বাংলা টেলিভিশনের ইতিহাসে যে কয়েকটি ধারাবাহিক জনপ্রিয়তার নিরিখে চিরকাল স্মরণীয় থাকবে, তার মধ্যে একটি অবশ্যই 'কে আপন কে পর'। ৫ ফেব্রুয়ারি ১৩০০ এপিসোড অতিক্রম করল স্টার জলসা-র এই ধারাবাহিক। প্রায় ৪ বছর ধরে এই ধারাবাহিক টিআরপি শীর্ষ তালিকায় থেকেছে।
প্রাথমিকভাবে অনেক ধারাবাহিকই টিআরপি শীর্ষে ওঠে আবার বেশ খানিকটা সময় পরে সরেও যায়। শীর্ষ থেকে সরে গেলেও 'কে আপন কে পর' হল এমন একটি ধারাবাহিক যে বিগত প্রায় চার বছরে কখনও টিআরপি সেরা দশ তালিকার বাইরে যায়নি। শুধু তাই নয়, এই ধারাবাহিক অন্যান্য ধারাবাহিকের সঙ্গে টক্কর দিয়ে বার বার সেরা দশ তালিকার উপরের দিকে উঠে এসেছে। এই সপ্তাহেও রয়েছে ১৫+ আরবান টিআরপি তালিকার পঞ্চম স্থানে।
আরও পড়ুন: আচমকা সিঁদুরদান! নকল বিয়ে বদলে যাবে কি আসল বিয়েতে
বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই এই ধারাবাহিক রয়েছে সেরা পাঁচে। 'করুণাময়ী রাণী রাসমণি', 'শ্রীময়ী', 'ত্রিনয়নী' হোক বা সাম্প্রতিক 'আলোছায়া'-- এই সব ধারাবাহিকই এসেছে অনেক পরে। কিন্তু 'কে আপন কে পর' দর্শকের মধ্যে কৌতূহল জিইয়ে রাখতে সক্ষম। তাই রেটিংয়ের নিরিখে অপেক্ষাকৃত নতুন ধারাবাহিকগুলির সঙ্গে সমানে সমানে লড়ে যাচ্ছে আজও।
বাংলা টেলিভিশন বিগত তিন-চার বছরে কিছুটা হলেও বদলেছে। একটা সময় ছিল ধারাবাহিক শুরু হতো কিন্তু শেষ হতো না। এখন পুরোপুরি ফাইনাইট সিরিজের ট্রেন্ড না এলেও মোটামুটিভাবে ধরা হয় যে একটি ধারাবাহিক ভাল টিআরপি রেখে যদি দুবছর চলে তবে তা নির্দ্বিধায় সফল একটি প্রযোজনা।
তার কারণ একটাই। ২০১৭-২০১৮ সালে বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক খুব আশা জাগিয়েও চার-পাঁচ মাসের মধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বা কোনও ধারাাবাহিক টেনেটুনে ১ বছর চলেছে বড়জোর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্রমহ্রাসমান টিআরপি-র কারণে চ্যানেল কর্তৃপক্ষই সেই সব ধারাবাহিক বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও পড়ুন: রজঃস্বলা না হলে তবেই রুগী দেখতে পাবেন কাদম্বিনী
ধারাবাহিক অনেকটা লম্বা হলেও দর্শক একটা সময় দেখার ধৈর্য্য রাখতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা টেলিভিশনের দর্শকের প্রত্যাশা কিছুটা বদলেছে। তার একটা বড় কারণ সোশাল মিডিয়ায় দর্শকের ক্ষমতায়ন। ধারাবাহিকের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে দর্শক সরাসরি চ্যানেলগুলির সোশাল মিডিয়া পেজে এসে কথা বলেন। অমুক ধারাবাহিক বন্ধ করে দিন, তমুক ধারাবাহিকের নায়িকাকে ভাল লাগছে না ধাঁচের মন্তব্য কিন্তু প্রচুর।
দর্শকের এই ক্ষমতায়নই দর্শককে অনেক বেশি ডিম্যান্ডিং করে তুলেছে এবং বেশ খানিকটা অসহিষ্ণুও করে তুলেছে বলা যায়। এমন একটা সময়ে দাঁড়িয়ে কোনও ধারাবাহিক ১৩০০ এপিসোড অতিক্রম করছে অত্যন্ত ভাল টিআরপি নিয়ে, এটা নিঃসন্দেহে একটি বড় ব্যাপার। জবাকে নিয়ে, 'কে আপন কে পর' নিয়ে অসংখ্য ট্রোল-মিম রয়েছে, সম্প্রতি মানববোমা নিষ্ক্রিয় করা নিয়েও ট্রোলড হয়েছে ধারাবাহিক।
কিন্তু একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে দর্শক দেখেছেন। হয়তো আমোদের জন্যই দেখেছেন কিন্তু দেখা মানেই কিন্তু ভিউয়ারশিপে সংযোজন। আর তার উপরেই দাঁড়িয়ে থাকে টেলিভিশনের ব্যবসা ও ধারাবাহিকের সাফল্য। 'কে আপন কে পর' এই মুহূর্তে বাংলা টেলিভিশনের সবচেয়ে সফল প্রযোজনাগুলির একটি। তাই ৫ ফেব্রুয়ারি ধারাবাহিকের সেটে ছিল উৎসব, যার ঝলক দেখে নিতে পারেন নীচের লিঙ্কে--
আরও পড়ুন, সাত দশকের নারীকেন্দ্রিক বাংলা ছবি: ফিরে দেখা
জবা-পরমের গল্প আরও কত এপিসোড চলবে তা জানা নেই কিন্তু একটা ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত হওয়া যায়। শেষ দিন পর্যন্ত এই ধারাবাহিক টিআরপি সেরা দশে টিকে থাকবে। আর কীভাবে সীমিত বাজেটের মধ্যে থেকেও একটি ধারাবাহিককে লাভজনক রেখে ১৩০০ এপিসোডের মাইলস্টোন ছুঁয়ে ফেলা যায়, তার একটি কেস স্টাডি হয়ে থাকবে এই ধারাবাহিক।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন