Ke Apon Ke Por actress Pallavi Sharma: স্টার জলসা-র 'কে আপন কে পর'-অভিনেত্রী পল্লবী শর্মার জীবন, তাঁর অভিনীত চরিত্র জবার সঙ্গে অনেকটা মিলে যায়। বাবা-মা-কে হারিয়েছেন অনেকটা অল্প বয়সে। তার পরে শুরু হয় একা থাকার সংগ্রাম। সবকিছু হাসিমুখে সহ্য করে, কীভাবে এগিয়ে চলেছেন এই দৃঢ় চরিত্রের মানুষটি, ধরা পড়ল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে একান্ত আড্ডায়।
তিন বছর ধরে এই যে জবাকে তুমি ক্যারি করে চলেছ, তোমার কি মনে হয় যে তোমার নিজের বয়সটাও একটু যেন বেড়ে গিয়েছে?
জবা চরিত্রটা আমার মধ্যে মিশে গিয়েছে। আমাকে আর আলাদা কিছু ভাবতে হয় না। পল্লবীর হাবভাবটাও যেন জবার মধ্যে কিছুটা মিশে গিয়েছে। দিনের মধ্যে বেশিরভাগ সময়টাই আমি জবা থাকি, পল্লবী খুব কম সময় হই। হয়তো শুধু ঘুমোনোর সময়েই আমি পল্লবী। তাই জবা আর পল্লবী অনেকটাই মিশে গিয়েছে। আর জবার সঙ্গে পল্লবীর অনেক মিল রয়েছে। যেমন জবা চরিত্রের বাবা-মা দুজনেই মারা গিয়েছে। পল্লবীর ক্ষেত্রেও তাই। আমি খুব ছোটবেলায় আমার বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছি। জবাও অনেক সংগ্রাম করে একটা জায়গায় পৌঁছেছে, পল্লবীর ক্ষেত্রেও তাই। যেহেতু আমি ছোট থেকে অনেকটা স্ট্রাগল করে বড় হয়েছি, তাই আমার সঙ্গে যারা পার্সোনালি মিশেছে, তাদের অনেকেই বলে আমি বয়সের তুলনায় অনেক বেশি ম্যাচিওরড। জবা চরিত্রটা করতে সেটা আমাকে অনেকটা হেল্প করেছে।
আরও পড়ুন: টেলিভিশন একমাত্র মাধ্যম যা সবার জন্য খোলা: বিশ্বজিৎ
পল্লবীর জীবনের অভিনেত্রী হয়ে ওঠার সংগ্রামটা কি একটু শেয়ার করবে?
অভিনেত্রী হওয়ার জন্য কোনও সংগ্রাম সেভাবে কিছু করতে হয়নি। আমি মনে করি, ভগবান যখন কারও থেকে কিছু কেড়ে নেন, তখন তাকে অন্য কোনও ভাবে পুষিয়ে দেন। আমি যখন ক্লাস ওয়ান-টু-তে পড়ি, যখন ভালো করে স্মৃতিও হয়নি, তখন আমি মাকে হারিয়েছি। তার পরে একজন আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে থেকে আমার পড়াশোনা করা। কারণ মা যখন অসুস্থ হয়, তখন বাবা মাকে নিয়ে চেন্নাই চলে যায়। আমার স্কুলের জন্য আমি বাবা-মায়ের সঙ্গে যেতে পারিনি। মা মারা যাওয়ার পরে বাবা শুধু আর্থিক ভাবে সাহায্য করত। আমি ওই আত্মীয়ের বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করতে থাকি। আমি যখন ক্লাস নাইন-টেনে পড়ি, বাবাও মারা যায়। তার পরে আমার একা জীবন চলা শুরু হয়। একা রোজগার করা, সেখান থেকে টাকা বাঁচিয়ে কলেজে পড়া, এগুলো হয়। কিন্তু আমি কখনও ভাবিনি যে আমি অভিনেত্রী হব। ঘটনাক্রমে, আমি একটা পার্টিতে গিয়েছিলাম, সেখানে একজন ডিরেক্টর ছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল আমি করতে পারব। সানন্দা টিভি-তে 'নদের নিমাই' ধারাবাহিকে লক্ষ্মীপ্রিয়া-র চরিত্রটা আমাকে দেন। ওটাই আমার প্রথম কাজ। তার পরে যা হয়, একটা সিরিয়াল থেকে আরও কিছু কাজের অফার আসা... সেই করেই অভিনেত্রী হওয়া।
প্রথম কাজের সময় তোমার বয়স কত ছিল?
'নদের নিমাই' করার সময় আমি এইট-নাইনে পড়তাম। ওটা শেষ হওয়ার পরে সুশান্তদার হাউসেরই ধারাবাহিক ছিল 'দুই পৃথিবী'। বাবা মারা যাওয়ার পরে আমার যেহেতু পড়াশোনা করাটা খুব জরুরি হয়ে গিয়েছিল। যেহেতু তখন ২৪ ঘণ্টা কাজ হতো, তাই পড়াশোনা করে লিড চরিত্র করাটা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। ক্লাস টেন দেওয়ার পরে আমি 'দুই পৃথিবী' করি। তার পরে দুবছরের একটা গ্যাপ নিয়ে ইলেভেন-টুয়েলভটা কমপ্লিট করি। তার পরে আমি কলেজে অ্যাডমিশন নিই, অ্যাকাউন্টস অনার্স। কলেজে ভর্তি হয়ে আমি 'কে আপন কে পর' শুরু করি, যেহেতু ওই কলেজে অ্যাটেন্ডেন্সের অত চাপ ছিল না। কিন্তু যে ১৪ ঘণ্টাটা এখন হয়েছে, সেটা তখন ছিল না। তাই সেকেন্ড ইয়ারের পরে আর আমি পড়াশোনাটা কন্টিনিউ করতে পারিনি। যেহেতু আমাকে রোজগার করতেই হবে, মাথার উপর বাবা-মা নেই, তাই তখন আমার মনে হল যে হয় পড়াশোনাটা বেছে নিতে হবে অথবা আমার কাজ। আমাকে একা সারভাইভ করতেই হবে, তাই আমার কাজটাকেই বেছে নিলাম।
অসম্ভব একটা সংগ্রামের জীবন অত্যন্ত অল্প বয়সে। তুমি কোথা থেকে এত শক্তি পেলে?
মানুষকে তো যাই হোক বাঁচতে হবে। এখনও আমার বাড়িতে আমি একা থাকি। সব কিছু আমি নিজে করি। বাজার করা, রান্না করা, ব্যাঙ্কের কাজ, টিডিএস-ফাইল জমা করা, শুটিং-- সবটাই আমি একটা হ্যান্ডল করি। আমার মনে হয়, সময়, জীবন, সবকিছু শিখিয়ে দেয়। যখন আর কিছু করার থাকে না, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখন বোধহয় ভগবান সেই শক্তিটা দিয়ে দেন।
আরও পড়ুন: দাদা বলেছিলেন ও-ই আমার নায়িকা আর ও প্রমাণ করে দেবে: অমনদীপ
তুমি যে এত বছর ধরে এভাবে লড়াই করছ একা, তোমার ক্লান্ত লাগে না?
হ্যাঁ, কোথাও গিয়ে মনে হয় যে একা লাগছে। কিন্তু এখন এত কাজের মধ্যে থাকি তো, একাকিত্বটা ফিল করারও বোধহয় খুব একটা সময় পাই না। কারণ 'কে আপন কে পর' সাড়ে তিন বছর ধরে করতে করতে এখন এটাই আমার কাছে একটা পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছে। এখন ফ্লোরে না আসলে মনে হয় আমার জীবন থেকে কিছু একটা যেন মিসিং। এখানে এলে মনে হয় একটু অক্সিজেন রয়েছে। প্রত্যেকের সঙ্গে আমার এত ভালো জেলিং। এর বাইরে আমি আর আমার মেয়ে যে করে সিমরান, আমরা হয়তো সিনেমা দেখতে যাই বা ঘুরতে যাই বা আমার বাড়িতে আড্ডা দিই, পার্টি করি।
'কে আপন কে পর'-এর পরে তোমার কী প্ল্যান, তুমি কি টেলিভিশনেই থাকবে নাকি ছবি করবে, তেমন কিছু ভেবেছ?
সেরকম কিছু ভাবিনি। আমার খুব একটা প্ল্যান করে ইন্ডাস্ট্রিতে আসা নয়, সবটাই ওপরওয়ালা ঠিক করে দিয়েছেন। আমার মনে হয় এটা শেষ হলে উনি আমাকে যেদিকে নিয়ে যাবেন, সেদিকেই আমি যাব।
বিয়ের ব্যাপারে কিছু ভেবেছ?
না এখনও অবধি ভাবিনি। যেহেতু আমি বললাম যে খুব স্ট্রাগল করেছি লাইফে, আমার ইমোশনগুলো আমি বাঁচিয়ে রেখেছি সেই মানুষটার জন্য, যে আমার জীবনে বাবা-মায়ের অভাবটা পূরণ করতে পারবে। যে সত্যিই লয়্যাল হবে আমার প্রতি, আমাকে খুব ভালোবাসবে। সেরকম মানুষ পাওয়াটা একটু শক্ত এই মুহূর্তে। এখন পৃথিবীতে এত বেশি ফেক মানুষ ভরে গিয়েছে। আর আমি একটু অন্যদের থেকে আলাদা। আমি সোশাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভ নই। আমি ফেসবুক করি না, আমি হোয়াটসঅ্যাপ খুব দরকার না থাকলে দেখি না, ফোনও খুব একটা ঘাঁটি না। তাই আমার পক্ষে কোনও মানুষকে পাওয়াটা একটু ডিফিকাল্ট, দেখা যাক যদি পাই কাউকে পরে।