Bengali Television, Krishnakoli, Susmita Roy Chakraborty: এই যন্ত্রণার কথা লেখা যায়, পড়া যায়, অনুধাবনও করা যায় কিন্তু অনুভব শুধুমাত্র তাঁরাই করতে পারেন, যাঁরা জীবনে সন্তান হারিয়েছেন। নিতান্ত বিকৃতমনস্ক ও মানসিক ভারসাম্যহীন না হলে, এমন কোনও মা নেই পৃথিবীতে যাঁকে সন্তানের মৃত্যু বিচলিত করে না, সে যে বয়সেই হোক না কেন। সুস্মিতা যেভাবে দশ মাসের সম্পূর্ণ বিকশিত গর্ভস্থ সন্তানকে হারিয়েছেন গত মার্চ মাসে তা অকল্পনীয়! তার পরের অবস্থাটি ছিল আরও ভয়ানক। সদ্য সন্তানহারা সুস্মিতাকে তার পরের ছ'দিন কাটাতে হয় ওই হাসপাতালে, সদ্যোজাতদের কান্না শুনে। এই যন্ত্রণা থেকে নিজেকে বার করে নিয়ে আসা যতটা কঠিন, তার চেয়েও বেশি কঠিন এই ঘটনার পরেই পর্দার ধারাবাহিকে মায়ের অভিনয়।
জি বাংলা-র 'কৃষ্ণকলি' ধারাবাহিকে তিনি শ্য়ামার বউদিদি। সাধারণত অভিনেত্রীরা গর্ভবতী হলে, অভিনয় থেকে সাময়িকভাবে সরে যান। সুস্মিতার ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। তিনি গর্ভবতী হয়েও শুটিং চালিয়ে যেতে চেয়েছেন, ঠিক যেমন করে থাকেন অন্যান্য পেশার মহিলারাও। এই ব্য়াপারে বিপুল সহায়তা করেন প্রযোজক সুশান্ত দাস ও চ্য়ানেল কর্তৃপক্ষ। তাই সেভাবেই ধারাবাহিকের চিত্রনাট্য় লেখা হয়। ধারাবাহিকের গল্পেও দেখানো হয় যে মা হতে চলেছে সুস্মিতা-অভিনীত চরিত্রটি।
আরও পড়ুন: লক্ষ লক্ষ টাকা বকেয়া টেকনিসিয়ানদের, কবে পাবেন তাঁরা
মার্চের মাঝামাঝি ওই ঘটনার প্রায় দু'মাসের মাথায় আবারও শুটিংয়ে ফিরেছেন সুস্মিতা। আর চিত্রনাট্য অনুযায়ী, পর্দায় এখন তিনি মা। অসম্ভব মনের জোর এবং বাস্তববাদী না হলে, এই গোটা বিষয়টির সঙ্গে এত সহজে মানিয়ে নেওয়া যায় না। সুস্মিতা নিঃসন্দেহে একটি দৃষ্টান্ত।
১৯ মার্চ তাঁর সন্তানবিয়োগ ঘটে। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে, গত ২৫ মার্চ একটি দীর্ঘ পোস্ট লিখেছিলেন অভিনেত্রী তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে। চিকিৎসকের গাফিলতির অভিযোগও ছিল। ২০ মার্চ ছিল তাঁর ডেলিভারির তারিখ। তার দু'দিন আগে চেকআপে দেখা যায় যে মা ও সন্তান দুজনেই সম্পূর্ণ সুস্থ। অদ্ভুতভাবে চিকিৎসক সব দেখেশুনেই হাসপাতালে অ্যাডমিশনের তারিখটি পিছিয়ে ২২ মার্চ করে দেন। সুস্মিতা তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ''...ভুলটা ছিল ওখানেই। স্পষ্টতই ডাক্তারের ভুল। গাফিলতি। ১৯ তারিখ। সকাল থেকে বাচ্চা কোনও রেসপন্স করছিল না। আমি ডাক্তারকে ফোন করতে থাকি। ফোনে না পেয়ে মাতৃভবনে ফোন করে সোজা সেখানে চলে যাই। ডাক্তার আসেন। চেক আপ করেন। আমার বরকে বলা হয়, বাচ্চার হার্টবিট কম। ১০৩। এর পর আমাকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আবার আমার সামনে কথা হল, বাচ্চার হার্টবিট নেই। তাহলে আমার বরকে কেন বলা হল, বাচ্চার হার্টবিট ১০৩? কখন চলে গিয়েছিল আমার বাচ্চাটা? উত্তর নেই...''
আরও পড়ুন: টেলিজগতের বকেয়া পেমেন্ট ইস্যু: তিনদিনের মধ্যে এনওসি দেবেন রাণা সরকার
এর পরে সিজার করে গর্ভ থেকে বার করে নিয়ে আসা হয় তাঁর মৃত সন্তানকে। সুস্মিতা ভেবেছিলেন মেয়ে হলে নাম রাখবেন রাই। হাসপাতাল সূত্রে জানতে পারেন, তাঁর মেয়েই হয়েছিল। মৃত হলেও, সন্তানকে একবার চোখের দেখা দেখতে চেয়েছিলেন। তাঁকে দেখতে দেওয়া হয়নি। স্বামীর মুখে শুনেছেন, কেমন দেখতে ছিল সে। নিষ্ঠুরতার সেখানেই শেষ নয়, সুস্মিতা তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন যে ওই মানসিক অবস্থায় তাঁকে শুনতে হয়েছে, এমন মন্তব্য, 'গাছ থাকলে ঠিক ফল হবে!' শুধু তাই নয়, প্রথম রাতে তাঁকে কেবিন দেওয়া হয়নি। সারা রাত তিনি জেগে ঘরভর্তি অন্য় মায়েদের দেখেছেন, বাকি শিশুদের কান্না শুনেছেন।
সুস্মিতা বা তাঁর স্বামী কেউই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ নেননি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন যে ১৮ তারিখ যে গর্ভস্থ শিশুর সব রিপোর্ট স্বাভাবিক, ১৯ তারিখেই তার হার্টবিট চলে যায় কীভাবে? ফেসবুক পোস্টে সুস্মিতা লিখেছিলেন যে চিকিৎসক নাকি ঘটনার পরে একবার বলেছিলেন, বাচ্চা ওভার-ম্য়াচিওরড হয়ে গিয়েছিল। যদি সত্যিই তাই হয়, তবে তো অবিলম্বে সিজারিয়ান ডেলিভারির প্রয়োজন ছিল। গর্ভস্থ শিশু ওভার-ম্য়াচিওরড হয়ে যাওয়ার অর্থ এবার ডেলিভারির সময় হয়ে গিয়েছে। তার পরেও কেন চিকিৎসক ডেলিভারির ডেটটি দু'দিন পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, সেটাই আশ্চর্যের বিষয়।
আরও পড়ুন: ‘ভারত’ ছবি থেকে প্রিয়াঙ্কার বাদ পড়া নিয়ে অজানা তথ্য় জানালেন সলমন
এমন ঘটনাকে শুধু দুর্ভাগ্যজনক বললে কম বলা হয়। মার্চ মাসে ওই পোস্টটি দেখে সমগ্র টেলিজগত প্রায় স্তব্ধ হয়ে যায়। সুস্মিতার জন্য় চিন্তিত ছিলেন সবাই। কীভাবে তিনি এই শোক কাটিয়ে উঠবেন, সেই নিয়ে ভাবনা ছিল 'কৃষ্ণকলি' ধারাবাহিকের ইউনিটেও। কিন্তু সবাইকে অবাক করে মাত্র দেড় মাসের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন সুস্মিতা। ধারাবাহিকের পর্দায় শ্য়ামার বউদিদি মা হয়েছে। কোল জুড়ে রয়েছে ছোট্ট এক ছেলে। ভাইপোকে দেখতে ছুটে এসেছে শ্য়ামা। সে সব দর্শক দেখেছেন। যা অনেক দর্শক দেখেননি তা হল ওই এপিসোডটি নিয়ে সুস্মিতার ফেসবুক পোস্ট।
সুস্মিতা লিখেছেন, আমার পরিণতি যাই হোক না কেন, শ্য়ামার বউদিদির কী হল, তা জানতে দেখতেই হবে 'কৃষ্ণকলি'। শুধু মনের জোর দিয়ে এমনটা হয় না। এর জন্য় প্রয়োজন জীবনের প্রতি অদম্য ভালবাসা, অসম্ভব ইতিবাচক চিন্তা এবং দৃষ্টান্তমূলক পেশাদারিত্ব। সুস্মিতা এখন শুধু অভিনেত্রী হিসেবে নন, একজন দৃঢ় চরিত্রের মানুষ হিসেবেও বহু মানুষের অনুপ্রেরণা।