষয়টি। আগামী এপিসোডগুলিতে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের আরও অন্যান্য দিক আসতে চলেছে।
আরও পড়ুন: ‘কীভাবে টাকা রোজগার করছে, তা নিয়ে কথা বলার আমি কেউ নই’, এসকর্ট প্রসঙ্গে মন্তব্য সায়ন্তনীর
অনেকদিন পরে এমন একটি উইকএন্ড সিরিজ বাংলা টেলিভিশনের পর্দায় এল যার মেকিং ভাল, চিত্রনাট্যে বাহুল্য কম এবং বেশ টান টান। একদম প্রথম গল্পটিতে বেশ কিছু গানের ব্যবহার কিঞ্চিৎ ক্লিশে মনে হলেও তা মোটামুটি উতরে যায় চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে। এই সিরিজের একটি বড় ইউএসপি হল কাস্টিং। প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দক্ষ অভিনেতাদের পেয়েছেন দর্শক। বিশেষ করে নেগেটিভ চরিত্রগুলিতে সেরা অভিনেতাদের বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রথম দুটি গল্পেই যেমন ছিলেন সব্যসাচী চক্রবর্তী ও শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। তৃতীয় গল্পটিতে ডাইনি অপবাদে ক্লিষ্ট চরিত্রটিতে দর্শক পেয়েছেন সুদীপ্তা চক্রবর্তীকে। সিরিজের পাঁচ যুক্তিবাদী অপেক্ষাকৃত নবীন অভিনেতা। দক্ষ অভিনেতাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাল অভিনয় করছেন সকলেই।
তবে অতি-নাটকীয়তা বর্জিত নয় এই সিরিজ একেবারেই। বিশেষ করে দ্বিতীয় গল্পের উপস্থাপনা বেশ অনেকটাই ভারতীয় টেলিভিশন-সুলভ অতি নাটকীয়। সেখানে আবার টার্গেট অডিয়েন্স ও কনটেন্ট স্ট্র্যাটেজির বিষয়টি এসে পড়ে। বাংলার টেলিদর্শকের সিংহভাগই সংলাপে, দৃশ্য ভাবনায় ওই নাটকীয়তাই দেখতে চান টেলিপর্দায়। এবং তাকে সঙ্গত করে উচ্চকিত ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর। সব ধারাবাহিককেই এই ধাঁচটি রাখতে হয়। কে কতটা ভালভাবে রাখছেন, সেটাই বিচার্য হয়। সেদিক থেকে এই ধারাবাহিকের নাটকীয় মুহূর্তগুলিতে দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বেশ ভাল।
আরও পড়ুন: ‘দর্শক আমাকে নেগেটিভ দেখতে পছন্দ করেন’: সুবান রায়
ধারাবাহিকের চিত্রনাট্য লিখেছেন চার জন। প্রত্যেকটি গল্পের লেখক আলাদা। জয় দাশগুপ্ত, শুভময় বিশ্বাস, সুদীপ দাস ও সাগ্নিক বন্দ্যোপাধ্যায় যথাক্রমে প্রথম চারটি গল্প লিখেছেন। প্রথম ৬টি এপিসোড পরিচালনা করেছেন সুমন দাস। সপ্তম এপিসোড থেকে পরিচালনার দায়িত্বে অমিত দাস। চিত্রগ্রহণ ও পরিচালনা দুটিই ভাল। বেশ কিছু ড্রোন শটস ব্যবহার করা হয়েছে সিরিজে যা আর পাঁচটা ধারাবাহিকের চেয়ে অনেকটাই আলাদা দৃশ্য-অভিজ্ঞতা দেয় দর্শককে।
'গানের ওপারে'-র পরে আবারও প্রযোজক হিসেবে এই ধারাবাহিকটি নিয়েই টেলিভিশনে ফিরলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। সিরিজটি শুরু হওয়ার আগে সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছিলেন যে টেলিভিশনে প্রযোজনা করতে তাঁর আপত্তি ছিল না কখনও কিন্তু তিনি যে কোনও সোশাল ড্রামা নিয়ে ফিরতে রাজি ছিলেন না। এমন কিছু কনটেন্ট নিয়ে ফিরতে চাইছিলেন যাকে দর্শক খুব সহজাতভাবেই স্বতন্ত্র বলবে। সেই কাজে তিনি সার্থক হয়েছেন নিঃসন্দেহে।