বিগত কয়েক মাস ধরেই টেলিপাড়ার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের একাংশ অত্য়ন্ত বিপর্যস্ত তাঁদের বকেয়া পারিশ্রমিক নিয়ে। শুধুমাত্র শিল্পীরা নন, বহু টেকনিশিয়ান বা কলাকুশলীদের পারিশ্রমিকও বাকি রয়েছে, এমনটাই জানা গিয়েছে টেলিপাড়া সূত্রে। টাকা বাকি রাখার অভিযোগ উঠেছে রানা সরকার-সহ একাধিক প্রযোজকের বিরুদ্ধে। এই তালিকায় রয়েছেন বেশ নামী-দামি প্রযোজকও। কিন্তু এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে নির্দিষ্ট সময়ে শিল্পীদের টাকা না দেওয়াই টেলিপাড়ার প্রথম সারির প্রযোজকদের সংস্কৃতি। এমন প্রযোজকও রয়েছেন যাঁদের কখনও পেমেন্ট নিয়ে কিছু বলতেই হয় না।
বকেয়া টাকা উদ্ধার নিয়ে আলোচনার সূত্রে বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী জানিয়েছেন যে টেলিপাড়ার কয়েকটি প্রযোজনা সংস্থার ক্ষেত্রে তাঁদের কখনও পারিশ্রমিক নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ে হয় চেক অথবা ব্য়াঙ্ক ট্রান্সফার মারফত টাকা পেয়ে গিয়েছেন তাঁরা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে হয়তো একমাস বড়জোর দুমাস দেরি হয়েছে কিন্তু তার বেশি দেরি হয়নি টাকা পেতে। তবে একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন, যাঁরা সরাসরি চ্য়ানেল কনট্রাক্টে রয়েছেন, তাঁদের কিন্তু পেমেন্ট বাকি থাকার সমস্য়া নেই। মূলত মুখ্য চরিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরই এই ধরনের চুক্তি রয়েছে।
আরও পড়ুন: বকেয়া টাকা নিয়ে বিপর্যস্ত টেলিপাড়া! পয়লা মে সমাধান মিলবে কি?
এই মুহূর্তে, টেলিপাড়ার সবচেয়ে বড় প্রযোজনা সংস্থাগুলি যদি ধরা যায়, তবে পেমেন্ট সংক্রান্ত বিষয়ে সবচেয়ে সুনাম রয়েছে সুরিন্দর ফিল্মস, ভেঙ্কটেশ ফিল্মস, অ্যাক্রোপলিস এন্টারটেনমেন্ট, ব্লুজ এবং টেন্ট সিনেমা-র। এই পাঁচটি প্রযোজনা সংস্থার ব্য়ানারে যেসব অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে বহুজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, এই সংস্থা বা প্রযোজকেরা শিল্পী-কলাকুশলীদের প্রাপ্য টাকা কখনও অনির্দিষ্টকাল ফেলে রাখেন না। এছাড়া এই মুহূর্তে টেলিভিশনে কোনও ধারাবাহিক না থাকলেও রাজ চক্রবর্তী প্রোডাকশন্সেরও অত্য়ন্ত সুনাম এই বিষয়ে। তা ছাড়াও আরও অনেক প্রযোজক রয়েছেন যাঁরা কখনও টাকা বাকি রাখেন না।
অ্যাক্রোপলিস এন্টারটেনমেন্ট, ভেঙ্কটেশ ফিল্মস ও টেন্ট সিনেমার একাধিক ধারাবাহিকে কাজ করেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা রাজ ভট্টাচার্য। তিনি জানালেন, পেমেন্ট নিয়ে এই তিনটি সংস্থায় কখনও কোনও সমস্য়া হয়নি। এই মুহূর্তে বাংলা টেলিভিশনের রেকর্ড টিআরপি-র ধারাবাহিক 'কৃষ্ণকলি'-র প্রযোজক টেন্ট সিনেমা। এই সংস্থা প্রযোজিত জনপ্রিয় ধারাবাহিকগুলির মধ্য়ে রয়েছে 'জয়ী' ও 'বিজয়িনী'। 'কৃষ্ণকলি'-অভিনেতা কৌশিক ভট্টাচার্যও টেন্ট সিনেমা-র কর্ণধার সুশান্ত দাসের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
আরও পড়ুন: ”আমরা তো ইতালি সরকারের দাস ছিলাম”, মন্তব্য কঙ্গনার
'বকুলকথা' ও 'ইরাবতীর চুপকথা'-র প্রযোজক, অ্যাক্রোপলিস এন্টারটেনমেন্টের কর্ণধার স্নিগ্ধা বসু সম্পর্কেও উচ্ছ্বসিত তাঁর বিভিন্ন ধারাবাহিকে অভিনয়রত শিল্পীরা। ঠিক তেমনই নিসপাল সিং রানে অর্থাৎ সুরিন্দর ফিল্মসের কর্ণধার এবং স্নেহাশিস চক্রবর্তী ব্লুজ-এর কর্ণধারও কখনও পেমেন্ট বাকি রাখেন না, এমনটাই শোনা গিয়েছে টেলিপাড়ার বিভিন্ন সূত্র মারফত। তাই টেলিপাড়ায় শিল্পী-কলাকুশলীদের টাকা বাকি রাখাই যে সংস্কৃতি বা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, এমনটা কিন্তু একেবারেই নয়।
সেই কারণেই যদি কিছু নির্দিষ্ট প্রযোজক অনির্দিষ্টকাল পেমেন্ট বকেয়া রাখেন, তখনই প্রশ্ন ওঠে কেন, কিসের জন্য, ঠিক কোন কোন চ্য়ালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন তাঁরা? এই মুহূর্তে যে প্রযোজকদের বিরুদ্ধে টাকা বাকি রাখার অভিযোগ শোনা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে একমাত্র রানা সরকার ছাড়া বাকিদের সম্পর্কে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিতে নারাজ ভুক্তভোগী শিল্পী-কলাকুশলীরা। সংবাদমাধ্যমের কাছে এই নিয়ে মুখ খুললে পেমেন্ট পেতে আরও অসুবিধে হতে পারে, এমনটাই আশঙ্কা তাঁদের অনেকের।