বাঙালির তো বারো মাসে তেরো পার্বণ, আর সেই পার্বনের মধ্যে অন্যতম পৌষ পার্বণ। শীত মানেই নতুন গুড়ের পিঠে-পুলি। ১৩ থেকে ৮৩ মেতে ওঠে পিঠে-পুলি খাওয়ার আনন্দে। সাধারণ মানুষ থেকে সেলেব প্রত্যেকের জীবনেই পৌষ পার্বণের একটা আলাদা মাহাত্ম আছে। মা-ঠাকুমাদের হাতে বিভিন্ন রকমের পিঠে খাওয়ার জন্য একেবারে মুখিয়ে থাকে সকলে। আজকের প্রজন্ম কাজের ব্যস্ততার জন্য ইচ্ছে থাকলেও হেঁসেলে গিয়ে পিঠে-পুলি করে উঠতে পারে না। তাই অগত্য ভরসা মা- ঠাকুমা-দিদিমারাই।
বাংলা ইন্ডাস্ট্রির চিত্রটাও অনেকটা সেই রকমই। সারাদিনের শ্যুটিংয়ের ব্যস্ততা সামলে পিঠে-পুলি বানিয়ে খাওয়া বা বাড়ির লোকেদের খাওয়ানোর সাধ পূরণ হয় না। টলিপাড়ায় ২০২৪-এ যাঁদের বিয়ে হয়েছে তাঁদের সঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল। বিয়ের পর প্রথম বছর তাঁরা কী ভাবে পৌষ পার্বণ পালন করছেন?
শ্রীময়ী চট্টরাজ
পৌষ মাসে আমাদের বাড়িতে লক্ষ্মী পুজো হয়। লক্ষ্মী আগলানোর একটা রীতি আছে। এটাকে পৌষ আগলানোও বলে। সারা রাত লক্ষ্মীকে আগলে রাখি। সেই নিয়ম মেনেই সোমবার পৌষ মাসের পূর্ণিমায় আমাদের বাড়িতে লক্ষ্মী পুজো হল। পূর্ণিমায় যেমন লক্ষ্মীর ঘট পেতে পুজো হয় আমাদের বাড়িতেও সংক্রান্তির আগের দিনই সেটাই হল। সেই সঙ্গে পিঠে, কড়াইশুটির কচুরি, আলুর দম এইগুলো হয়েছে। সংক্রান্তির আগের দিনই আমরা সব বানিয়ে রাখি। সংক্রান্তির দিন কিছু বানানো হয় না। আজ গঙ্গাস্নান করলাম।
কৌশাম্বী চক্রবর্তী
শ্যুটিং সামলে বাড়ি এসে পিঠে-পুলি বানানোটা সত্যিই একটু অসুবিধা হয়ে যায়। পৌষ পার্বণ উপলক্ষ্যে তো শ্যুটিং বন্ধ থাকে না। তাই এখনও পর্যন্ত কোনও প্ল্যান করিনি। তাছাড়া এই বছরটা আমার কাছে একটু বিষাদের। মা-ও চলে গেলেন! আগে আমি কখনও পিঠে-পুলি বানাইনি। তবে পায়েস বানিয়েছি। দেখি, কাজ সামলে যদি কিছু করতে পারি।
রূপাঞ্জনা মিত্র
কাজের খুবই ব্যস্ততা রয়েছে। অনেক কাজ পেন্ডিং রয়েছে। আজ তো পূর্ণিমা। তাই বাড়িতে যা নিয়ম পালন সেটা করছি। পৌষ সংক্রান্তিটা সকলের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে এই দিনটার একটা বৈজ্ঞানিক ব্যখাও কিন্তু, আছে। আমি চেষ্টা করব সবটা সামলে যদি একটু কিছু বানানো যায়। আমার ছেলে রিয়ান পাটিসাপটা একটু ভালবাসে তবে পিঠে-পুলি বিষয়টা এখনও সেভাবে বোঝে না। মা বা শাশুড়ি যদি করে পাঠিয়ে দেন তাহলে তো খুবই ভাল। আসলে আমাকে যদি কেউ বানিয়ে একটু খাওয়ায়...(হাসি)। রাতুলও এখন বাড়ি নেই। গঙ্গাসাগরের ওখানে দু-দিনের ছুটিতে গিয়েছে।
রূপসা চট্টোপাধ্যায়
আমি পিঠে-পুলি সত্যিই বানাতে পারি না। তবে পাটিসাপটা আমার খুব প্রিয়। গত বছর আঙ্কেল (সায়নের বাবা) আমাকে পাটিসাপটা বানিয়ে খাইয়েছেন। এই বছরও আমি পাটিসাপটা খাওয়ার আবদার করেছিলাম। কিন্তু, আমার শাশুড়ি মায়ের পায়ে অপারেশন হয়েছে। তাই সায়নের ঠাকুমা অনেক রকমের পিঠে আমাকে বানিয়ে দেবেন। আমার বাপের বাড়িতে পিঠে-পুলির বড় আয়োজন হয়। ছোটবেলা থেকে দেখেছি ঠাকুমা অনেকরকম পিঠে, দুধ পুলি বানাতেন। এবছর সায়নের ঠাকুমা বানাবেন আর আমাদের খাওয়ার প্ল্যানিং রয়েছে (হাসি)। এই বছর যেহেতু আমি প্রেগন্যান্ট তাই সবাই আমাকে ভাল-মন্দ খাওয়াচ্ছে।
পায়েল দেব
আমার শ্বশুরবাড়ি যেহেতু পঞ্জাবি তাই সেভাবে পিঠে-পুলির ব্যাপারটা তো নেই। তবে সংক্রান্তির দিন আমার শ্বশুরবাড়িতে একটা পুজো হয়। বিয়ের পর আমি প্রথমবার দেখব কেমন পুজো হয় এখানে। পৌষ পার্বণ উপলক্ষ্যে আমার বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে কিছু তত্ত্ব আসবে। যেমন নতুন গুড়, শাড়ি আরও বেশ কিছু জিনিস। বাপের বাড়িতে তো রীতি মেনেই সংক্রান্তি পালন হয়। কিন্তু, এবার তো আমি আর যেতে পারব না।