টেলিপাড়ার কিশোরী অভিনেত্রী সৌমি চট্টোপাধ্যায়ের কাছে স্টার জলসা-র 'কপালকুণ্ডলা' ধারাবাহিক একটি নতুন অধ্যায়। খুব অল্প বয়সেই তার পর্দায় অভিনয়ে হাতেখড়ি কিন্তু এই চরিত্রটির মতো কাল্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র এই প্রথম। সেই নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন কমলা গার্লস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সৌমি। সাংবাদিক সম্মেলনের একফাঁকে একান্ত কথোপকথনে সে জানাল, অভিনয় জগতে আসার ক্ষেত্রে প্রাথমিক উৎসাহ ও উদ্যেগটা ছিল পারিবারিক।
''আমার বাবাও একজন অভিনেতা। উনিই আমাকে অভিনয়ে নিয়ে এসেছিলেন। বাবা থিয়েটার করেন, বাবা আমাকে প্রথমেই বলেছিলেন যে আমিই বা তোকে কতটা শেখাতে পারব। তুই যেখানে যেখানে কাজ করবি, সেখানে সবার থেকে কিছুটা কিছুটা নেওয়ার চেষ্টা করবি। আমি সেভাবেই কাজ করছি'', কপালকুণ্ডলা-নায়িকা বলে, ''আমি এর আগে যে সিরিয়ালটা করতাম, সেখানে যাঁরা ছিলেন তাঁদের সবার কাছ থেকেই কিছু না কিছু শিখেছি। তুলিকা বসু, বোধিসত্ত্ব মজুমদার, এঁরা সবাই আমাকে হেল্প করেছেন, ডিরেক্টর রাজাদা আমাকে হেল্প করেছেন। আর এখানে এসেও রাজদা, অমিতদা সবাই খুব স্নেহ করেন। সবাই আমাকে প্রচণ্ড হেল্প করছেন, দেখিয়ে দিচ্ছেন যে এটা এভাবে কর, এইভাবে দৌড়তে হবে, এইভাবে এক্সপ্রেশন দিতে হবে...।''
আরও পড়ুন: টেলিপর্দার নতুন জুটি স্বস্তিকা-ক্রুশল, আসছে ‘কী করে বলব তোমায়’
মাত্র ৬ বছর বয়সে রূপসী বাংলার 'ফুলি' ধারাবাহিক দিয়ে তার পর্দার অভিনয় শুরু। এর পরে দর্শক তাঁকে দেখেছেন আকাশ বাংলা-র ধারাবাহিক 'দীপাবলির সাতকাহন'-এ ছোট দীপা-র ভূমিকায়। পড়াশোনার পাশাপাশি অভিনয় চালিয়ে যাওয়া সব সময়েই কঠিন কিন্তু সৌমিকে ভরসা দিয়েছেন তার বাবা-মা এবং অবশ্যই তার স্কুলের শিক্ষিকারা। সৌমি জানাল, কমলা গার্লস স্কুলের শিক্ষিকারা তার টেলিজগতের কাজে বরাবর উৎসাহ দিয়ে এসেছেন এবং তাঁদের আশ্বাস ছাড়া স্কুলের পাশাপাশি নিয়মিত অভিনয় চালিয়ে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
''দিদিমণিরা আমাকে খুব স্নেহ করে। আমার স্কুল থেকে পারমিশন নেওয়া আছে যে অ্যাটেন্ডেন্স নিয়মিত না হলেও চলবে কিন্তু পরীক্ষাটা দিতে হবে। আমাকে ওঁরাও বলেন আর এখানেও সবাই বলেন যে যাই করো, পড়াশোনাটা কিন্তু ভালো করে করতে হবে। আমার সামনেই অ্যানুয়াল পরীক্ষা। এই মাসের ২৫ থেকে সামনের মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত। এঁরা আমাকে ছেড়ে দিয়েছেন। বলেছেন যে, পরীক্ষার পরে আবার শুটিংয়ে ডাকবেন'', জানায় সৌমি।
আরও পড়ুন: সেরা আবার ‘ত্রিনয়নী’, সেরা দশে জায়গা পাকা করছে ‘সাঁঝের বাতি’
আপাতত পরীক্ষার টেনশনের চেয়েও বেশি উদ্বেগ তার 'কপালকুণ্ডলা ধারাবাহিকের কাজটি নিয়ে। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এই উপন্যাসটি তার আগে থেকেই পড়া। এমন একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে সে খুশি তো বটেই কিন্তু একটু ভয়ও রয়েছে তার মনে। তার একটাই চিন্তা যে সবাই ভরসা করে যে দায়িত্বটি তাকে দিয়েছে, তা সে ঠিকঠাক পালন করতে পারবে কি না। সে বলে, ''একটু ভয় করছে, আমি পারব তো। সবাই আমার উপর ভরসা করে এই চরিত্রটা দিয়েছেন। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি যাতে সবাই নিরাশ না হন। আমি আমার হান্ড্রেড পার্সেন্ট দিচ্ছি।''
সৌমি বয়সে অনেকটা ছোট হলেও বেশ সপ্রতিভ এবং কিশোরবয়সেই বেশ কিছুটা ব্যক্তিত্ব এসে গিয়েছে। নিজের সম্পর্কে তার একটা স্পষ্ট মতামত আছে। অভিজ্ঞ অভিনেতা-অভিনেত্রী, পরিচালকদের থেকে নানা কিছু শিখতে সে আগ্রহী, কিন্তু পদাঙ্ক অনুসরণকারী নয়। সৌমি বলে, ''আমি সবার কাছ থেকেই শেখার চেষ্টা করি। কিন্তু আমি কারও মতো হব না। আমি আমার মতো হতে চাই।''
নিঃসন্দেহেই অন্তরে সে বঙ্কিমী-নায়িকা, নিজের অজান্তেই।