Rana Sarkar, Television Industry in Bengal Faces Financial Crisis: বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই পারিশ্রমিকের বকেয়া টাকা উদ্ধার নিয়ে বিপর্যস্ত বাংলা টেলিজগতের শিল্পী ও টেকনিসিয়ানদের একাংশ। অভিযোগ মূলত উঠেছে প্রযোজক রানা সরকার ও তাঁর সংস্থা দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার বিরুদ্ধে। ২৫ মে একটি আপৎকালীন সাংবাদিক বৈঠক ডেকে, শিল্পীদের সংগঠন আর্টিস্ট ফোরাম একটি প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছে যে বিভিন্ন আইনি অজুহাতে অভিনেতা/অভিনেত্রী ও কলাকুশলীদের প্রাপ্য় টাকা দীর্ঘদিন ধরে আটকে রেখেছে প্রযোজক রানা সরকার এবং তাঁর সংস্থা।
কিন্তু শুধুমাত্র পারিশ্রমিকের টাকা নয়, দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ আরও গুরুতর। আর্টিস্টস ফোরামের প্রেস বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে গত ২০১৮-১৯ আর্থিক বর্ষে অভিনেতা/অভিনেত্রীদের পারিশ্রমিক থেকে প্রায় ২০-২৫ লক্ষ টাকা টিডিএস বাবদ কেটে নিলেও, আজ পর্যন্ত একটি টাকাও সরকারি কোষাগারে জমা পড়েনি। সরকারি কোষাগারে টিডিএস-এর টাকা জমা না দেওয়া একটি গুরুতর বিষয়। আর্টিস্টস ফোরামের বিবৃতি অনুযায়ী, টিডিএস-এর টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে পারিশ্রমিক থেকে অথচ সরকারি কোষাগারে সেই ট্য়াক্স জমা পড়েনি যা আদতে দাঁড়ায় এক ধরনের কারচুপি।
আরও পড়ুন: Artists’ Forum Press Conference: বিশাল আর্থিক দুর্নীতি টেলিজগতে, আন্দোলনের ইঙ্গিত ফোরামের
ট্য়াক্সজনিত কারচুপি এদেশে একটি গুরুতর অপরাধ। যদি নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ থেকে থাকে অভিযোগকারীদের হাতে এবং তা নিয়ে যদি আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁরা তবে দাগ সি মিডিয়া এবং প্রযোজক রানা সরকার বড়সড় আইনি প্যাঁচে পড়তে পারেন। এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত রানা সরকারের পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি পাওয়া যায়নি কারণ তিনি বিগত চার মাস যাবৎ প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা যেমন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে অক্ষম হয়েছেন, পাশাপাশি যাঁদের পারিশ্রমিক বাকি রয়েছে সেই শিল্পী-কলাকুশলীদের অধিকাংশই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্য়র্থ। তবে অভিযোগকারীরা আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন কি না, তা সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি আবার সম্ভাবনার কথা পুরোপুরি উড়িয়েও দেওয়া হয়নি।
টেলিপাড়ার একাধিক সূত্রের খবর, রানা সরকার মেল মারফত নির্দিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বিগত তিন মাসে তবে তিনি এখনও অন্তরালেই রয়েছেন। এই অন্তরালে থাকা নিয়েই বিচলিত আর্টিস্টস ফোরাম। ফোরামের কার্যনির্বাহী সভাপতি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্য়ায় সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, প্রযোজকদের অনেক সময় টাকা দিতে সাত-দশদিন দেরি হতে পারে, সেই নিয়ে প্রযোজকের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে যা অনেক সময় অন্য়ান্য় প্রযোজকদের ক্ষেত্রে হয়েছে কিন্তু রানা সরকারের সঙ্গে তো কোনও রকম যোগাযোগই করা সম্ভব হচ্ছে না। এইভাবে অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না, এমনটাই জানিয়েছেন ফোরাম সভাপতি।
টেলিপাড়ার একাধিক সূত্রের খবর, দাগ সি মিডিয়ার পাঁচটি ধারাবাহিক, 'আমি সিরাজের বেগম', 'জয় বাবা লোকনাথ', 'মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য', 'খনার বচন' ও 'প্রথম প্রতিশ্রুতি'-র ইউনিটে যে সমস্ত শিল্পী ও টেকনিসিয়ানরা কাজ করেছেন বা করছেন, তাঁদের বেশিরভাগই ওই সংস্থার থেকে পারিশ্রমিকের টাকা পাননি এবং টিডিএস সার্টিফিকেটও পাননি। এই পাঁচটি ধারাবাহিকের মধ্য়ে 'প্রথম প্রতিশ্রুতি' বন্ধ হয়ে গিয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে। বাকি চারটি ধারাবাহিকের প্রযোজনার ভার মার্চ মাসের মাঝামাঝিই হস্তান্তরিত হয়ে গিয়েছে অন্যান্য সংস্থার কাছে। হস্তান্তরের পরবর্তী পর্যায়ের পেমেন্ট নিয়ে কোনও অসন্তোষ নেই। অসন্তোষ শুধু তার আগের পর্যায়ের বকেয়া পারিশ্রমিক নিয়ে, যা দেওয়ার দায়িত্ব দাগ সি মিডিয়ার।
প্রথমত, সেই বকেয়া টাকা এবং দ্বিতীয়ত, পারিশ্রমিকের টাকার টিডিএস সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়া-- এই দুটি মূল অভিযোগই উঠেছে। দ্বিতীয়টি একটি জামিন-অযোগ্য অপরাধ হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে যদি তথ্যপ্রমাণ মজুত থাকে। নিঃসন্দেহে বাংলা টেলিজগতে এত বড় আর্থিক দুর্নীতি সাম্প্রতিককালে দেখা যায়নি। অতীতেও এমন নজির আছে বলে এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।