সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়। টলিউড ইন্ডাস্ট্রির নবীন প্রজন্মের কাছে খুব চেনা নাম না হলেও নয়ের দশকে কিংবা ২০০০ সালের গোড়ার দিকে দাঁপিয়ে কাজ করেছেন বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে। বেশ কয়েকটি হিন্দি ছবির কাহিনীকারও তিনি। তবে আলোর উৎসবে অন্তিম লগ্নে তিনিও বিদায় নিলেন নিঃশব্দেই। ঘুমের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণের খবর প্রকাশ্যে আসতেই টলিউডের একাংশ শোকপ্রকাশ করেছেন।
সুদীপ্তা চক্রবর্তী, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়দের মতো তুখড় জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রীরা সুদীপ্তর হাত ধরেই বিনোদুনিয়ায় নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। সেই মানুষটির প্রয়াণের খবর পেয়েই শোকে মূহ্যমান সুদীপ্তা-অনন্য়ারা। পরিচালকের সঙ্গে কতটা আত্মিক সম্পর্ক ছিল তাঁদের? তাঁর একটি খসড়া তুলে ধরেছেন সুদীপ্তা নিজেই। সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের সুবাদে কীভাবে খাস খবর-এ নিউজ অ্যাঙ্কর হয়েছিলেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী? নিজেই লিখলেন সেকথা।
"সুদীপ্তদা : হ্যালো টুম্পা!
আমি : হ্যাঁ বলো।
সুদীপ্তদা : শোন, কাল একবার তোরা তিন বোন দেখা কর তো আমার সঙ্গে, একটা কাজের ব্যাপারে কথা আছে।
আমি : নতুন সিরিয়াল ?
সুদীপ্তদা : না। সিরিয়াল নয়, এটা একটু অন্য ব্যাপার। এটা খবর বলা।
আমি : খবর? সর্বনাশ! আমি তো খবর পড়তে পারি না সুদীপ্ত দা। তাছাড়া আমি তো অভিনয় করি। খবর পড়তে চাই না।
সুদীপ্ত দা : পড়া নয়, বলা। বললাম যে, খবর বলা।
আমি : কিন্তু সেই খবরই তো। খুব গম্ভীর ব্যাপার। আমার দ্বারা বোধহয় হবে না।
সুদীপ্তদা : হবে। আগে আয় তো। বুঝিয়ে বলব ব্যাপারটা।
আমি : আমাকে ছেড়ে দাও না প্লিজ।
সুদীপ্তদা : না টুম্পা। ছাড়া যাবে না। খুব অসুবিধার মধ্যে আছি। নতুন একটা খবর আসছে। নাম হল 'খাস খবর'। একদমই দূরদর্শনের মত ভাবগম্ভীর ব্যাপার নয়। দূরদর্শনেই দেখানো হবে, তবে এটা প্রাইভেট নিউজ। আমাদের দরকার হালকা চালে, স্মার্টলি খবর বলা। অনেক দরখাস্ত জমা পড়েছে। প্রচুর ইন্টারভিউ নিয়েছি। যারা ভাল বাংলা বলতে পারে, তাদের কেমন যেন ন্যাকা ন্যাকা ভাব, আর যারা স্মার্ট, তারা বাংলাটা কেমন যেন ইংরিজির মত করে বলছে। আমার পোষাচ্ছে না। তোরা তিনবোন দেখা কর। তোরা তিনজনেই খুব স্মার্ট আর খুব ভালো বাংলা বলিস। কাল আয়। একটা টেস্ট নেব।
বাকিটা ইতিহাস…।"
<আরও পড়ুন: জোড়া লাগল রাহুল-প্রিয়াঙ্কার ভাঙা সংসার? মুখ খুললেন অভিনেতা>
এরপরই দুঃখপ্রকাশ করে সুদীপ্তা চক্রবর্তী বলেন, "আজ সুদীপ্তদাও ইতিহাস হয়ে গেল। শান্তিতে ঘুমোও দাদা। একটু যদি সামলে চলতে।" উল্লেখ্য, কোয়েল-পরমব্রত অভিনীত 'হাইওয়ে' সিনেমা পরিচালনার পাশাপাশি বলিউডে 'দশ কাহানিয়া', বিপাশা অভিনীত 'পঙ্খ', 'শোভনাজ সেভেন নাইটস'-এর মতো ছবিগুলোর চিত্রনাট্য লিখেছিলেন সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়।
স্মৃতির পাতা উলটে অনন্যা চট্টোপাধ্য়ায় চলে গেলেন অতীতে। বললেন, "সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়, সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে আমার পদাপর্নের নেপথ্যে একমাত্র এই মানুষটিই দায়ী। তোমাকে বিদায় জানাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এই তো কিছুদিন আগেই আমরা কথা বললাম। বোন মম সামলে উঠুক, এই প্রার্থনাই করি।"