বাংলার সাহিত্যের সেরা উপন্যাসগুলির একটি 'কপালকুণ্ডলা' এবং সেই উপন্যাসকে টেলিপর্দায় দেখার আগ্রহ বহু দর্শকের মধ্যেই ছিল। তাই শুরু থেকেই স্টার জলসা-র ধারাবাহিকটি নিয়ে দর্শক অত্যন্ত উৎসুক ছিলেন। যদিও একাংশের মধ্যে খানিকটা উদ্বেগও ছিল যে উপন্যাসটি ডেইলি সোপ আকারে এলেই সেখানে কাহিনি-বিকৃতি ঘটবে। যা আশঙ্কা ছিল, ঠিক সেটাই ঘটছে। সৃজনশীল স্বাধীনতার প্রয়োজন আছে ঠিকই কিন্তু কতটা?
এর আগে স্টার জলসা-য় 'দেবী চৌধুরাণী' ধারাবাহিকেও সৃজনশীলতার প্রয়োজনে বহু সংযোজন ঘটেছিল। ওই ধারাবাহিকটি প্রায় দুবছর সম্প্রচার হয়। এক বছরের মধ্যেই উপন্যাসের গল্পটিও ফুরিয়ে যায়। এর পরের অংশটিকে 'দেবী চৌধুরাণী'-র ফ্যান ফিকশন সিকোয়েল হিসেবে তাও মেনে নেওয়া যায়।
আরও পড়ুন: গল্পের নতুন ট্র্যাকে বাড়ল টিআরপি! সেরা পাঁচে ‘কৃষ্ণকলি’, ‘কে আপন কে পর’
কিন্তু এই মুহূর্তে 'কপালকুণ্ডলা' ধারাবাহিকটি যেখানে দাঁড়িয়ে এবং অদূর ভবিষ্যতে যেখানে যেতে চলেছে (সাম্প্রতিক কুস্তির প্রোমো অনুযায়ী) তা বঙ্কিমী পাঠকের কাছে ভয়াবহ। যে কোনও সাহিত্যকে পর্দায় এনে ফেললে একটি নতুন টেক্সটের নির্মাণ হয়। সেই বিনির্মাণে চরিত্রগুলির উত্তরণও ঘটে কিন্তু সেখানে পুরনো নির্মাণের সঙ্গে নতুন নির্মাণের কিছু তো তালমেল থাকবে!
'দেবী চৌধুরাণী' ধারাবাহিকের ক্ষেত্রেও এমন অনেক ঘটনার সংযোজন ছিল যা ঔপন্যাসিক কোনওদিন ভেবেই উঠতে পারতেন না, তাও সেটা প্রফুল্ল চরিত্রটির সঙ্গে মানিয়ে গিয়েছিল। 'কপালকুণ্ডলা' ধারাবাহিকে ঔপন্যাসিক সৃষ্ট চরিত্রটি যে ঠিক কী হয়ে উঠবে তা ভাবলেই ভয় হচ্ছে। সম্প্রতি যে প্রোমোটি দেখা গিয়েছে, তা দেখে মনে হয় কপালকুণ্ডলা একজন 'পিরিয়ড' গীতা ফোগাট হয়ে উঠতে পারে। দেখে নিতে পারেন প্রোমোটি নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে--
প্রোমোতে একটি অসাধারণ ভয়েস ওভারও রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে-- ''গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে কুস্তি লড়ছে শর্মা বাড়ির নতুন বউ''। হায় বঙ্কিম! মতিবিবি ও কাপালিকের চরিত্র দুটির জন্যেও কিঞ্চিৎ হায় হায় করা উচিত। ধারাবাহিকে খলনায়িকা প্রয়োজন বলে মতিবিবিকে পুরোপুরি খল চরিত্রে পরিণত করে দেওয়া হয়েছে।
সাংসারিক কূটকচালি দেখতে দর্শক ভালবাসেন এই অজুহাতে প্রচুর সাংসারিক টানাপোড়েনও ঢোকানো হয়েছে চিত্রনাট্যে। সবচেয়ে করুণ অবস্থা কাপালিকের। কপালকুণ্ডলা যাঁরা পড়েছেন, তাঁরা জানেন এটি একটি হাড়-হিম করা উপন্যাস (যদি অনুভূতিপ্রবণ পাঠন হয়ে থাকেন)। কাপালিক অনেকটা যেন কাল-এর প্রতীক যে কাল বা সময় বরাবর মানুষকে ধাওয়া করে চলে। মানুষ সময়ের থেকে পালিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে তার মুহূর্তগুলিকে অনন্ত করে তুলতে চায়, কিন্তু শেষমেশ কালের স্রোতে হারিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
আরও পড়ুন: ‘শ্রীময়ী’-র জীবনে আসছে বিশেষ কোনও মানুষ
সেই কাপালিকের চরিত্রটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি নয়ছয় করা হচ্ছে ধারাবাহিকে। 'কপালকুণ্ডলা' উপন্যাসে কাপালিক যেভাবে পিছু নেয় নবকুমার-কপালকুণ্ডলার তা শ্বাসরোধ করে দেয়। ঠিক যেভাবে মেরি শেলি-র 'ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন' উপন্যাসে সেই দানব ধাওয়া করে ফেরে বৈজ্ঞানিককে। সেই চেজ, সেই শিরদাঁড়ায় ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দেওয়া কাপালিক কোথায়? ধারাবাহিকে চরিত্রটিকে যেভাবে হাস্যকর করে তোলা হয়েছে তা অভাবনীয়।
দর্শক এটাই চেয়েছিলেন?