Tele Review Saanjher Baati: স্টার জলসা-র ধারাবাহিক 'সাঁঝের বাতি' দেখতে দেখতে কখনও মনে পড়বে সিন্ডারেলা, কখনও বা বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট-এর কথা। সেই যে নায়িকা শর্তহীন, কলুষহীন প্রেম নিয়ে বসে থাকে আজীবন আর ঈশ্বরকে ডেকে চলে, তেমন মেয়েই তো পছন্দ দর্শকের। সন্ধ্যায় চা খেতে খেতে বর্ষীয়ান কোনও দর্শক কল্পনায় হারিয়ে গিয়ে ভাববেন এমন একখানা মেয়ের সঙ্গেই ছেলের বিয়েটা দিতে হবে। আবার বাস-ট্রাম ঠেলে হটস্টারে এপিসোড দেখতে দেখতে সদ্য চাকরি পাওয়া দর্শক অজান্তেই চারুর সঙ্গে তুলনা করে ফেলবেন তাঁর প্রেমিকার।
সাঁঝের বাতি একেবারেই চেনা ছকের একটি সোশাল ড্রামা। এই ধরনের ধারাবাহিক এত দেখেছেন দর্শক যে অনেকেই পরবর্তী টুইস্ট অ্যান্ড টার্ন বলে দিতে পারেন নির্ভুলভাবে। বাংলা টেলিভিশনের সাম্প্রতিক ট্রেন্ড অনুযায়ী খুবই স্ট্র্যাটেজিক এই ধারাবাহিক। গ্রামের মেয়ের সঙ্গে শহরের বাবুর বিয়ে দিতে পারলে যে টিআরপি-র দৌড়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে থাকা যায়, সেটা তো আর অস্বীকার করার উপায় নেই।
আরও পড়ুন: রেটিং বাড়ছে ‘শ্রীময়ী’-র তবু ধরাছোঁয়ার বাইরে ‘কৃষ্ণকলি’, রইল সাপ্তাহিক সেরা দশ তালিকা
কিন্তু এখানে আনা হয়েছে আরও একটি ক্রাইসিস। গল্পের নায়ক অন্ধ। সেই প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও যখন নায়িকা তার প্রেমে পড়ে, তখন দর্শকের মন গলতে বাধ্য। তবে এখনও ধারাবাহিকের আসল ড্রামা শুরুই হয়নি। মল্লিক বাড়ির দুই ছেলের সঙ্গে গ্রামের একটি দুঃস্থ পরিবারের দুই মেয়ের বিয়ে হওয়ার পরেই শুরু হবে ঘটনার ঘনঘটা। আর ওই দুই মেয়ের সম্পর্কের মধ্যেই সিন্ডারেলার গল্পটি লুকিয়ে রয়েছে।
ছোট মেয়ে ক্লেপ্টোম্যানিয়াক অর্থাৎ স্বভাবচোর এবং লোভী। চুমকি নামের এই চরিত্রটিই ভবিষ্যতে অনেক জলঘোলা করবে তা বলাই বাহুল্য। অন্যদিকে রয়েছে নায়িকা চারু যে বড় বেশি শুদ্ধ। রাধামাধবে তার অচলা ভক্তি। পুজোআচ্চা, কল্যাণ-অকল্যাণ, পরিবারের সকলের যত্নআত্তি ইত্যাদি নিয়ে সারাদিন সে ব্যতিব্যস্ত। ঠিক তার মতো সরল-সাদাসিধে না হলেও নায়ক আর্য্যমান একজন ভাল মানুষ। চিত্রনাট্যকার নিতান্তই সাদা-কালোয় ভেঙেছেন চরিত্রগুলিকে। ঠিক যেমনটা হয়ে থাকে বেশিরভাগ সোশাল ড্রামায়।
কিন্তু চরিত্রগুলো একমাত্রিক হলেও চিত্রনাট্যের বাঁধন ভাল। দৃশ্যগুলি অকারণ দীর্ঘায়ত নয়। সংলাপও স্বাভাবিক। পার্শ্বচরিত্রে রয়েছেন অনুরাধা রায়, জুন মালিয়া, শাওন দে, কাঞ্চনা মৈত্রর মতো অভিজ্ঞ অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। তাই দর্শক কোনওভাবেই বোর হবেন না। তবে ইউএসপি অবশ্যই রিজওয়ান-দেবচন্দ্রিমা জুটি। ঠিক যেমনটা দর্শক দেখতে ভালোবাসেন। ঋজু ও চরিত্রবান নায়কের বিপরীতে পেলব ও নিবেদিতপ্রাণ নায়িকা। রিজওয়ান রব্বানি শেখ ও দেবচন্দ্রিমা সিংহরায় নিঃসন্দেহে ভাল তাঁদের চরিত্রচিত্রণে।
আরও পড়ুন: টেলি রিভিউ: টকঝাল কমেডির সঙ্গে ঘন আবেগ, মন ভরায় ‘সৌদামিনীর সংসার’
দেবচন্দ্রিমার তুলনায় রিজওয়ান অনেক অভিজ্ঞ। অভিনয়ের জন্য পুরস্কৃতও হয়েছেন একাধিকবার। কিন্তু জুটি হিসেবে দুজনের রসায়ন খুবই ভাল। এই ধারাবাহিকে অনেক উচ্চকিত ড্রামা আসতে চলেছে আগামী পর্বগুলিতে। পারিবারিক ষড়যন্ত্র, হার্টব্রেক, সাংসারিক জটিলতা, শাশুড়ি-বউমার টেনশন ইত্যাদিও আসবে এবং ধারাবাহিক নিয়ে দর্শকের কৌতূহলও তাই বেশ তাজা থাকবে।
তার পরেও ধারাবাহিকের মূল আকর্ষণ কিন্তু থাকবে দেবচন্দ্রিমা-রিজওয়ানের পর্দার রসায়নে।