/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/06/cats-2025-09-06-13-22-39.jpg)
কেমন হল দ্য বেঙ্গল ফাইলস?
The Bengal Files: প্রথমেই বলে নেওয়া যাক যাঁরা গোপাল পাঠা তথাকথিত 'বুচার অব বেঙ্গল'- এর বিষয়ে বিশদে জানতে চাইছেন তারা হতাশ হবেন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমরা শুনে আসছি কী ভাবে বিবেক অগ্নিহোত্রীর 'দ্য বেঙ্গল ফাইলস' এক বিস্মৃত অধ্যায়কে সামনে এনেছে। যেখানে গোপাল চন্দ্র মুখার্জি ওরফে পাঠা, একজন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা। ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে-তে কলকাতাকে পাকিস্তানের দখল থেকে বাঁচিয়েছিলেন।
প্রথম অংশটা সঠিক। হ্যাঁ, সাড়ে তিন ঘণ্টার এই ছবিতে স্বাধীনতার আগে ও পরে অনেক ইতিহাসকে তুলে ধরা হয়েছে। এক পাশে গান্ধী অন্য পাশে জিন্নাহ এবং অনিচ্ছুক ব্রিটিশদের প্রস্থানকালে পাকিস্তানের দাবিকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই সময়ই ঘটে গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস। তিন দিন ধরে পুলিশকে চোখে বন্ধ করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। আর হিন্দুদের টার্গেট করে মুসলিম লীগের নেতা সোহরাবউদ্দিনের ছত্রছায়ায় দাঙ্গা চলতে থাকে। বহু ঐতিহাসিক সূত্র অনুযায়ী, পাঠার সক্রিয় হস্তক্ষেপ না হলে কলকাতা ধ্বংস হয়ে যেত। কিন্তু পাঠা ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র নয়। তিনি ঢুকে পড়েন। নিজের লোকজনকে জড়ো করে স্লোগান দেন।
'ওরা যদি একজনকে মারে, তোমরা দশজনকে মারো।' তারপর হঠাৎই মিলিয়ে যান। অথচ পাঠার বংশধরেরা দাবি করেন, তিনি বহু মুসলমানের জীবনও রক্ষা করেছিলেন। কারণ তাঁর উদ্দেশ্য ছিল প্রিয় শহরটিকে অক্ষত রাখা। কিন্তু ছবিতে তাঁর সেই ভূমিকাকে উপযুক্ত মর্যাদা দেওয়া হয়নি। আসলে ছবির গল্প অন্য দিকে মোড় নেয়। অতীত থেকে বর্তমানের দিকে। পরিচালক দেখাতে চান, ১৯৪৭-এ দেশভাগ থেমে যায়নি। ধর্ম এখনও রাজনৈতিক অস্ত্র হয়ে আছে। বারবার উচ্চারিত হয় 'We, the people of India'। আমরা ভারতের জনগণ এখনও ভুগছি।
বাংলার গৌরব নিয়ে বক্তৃতায় শোনা যায় 'যা বঙ্গ চিন্তা করে, ভারত তা পরে চিন্তা করে'। ভারতী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে শোনা যায় এই বিশেষ লাইন। যিনি তখনকার দাঙ্গা প্রত্যক্ষ করেছিলেন এবং বর্তমান কালে বৃদ্ধা (পল্লবী যোশী) হয়ে মুর্শিদাবাদের এক তরুণীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু এই দুই গল্পের মধ্যে যোগসূত্র কী? সেখানেই ছবির দুর্বলতা। ঢিলেঢালা, বিভ্রান্তিকর উপস্থাপনা। বর্তমান কালে এক আইপিএস অফিসার (দর্শন কুমার) নিখোঁজ কেসের তদন্তে নামেন যার মাধ্যমে ফিরে যাওয়া হয় ১৯৪৬-এর সেই রক্তাক্ত আগস্টে। গান্ধী (অনুপম খের) দেখানো হয় অসহায়, 'দুর্বল' ও 'ভুল'। সাম্প্রতিক প্রোপাগান্ডা ছবিগুলির মতো এখানেও একই বক্তব্য।
অভিনয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অতিরঞ্জিত। মিঠুন চক্রবর্তী, এক মাতাল প্রাক্তন পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। দাঁড়িয়ে আছেন প্রতিরোধকারীদের করুণ পরিণতির প্রতীক হয়ে। বর্তমান বাংলায় পুলিশকে দেখানো হয় মুসলিম নেতার তোষণ করতে ব্যস্ত, আর কেবলমাত্র ভারতী দেবী ও সৎ অফিসার শিব পণ্ডিতের মতো হাতে গোনা মানুষ জনগণের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। শিবের চরিত্র আবার কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উচ্ছেদকেও স্মরণ করিয়ে দেয়। স্পষ্ট ইঙ্গিত আগের ছবি দ্য কাশ্মীর ফাইলস-এর প্রতি।
সহিংসতার চিত্রায়ণ ভয়ংকর। নারীদের ছিন্নভিন্ন দেহ ঝুলছে কসাইখানায়, পুরুষদের টুকরো করা হচ্ছে। আসল ‘বুচার অব বেঙ্গল’ হয়ে ওঠেন গুলাম সরওয়ার হুসেইনি (নমাশি চক্রবর্তী)। তাঁর বর্তমান অবতার রাজনীতিক সরদার হুসেইনি (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়)। আগেকার দিনে তিনি হিন্দু জনতাকে দমন করতে সহিংসতা ব্যবহার করতেন এখন ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের’ পরিচয়পত্র দিয়ে ভোটব্যাঙ্ক গড়ে তুলে এই কথা বারবার শোনানো হয়।
আরও পড়ুন বক্স অফিসে ধরাশায়ী বিবেকের 'দ্য বেঙ্গল ফাইলস', প্রথম দিনে বক্স অফিস আয় কত?
সবকিছুর শেষে বার্তাটা স্পষ্ট। Turbulent History সিনেমায় আনা যাবে কিন্তু সেটা শিল্প তখনই হয় যখন সেটা দর্শকের মনে চিন্তার খোরাক তৈরি করে। গোপাল পাঠা যদি সত্যিই মুসলমানদেরও রক্ষা করে থাকেন সেটাও ছবির অংশ হওয়া উচিত ছিল। আর মুক্তির সময়টাও প্রশ্ন চিহ্নের মুখে। সামনেই নির্বাচন আর সিনেমায় ভোটব্যাঙ্ক ও জনসংখ্যা পরিবর্তনের প্রসঙ্গ ঘুরে ফিরে আসছে।ছবিতে বারবার প্রশ্ন করা হয় 'আমরা এখনও হিন্দু-মুসলমান করছি কেন?' উত্তরটা ছবির ভেতরেই লুকিয়ে আছে।