Sun Bangla serial Aye Khuku Aye review: কিছুদিন আগেই সমস্ত সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে ছিল এক শিশুকন্যার খবর, যাকে ৩ ফুট মাটির নীচ থেকে উদ্ধার করা হয়। তারও কিছুদিন আগে, একটি ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার হওয়া সদ্যোজাতের খবরও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল নিমেষেই। যে কোনও শিল্প মাধ্যমেই প্রতিফলিত হয় সমসাময়িক সামাজিক বহমানতা। শিশুকন্যাদের আগলে রাখার কথা, তাদের সমান অধিকারের কথা আজ নয়, বিগত পঞ্চাশ-ষাট বছর ধরেই গণমাধ্যমে অসংখ্য বার, অসংখ্য ভাবে এসেছে। তার পরেও যখন পুত্রবধূর পুত্রসন্তান হলে, পরিবারের কর্তা বা গিন্নির মুখের হাসি একটু বেশিই চওড়া হয়ে যায় অজান্তেই, তখনই মনে হয়, ২০১৯-এ এসেও 'আয় খুকু আয়'-এর মতো ধারাবাহিক কতটা প্রয়োজনীয় ও প্রাসঙ্গিক।
যে কোনও প্রাণই অমূল্য। একটি শিশুর দায়িত্ব নিতে গেলে শুধুমাত্র ইচ্ছাটুকুরই প্রয়োজন, সম্পদ-প্রতিপত্তি কোনও কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয়। প্রয়োজন অন্তরের নিষ্পাপ অনুভূতির কাছে আত্মসমর্পণ। এই ধারাবাহিকে তাই শিশুকন্যার নিরাপত্তার অধিকারের পাশাপাশি অভিভাবকত্বের বিষয়টিও সমান্তরাল ভাবেই রেখেছেন চিত্রনাট্যকার সাহানা দত্ত। ঘটনাচক্রে নিজের মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া খুকু-র দায়িত্ব যে তুলে নেয়, সে একজন অটিজমে আক্রান্ত মানুষ। বয়স বাড়়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের যে বিকাশ হওয়ার কথা, সেটা তার ঘটেনি।
আরও পড়ুন: AloChhaya Review: ডিগ্রির দাসত্ব নয়, শিক্ষার আলো এবং ভালো মানুষ হয়ে ওঠার কথা বলে
অথচ যে কোনও গড়পরতা মানুষের চেয়ে কয়েকগুণ তীব্র তার সংবেদনশীলতা। তাই অনাথ খুকু-কে নিজের মেয়ে বলতে তার এতটুকু সময় লাগে না। যেখানে তার নিজের জীবনই বিপন্ন, সেখানেও সমস্ত ধরনের প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সে লড়ে যায় তার সন্তানের জন্য। তার পিতৃত্বের অনুভূতিপ্রবণতার কাছে মাথা নত করে শিশুকন্যার অধিকার বা শিশু-নিরাপত্তা নিয়ে যাবতীয় তাত্ত্বিক আলোচনা। বিষয়টা আদতে খুব সহজ-- ভালোবেসে আগলে রাখাটাই শুধু প্রয়োজন।
চিত্রনাট্যকার এই ধারাবাহিকের অন্য মেরুতে রেখেছেন একটি ব্যবসায়ী পরিবারকে যেখানে পুরুষতান্ত্রিক দম্ভের সঙ্গে মিশে যায় অপরাধপ্রবণতা। সব ধরনের সামাজিক দমনই পরস্পর-সংযুক্ত-- সে নারীর অবদমন হোক বা বিত্তশালীদের হাতে শ্রমিক শ্রেণির অবদমন। ধারাবাহিকের গল্পে এই সমস্ত প্রসঙ্গগুলিই মুন্সিয়ানার সঙ্গে বুনে দিতে দিতে চলেছেন চিত্রনাট্যকার। তারই সঙ্গে এসেছে শিশু পাচার চক্রের বিষয়টিও। কিন্তু এই ধারাবাহিকের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল দর্শককে আয়নার সামনে দাঁড় করানোর পাশাপাশি প্রতি মুহূর্তেই একটি ইতিবাচক শক্তি সঞ্চারিত করে। দর্শক এখানে প্রতি মুহূর্তে নিজের ভিতরের ও আশপাশে ছড়িয়ে থাকা অন্ধকারকে যেমন দেখেন, তেমনই সেই অন্ধকার পেরিয়ে আলোর উৎসের দিকেও দর্শককে এগিয়ে নিয়ে যায় এই ধারাবাহিক।
আরও পড়ুন: দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক: সবটাই ছিল কিন্তু মন ভরল না
তবে ধারাবাহিকের প্রধান চরিত্রগুলির কাস্টিং এত উপযুক্ত না হলে, সম্ভবত অভিঘাত এত তীব্র হতো না। রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় সম্ভবত এযাবৎ টেলিভিশনে তাঁর সেরা চরিত্রটি পেয়েছেন। একজন অটিজমে আক্রান্ত মানুষ, যার মনে কোনও মালিন্য নেই, যার কাছে অভিভাবকত্ব নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মতোই স্বাভাবিক-- এমন একটি চরিত্রে রাহুলের অভিনয় অনুভূতিপ্রবণ দর্শকের চোখে জল আনবে। দর্শক এই চরিত্রে নিজেরই সেই কোমল অনুভূতিগুলি দেখবেন, যা হয়তো তাঁরা ফেলে এসেছেন শৈশবে।
সান বাংলা-র 'আয় খুকু আয়' এমন একটি ধারাবাহিক যার খুব প্রয়োজন ছিল এই সময়ে দাঁড়িয়ে যখন টেলিভিশনের বেশিরভাগ সোশাল ড্রামাতেই বিয়ে ও শ্বশুরবাড়ির গল্প প্রাধান্য পেয়ে চলেছে। যে কোনও সম্পর্কই আসলে কোনও না কোনও দখলের গল্প। বাবা-মায়ের কাছে তার সন্তান, প্রেমিকার কাছে তার প্রেমিক অথবা পরিবারের সবচেয়ে বর্ষীয়ান সদস্যের কাছে বাকি সদস্যরা! এই ধারাবাহিকের গল্প সেই সব দখলের সমীকরণগুলিকেই চ্যালেঞ্জ করে। এই ধারাবাহিক বলে, স্নেহ ও সহমর্মিতার কাছে মাথা নত করে, প্রাণের লালনই শেষ কথা!