সুজিত সরকারের ছবি 'গুলাবো সিতাবো'-তে গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ফত্তো বি বা বেগম, ফতিমা মহলের ৯৫ বছরের মালকিন। বয়স যাই হোক, জীবনীশক্তিতে ভরপুর ফতিমা। স্বামীর উপর নির্ভরশীল নয়, পুরোপুরি আপন মেজাজে চলে, সংসারের টাকা-পয়সা সব তার দখলে। এই চরিত্রটি জীবন্ত হয়ে উঠেছে বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ফারুখ জাফরের অভিনয়ে। বয়স আশির কোঠায়, তবু অভিনয়ের প্রতি ভালবাসায় এখনও কাজ করে চলেছেন।
অনেক দর্শকই সম্ভবত 'গুলাবো সিতাবো'-তে প্রথম ফারুখ জাফর-কে খেয়াল করলেন অথচ তাঁর অভিনয় জীবন প্রায় চার দশকের। 'উমরাও জান', 'স্বদেশ', 'পিপলি লাইভ', 'সুলতান', 'সিক্রেট সুপারস্টার' ও 'ফোটোগ্রাফ'-- ফারুখ জাফর অভিনীত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছবি। 'গুলাবো সিতাবো'-র সাফল্যে অত্যন্ত খুশি ফারুখ, জানালেন দূরভাষে। ''খুব ভাল লাগছে'', কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন অভিনেত্রী, ''আমি ভাবতেই পারিনি সবাই ছবিতে আমাকে এত পছন্দ করবেন। আমার চরিত্রটা ভাল লেগেছিল, আমি হ্যাঁ বলেছিলাম।''
আরও পড়ুন: টলিপাড়ার স্বজনপোষণ বিতর্ক: জবাব দিলেন কি স্বস্তিকা?
এই চরিত্রের জন্য অডিশন ভিডিওটি শুট করে সুজিত সরকার ও জুহি চতুর্বেদীকে পাঠিয়েছিলেন তাঁর মেয়ে মেহরু জাফর। দুজনেরই ভিডিও ক্লিপটা খুব পছন্দ হয়। সুজিত ও জুহির সঙ্গে প্রথম মিটিংয়ের অভিজ্ঞতার কথাও জানালেন ফারুখ-- ''সুজিত আর জুহি ফোন করে বলেছিল আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়। তার পর ওরা লখনউতে আমার বাড়ি আসে। এত সুন্দর করে আমাকে বুঝিয়েছিল চরিত্রটা, আমি সঙ্গে সঙ্গেই চরিত্রের ভিতরে ঢুকে যাই।''
তবে 'গুলাবো সিতাবো' ছবিতে কাজ করার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল অমিতাভ বচ্চন, সেকথাও নিজেই জানিয়েছেন ফারুখ। বিগ বি-র বড় গুণমুগ্ধ তিনি। তাঁর সব ছবি দেখেছেন। মেগাস্টারের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা যদিও তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। ফারুখ বলেন, ''কোনও অভিজ্ঞতাই নেই। উনি আসতেন, নিজের পার্টটা করতেন, চলে যেতেন। আমার একটু ইচ্ছে হতো যদি পাশে বসে দুটো কথা বলেন। তেমন কোনও সুযোগই দিলেন না।''
দীর্ঘ কয়েক দশকের অভিনয় জীবন ফারুখ জাফরের। তাঁর প্রথম ছবি ছিল 'উমরাও জান', যেখানে রেখা-র মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। সেই সময় জাভেদ আখতারকে ডাকতেন জাদু নামে। প্রায় ৪০ বছর পরে 'সিক্রেট সুপারস্টার'-এর স্ক্রিনিংয়ে রেখা-র সঙ্গে আবার দেখা হয় তাঁর। ''ও যেই জানতে পেরেছে আমি এসেছি, সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এল আমার কাছে। বলল আমিই কিন্তু তোমার বড় মেয়ে, তোমার নিজের মেয়ে।''
আরও পড়ুন, ‘পেহলা নাশা’র সেই চকোলেট বয় আজ চুলে পাক ধরা বাবা!
শাহরুখ খানের সঙ্গে ফারুখ জাফর কাজ করেছিলেন 'স্বদেশ' ছবিতে। দুজনে পঞ্চগনিতে একই হোটেলে ছিলেন পাশাপাশি দুটি ঘরে। ঘরের সুইচবোর্ড খুঁজে পাচ্ছিলেন না অভিনেত্রী, তখন শাহরুখই তাঁকে সাহায্য করেন। সেই ঘটনার কথাও জানিয়েছেন ফারুখ। ''আমার কী লজ্জা করছিল যে এই সহজ জিনিসটা আমি পারলাম না। কী না কী ভাববে আমার সম্পর্কে'', বলেন ফারুখ, ''কিন্তু ভারি মিষ্টি মানুষ। ওই ঘটনার পরে তো আমাদের বন্ধুত্ব হয়ে গেল, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়াও করতাম।
সলমন খানেরও প্রশংসা করেছেন ফারুখ। 'সুলতান'-এর সেটে অভিনেতা খুবই যত্ন করেছেন, এমনটই জানালেন তিনি। তবে সুপারস্টারের প্রতি একটা অনুযোগও আছে-- ''আমি সলমনকে বলেছিলাম লখনউ এসে বিরিয়ানি খেয়ে যেতে হবে। এখনও আসেনি। 'সুলতান'-এ বিয়ের সিনের শুটিংয়ে সময়ে আমি সলমনকে বলেছিলাম আশীর্বাদ করি তোমার যেন তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যায়। সেকথা শুনে আমাকে বলল, ''কেন মিছিমিছি অভিশাপ দিচ্ছ!''
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন