পনেরো বছর অতিক্রান্ত, এতদিন পরেও 'মুন্নাভাই এমবিবিএসে'র মিষ্টি, পরোপকারী গুন্ডা হিসাবেই একটা গোটা প্রজন্ম মনে রেখেছে সঞ্জয় দত্তকে। আর পুরোনো প্রজন্ম জানেন, কীভাবে তাঁর অভিনীত ছবি মানুষের কাছে সঞ্জু বাবার চিত্র পুনরূজ্জীবিত করেছে। এমনকি নব্বইয়ের এবং ২০০০-এর দশকেও কোন অ্যাকশন ফিল্ম দর্শকের ওপর এতটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। মুন্নাভাইয়ের আগে সঞ্জয় দত্তের শেষ মনে রাখার মত ছবি 'বাস্তব'। সঞ্জয়ের ভাবমূর্তি সবসময়েই ব্যাড বয়ের। এমনকি বরুন ধাওয়ানের সঙ্গে তার কমিক কেমিষ্ট্রিও সেই চিত্রে ফারাক আনতে ব্যর্থ ছিল। তবে 'মুন্নাভাই এমবিবিএস' সে সব মুছে দেয়। যেন পূর্ণজন্ম হয় সঞ্জয়ের।
সঞ্জয় দত্ত মুন্নাভাই চরিত্রকে এমনভাবে চিত্রায়িত করেছেন যেন নিজের জীবনের ভুলভ্রান্তিই শুধরাচ্ছেন তিনি। মুন্না মানুষ হিসেবে ভাল, রবিন হুডের ছাপ রয়েছে তার চলনে বলনে। সে সবার জন্য ন্যায় চায়, বাবা-মায়ের অনুভূতি যাতে আঘাত না পায় সে বিষয়ে তৎপর, ছেলেকে ভয় দেখানোর জন্য তার বাবাকে গৃহবন্দী করে তাঁর সঙ্গে ক্যারাম খেলার মতো ব্যক্তিত্ব। মুন্না গুন্ডাই, তবে শেষমেশ সবার ভাল চায়।
এই ছবি সঞ্জয়ের নিভে যাওয়া কেরিয়ারকে লাইমলাইটে এনেছিল। ছোট থেকে বুড়ো, সব ভক্তরাই ফিরে আসেন। এমনকি বিমুখ হননি তার 'খলনায়ক' দিনের ভক্তরাও। সমস্ত বিতর্ককে ছাপিয়ে তিনি দর্শকের সেই পছন্দের তারকা হয়ে সামনে আসেন। যেন রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলেন কিছু সময়ের জন্য। সিনেমার জগতে প্রত্যেক অভিনেতাকে বিভিন্ন চরিত্রের সঙ্গে মানানসই হতে হয়। কিন্তু মুন্নাভাইয়ের ক্রেজ বেড়েই চলেছিল। সেই ভালবাসা দুকূল ছাপিয়ে যায় যখন তৈরি হয় 'লাগে রহো মুন্নাভাই'। একে গুন্ডা, তারপর আবার গান্ধিজীর সর্মথক।
মুন্নাভাই রাজকুমার হিরানির পরিচালিত প্রথম ছবি। আজ তাঁকে প্রত্যেকে চেনেন, তাঁর ছবিতে একটা যাদু আছে। কিন্তু তখন একজন নবাগত নিজের প্রতিভা পৃথিবীর সামনে প্রমাণ করার মরিয়া চেষ্টায় রত। হিরানি যেভাবে কমেডি, ইমোশনকে বাস্তবের সঙ্গে মিশিয়েছেন সেটা তৎকালীন চিত্রনাট্যে খুব সুলভ ছিল না। তাঁর কমেডি সেকেলে ছিল না, নেপথ্যে উপদেশ আছে মনে হয়নি। তাই আজ পনেরো বছর পরও তাঁর ছবির সংলাপ জনপ্রিয়।
আরও পড়ুন, Sanju: মুন্নাভাইয়ের লুকে ছক্কা হাঁকালেন রণবীর
বলা হয়, একটা ছবি তখনই ক্লাসিক হয়ে ওঠে যখন তার সংলাপ এবং চিত্রায়ন স্মরণীয় হয়ে থাকে। 'মুন্নাভাইয়ে' এরকম মুহূর্তের ছড়াছড়ি। সেটা 'যাদু কি ঝাপ্পি' হোক বা 'আনন্দ ভাই'স বেড', এই ছবির ছাপ আজও অমলিন। পনেরো বছর পর রাজকুমার হিরানি সেই অভিনেতার জীবন নিয়েই ছবি বানিয়েছেন, যাঁকে তিনি প্রথম ছবিতে মুখ্য চরিত্রে নিয়েছিলেন। তারপর থেকে অনেক পরিবর্তন এসেছে। হিরানি এখন ভারতের সম্মানিত পরিচালকদের একজন। আর সঞ্জু বাবাও তাঁর রোলার-কোস্টার রাইডে চড়ে অতিক্রম করেছেন বেশ খানিকটা পথ। তবে 'মুন্নাভাই এমবিবিএস' তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। একযুগ পরেও তার ছাপ স্পষ্ট।