Bollywood: বড়লোক থেকে নিঃস্ব, ছেলেকে ছুঁতেন না পর্যন্ত! বলিউড হিরোর 'নায়ক' বাবা নিমেষেই সব হারালেন..

গুলশান, যিনি চলচ্চিত্র জগতে অরুণ নামে পরিচিত, সিনে আলো থেকে হারিয়ে গিয়েছেন। প্রযোজক হওয়ার চেষ্টা করলেও তাঁর প্রযোজিত একমাত্র ছবি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। ফলস্বরূপ পরিবারকে নিয়ে কার্টার রোডের বাংলো ছেড়ে ভিরারের একটি সাধারণ বাড়িতে চলে যেতে হয়।

গুলশান, যিনি চলচ্চিত্র জগতে অরুণ নামে পরিচিত, সিনে আলো থেকে হারিয়ে গিয়েছেন। প্রযোজক হওয়ার চেষ্টা করলেও তাঁর প্রযোজিত একমাত্র ছবি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। ফলস্বরূপ পরিবারকে নিয়ে কার্টার রোডের বাংলো ছেড়ে ভিরারের একটি সাধারণ বাড়িতে চলে যেতে হয়।

author-image
IE Bangla Entertainment Desk
New Update
govinda-father-arun-ahuja

কে এই অভিনেতা?

দেশভাগের আগে লাহোরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা গুলশান কুমার আহুজাকে চলচ্চিত্রকার মেহবুব খান খুঁজে পান। এরপর তাঁকে মুম্বইয়ে নিয়ে আসা হয় এবং ১৯৩৯ সালের এক হি রাস্তা ও ১৯৪০ সালের আওরাত ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ দেন তিনি। পরবর্তীতে এই আওরাত ছবিটিকেই মেহবুব খান ১৯৫৭ সালে মাদার ইন্ডিয়া নামে পুনর্নির্মাণ করেন। তবে ততদিনে গুলশান, যিনি চলচ্চিত্র জগতে অরুণ নামে পরিচিত, সিনে আলো থেকে হারিয়ে গিয়েছেন। প্রযোজক হওয়ার চেষ্টা করলেও তাঁর প্রযোজিত একমাত্র ছবি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। ফলস্বরূপ পরিবারকে নিয়ে কার্টার রোডের বাংলো ছেড়ে ভিরারের একটি সাধারণ বাড়িতে চলে যেতে হয়। সেখানেই জন্ম নেন তাঁর পাঁচ সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠতম—যাকে সবাই আদর করে ডাকত চি চি, আর আজ সবাই যাকে চেনে গোবিন্দা নামে।

Advertisment

২০১৪ সালে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গোবিন্দা জানিয়েছিলেন, ১৯৪০ সালে আওরাত ছবিতে, তাঁর বাবা অরুণ, নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। তাঁদের আদি নিবাস পাকিস্তানের গুজরানওয়ালা। বাবার ব্যর্থ প্রযোজনার কারণে ধনী পরিবার মুহূর্তেই ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে পড়ে। কার্টার রোডের বাংলো বিক্রি করে চলে আসতে হয় ভিরারে। এই ধাক্কা সামলে উঠতে পারেননি অরুণ, দীর্ঘ ১৫ বছর অসুস্থ থেকেছেন তিনি।

কঠিন সেই সময়ের কথা মনে করে গোবিন্দা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাঁরা কখনও ছাতা পর্যন্ত কেনেননি। কারণ মনে হতো, মাত্র চার মাস বৃষ্টি হয়, তাতে টাকা খরচ করার প্রয়োজন কী? দোকানদারদের কাছে দাঁড়িয়ে অপমানিত হওয়ার অভিজ্ঞতাও ছিল তাঁর জীবনের অংশ। মা–ছেলের কান্না একসাথে মিশে যেত সংসারের দুঃখে। পরে লাভ ৮৬ ছবির পারিশ্রমিক দিয়ে তিনি পরিবারের দেনার বড় অংশ মেটান, এবং এরপরের চেক দিয়ে কিনে ফেলেন একটি মারুতি গাড়ি। শীর্ষে থাকাকালীন, তিনি বছরে এক ডজনেরও বেশি ছবিতে অভিনয় করতেন এবং প্রতিটি ছবির জন্য এক কোটি টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক নিতেন।

Advertisment

গোবিন্দার ঝলমলে উত্থান আসলে তাঁর বাবার গল্পেরই পুনরাবৃত্তি। যেমন একসময় অরুণের দরজায় প্রযোজকদের ভিড় ছিল, তেমনই গোবিন্দা সিনে-দুনিয়ায় পা রাখার পর ৭০টিরও বেশি ছবির চুক্তি করেন। তবে ব্যক্তিগত জীবনে বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল জটিল। জন্মের পরে বাবা তাঁকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিলেন। কারণ তাঁর মা নির্মলা দেবী তখন সাধ্বীর জীবন বেছে নিয়েছিলেন, যা অরুণ মেনে নিতে পারেননি। এক বছর পর্যন্ত অরুণ সন্তানকে কোলে নেননি। পরে ধীরে ধীরে ছেলের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নেয়, যদিও বাবা চাইতেন না গোবিন্দা সিনেমা জগতে আসুক। তিনি চেয়েছিলেন ছেলে ব্যাংকে চাকরি করুক। কিন্তু শেষমেশ তিনিই আবার উৎসাহ দিয়েছিলেন সিনেমায় চেষ্টা করার জন্য।

Actress Tragic Life: সিনেমার লিড নায়িকা থেকে যৌনপেশা, অবশেষে এইডসে মৃত্যু এই অভিনেত্রীর

গোবিন্দা সেই পরামর্শই নিয়েছিলেন। শর্ত ছিল- না মদ, না সিগারেট। আর এই প্রতিজ্ঞা তিনি সারাজীবন রক্ষা করেছেন। ১৯৯০-এর দশকে তিনি হিন্দি ছবির সবচেয়ে বড় পুরুষ তারকা হয়ে ওঠেন। তবে ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে তাঁর জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে, ছবির পর ছবি ব্যর্থ হতে থাকে। ২০১৯ সালের পর থেকে তিনি আর নতুন কোনও সিনেমায় অভিনয় করেননি।

তবু গোবিন্দা সবসময় জানতেন, সাফল্য চিরস্থায়ী নয়। বাবার উত্থান ও পতন কাছ থেকে দেখেছিলেন বলেই খ্যাতির ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতি তিনি বুঝে গিয়েছিলেন। তাঁর নিজের কথায়, "আমি জানি, সবকিছু স্থায়ী নয়। সময় বদলায়। আমার বাবা একসময় শীর্ষ নায়ক ছিলেন, কিন্তু সব হারিয়ে ভিরারে চলে এসেছিলেন। আজ আমরা আবার মুম্বইয়ে ফিরেছি।" ১৯৯৮ সালে অরুণের মৃত্যু হলেও তাঁর উত্তরাধিকার বহন করে গোবিন্দা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অনন্য নক্ষত্র হিসেবে।

Entertainment News