Taslima Nasrin on Karishma kapoor: কিছুদিন আগেই অভিনেত্রী করিশ্মা কাপুরের প্রাক্তন স্বামী সঞ্জয় মারা গিয়েছেন পোলো খেলত গিয়ে। মৌমাছি গলায় আটকে যাওয়ার পর, তিনি আর নিঃশ্বাস নিতে পারছিলেন না। এরপরই মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুর বেশ কয়েকদিন পর তবে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। তাঁর মৃত্যুর পর করিশ্মার কোনো স্টেটমেন্ট না থাকলেও, অভিনেত্রী শেষকৃত্য সম্পন্ন করলেন দায়িত্ব সহকারে। কেন? এই কেনর প্রশ্নই করেছেন বাংলাদেশের চর্চিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। মেয়েদের অ্যাবিউজিভ স্বামী নিয়ে আদিখ্যেতা দেখে রেগে আগুন তসলিমা। তিনি রীতিমত রেগে আগুন। সমাজ মাধ্যমে করিশ্মাকে নিয়ে যা নয় তাই বললেন...
তিনি লিখছেন, "করিশ্মা কাপুর কেঁদে বুক ভাসালেন সঞ্জয় কাপুর মারা যাওয়ার পর। সঞ্জয় কাপুরের অন্তেষ্টিক্রিয়ায় সাদা পোশাক পরে গেলেন, সেখানেও কেঁদে বুক ভাসালেন। আগ বাড়িয়ে সৎকারের সবই করলেন তিনি, আর কেঁদে বুক ভাসালেন। কার জন্য কাঁদলেন, যে লোকটা তাঁকে পেটাতো, অপমান করতো, অ্যাবিউজ করতো! লোকটা বিবাহিত ছিল, তারপরও করিশ্মাকে বিয়ে করেছিল। প্রথম স্ত্রী নন্দিতাকে ডিভোর্স দিয়েছিল অবশ্য। বিয়ের পর থেকেই করিশ্মাকে নির্যাতন করতো সঞ্জয়। তাঁকে পেটাতো, অপমান করতো, অ্যাবিউজ করতো! করিশ্মা জানিয়েছেন হানিমুনের দিন সঞ্জয় নিলামে উঠিয়েছিল তাঁকে। তার এক বন্ধু কিনে নিয়েছিল করিশ্মাকে। এমন জঘন্য নারীবিদ্বেষী একটা লোক, যে নিজের স্ত্রীকেও ভোগের বস্ত্র ছাড়া আর কিছু মনে করে না, তার জন্য করিশ্মাকে কাঁদতে হয় কেন? করিশ্মার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরই সঞ্জয় আরেকটি বিয়ে করেছে। আরেক মহিলার স্বামীর জন্য করিশ্মাকে এত আকুল হয়ে কাঁদতে হয় কেন?"
Aamir Khan Son: আমিরের ছেলেকে চিনতে না পেরেই সজোরে এক ধাক্কা! সলমনে…
কেন করিশ্মা গেলেন সেখানে? যে স্বামী তাঁকে এত কষ্ট দিল, হানিমুনে নিয়ে গিয়ে, তাঁকে নিলামে তুলল, সেই মানুষটাকে শেষ যাত্রার কেন এত ভালবাসা দেখালেন করিশ্মা। লেখিকা আরও রাগের চোটে লিখছেন... "লোকে বলছে, আহা করিশ্মা কত ভালো, কত ভালবাসতেন তাঁর স্বামীকে! স্বামী তাঁকে পেটাতো, অপমান করতো, অ্যাবিউজ করতো, নিলামে ওঠাতো, বেচে দিত, তারপরও করিশ্মা কত ভালবাসতেন তাকে! কারিশ্মার বুক ভেসে যাওয়া কান্না দেখে সবাই মুগ্ধ। তাঁর ত্যাগ দেখে সবাই তৃপ্ত। কত লক্ষ্মী মেয়ে করিশ্মা! কত নরম মেয়ে করিশ্মা! কত দুর্বল মেয়ে করিশ্মা! কত পতিব্রতা মেয়ে করিশ্মা! কত প্রাক্তনপতিব্রতা মেয়ে কারিশ্মা! কেউ কি করিশ্মাকে বলেছে, তোকে যে এত নির্যাতন করেছে, তার জন্য কান্না কেন, চোখের জল মুছে ফেল? না, কেউ বলেনি।"
Actor Passed Away: আচমকাই সব শেষ! চলে গেলেন জনপ্রিয় অভিনেতা...
নারী জাতিটা সত্যিই কি এমন? তাঁরা কেন স্বামীদের সবকিছুর পর এভাবেও সবটা মেনে নেন। স্বামীপ্রেম মেয়েদের সমস্ত বুদ্ধিমত্তা সব পাল্টে দিয়েছে। তাঁরা ভালবাসায় সব বোধ হারান। তসলিমা লিখছেন, "মেয়েরা তাদের অ্যাবিউজার স্বামীকে ভালবাসবে, স্বামী সে যত নিকৃষ্টই হোক, যত অমানুষই হোক, যত অত্যাচারীই হোক; স্বামী তাকে তালাক দিলেও স্বামীকে ভালবাসবে; স্বামী অন্য কারও সঙ্গে বাস করলেও, অন্য কাউকে বিয়ে করলেও, নিজে কোনও সম্পর্কে জড়াবে না, নিজে আনন্দ করবে না, কেবল কাঁদবে, কেবল ত্যাগী হবে, ভোগী নয়, একা একা প্রাক্তন স্বামীকে ভালবেসে যাবে। সমাজ এটাই চায়। কিন্তু এই নারীবিদ্বেষী সমাজকে মেয়েদের খুশি করতে হবে কেন? এই সমাজকে জোরে চড় কষায় না কেন মেয়েরা? কেন ভালো মেয়ে হওয়ার জন্য আত্মমর্যাদাবোধ বিসর্জন দেয়, কেন শিরদাঁড়া বিকিয়ে দেয় সমাজের কাছে?"
শেষে যদিও বা তিনি আরও বলেন, "সত্যি বলতে, আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন মেয়েরাই ভালো মেয়ে। আর আত্মমর্যাদাহীন মেয়েদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ প্রশংসা করতে পারে, কিন্তু সচেতন সমাজ কেন প্রশংসা করবে! আত্মমর্যদাহীন মেয়েরা মেয়েদের আত্মমর্যাদাহীন হতে শেখায়। আমি বলছি না, মেয়েদের নিষ্ঠুর হতে হবে, অনুদার হতে হবে। না তা নয়, মেয়েরা উদার হোক, মানবিক হোক, সৎ হোক, সহমর্মী হোক, সহানুভূতিশীল হোক, কিন্তু যেন অযোগ্য লোকদের জন্য, যেন নারী-নির্যাতকদের জন্য মায়া মমতা, প্রেম ভালবাসা, সহানুভূতি সহমর্মিতা ইত্যাদি বর্ষিত না হয়।"