সঞ্জয় লীলা বনশালির সিনেমা মানেই চোখ ধাঁধানো সেট, জমকালো পোশাক, লার্জার দ্যন লাইফ গোছের তারকাখচিত প্রতিটা ফ্রেম। সঙ্গে বলিউডের প্রথমসারির একাধিক তারকামুখের ঝলক। যেন শিল্পকলা, সৃজনশীলতার এক অনন্য প্রতীক বনশালি সাহেবের সিনেমাগুলো। যেখানে শুধু সৃষ্টি-কলা নয়, সৌন্দর্য্যের এক অন্য সংজ্ঞাও ধরা পড়ে। পরিচালনার পাশাপাশি তিনি নিজে সেটের প্রত্যেকটা খুঁটিনাটি বিষয়ে কড়া নজর রাখেন। কিন্তু প্রতিটা সিনেমায় কীভাবে এতটা সৃজনশীলতা ফুটিয়ে তোলা সম্ভব?
বর্তমানে যদিও খুব একটা সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হতে চান না তিনি, তবে বছর খানেক আগে এক সাক্ষাৎকারে বনশালি নিজেই সেই রহস্য ফাঁস করেছিলেন। বলেছিলেন, শৈশবে এত অভাব, দারিদ্র্যে ভুগেছেন যে, সেই থেকেই নিজের সিনেমার প্রত্যেকটা ফ্রেমকে তিনি সুন্দরভাবে তুলে ধরার কথা মাথায় আসে।
সৌন্দর্য্যের এই খিদে কোত্থেকে এল? জিজ্ঞেস করা হয়েছিল বনশালিকে। সেই প্রেক্ষিতেই পরিচালক বলেছিলেন, "শৈশবের অভাব, দারিদ্র্য, দুঃখ-কষ্ট থেকে। খুব ছোট্ট একটা ছাপোষা ঘরে থাকতাম। দেওয়ালে তখন রং করানোর মতো টাকাও ছিল না। যেন শ্বাস নিতেও অসুবিধে হত। মা খুব ভাল নৃত্যশিল্পী ছিলেন। ওই ছোট্ট ঘরেই মাকে নাচতে দেখতাম। পরার মতো কোনও ভাল পোশাকও ছিল না আমাদের। শৈশবে অনেক জিনিস থেকেই বঞ্চিত হয়েছি। আর মন থেকে আমি সবসময়েই একজন সিনেপরিচালক ছিলাম। ছোটবেলায় যখন ঘরে বসে হোমওয়ার্ক করতাম, বসে বসে ভাবতাম ওই দেওয়ালটায় কোন রং ভরলে ভাল লাগবে। চারপাশে এতটাই সৌন্দর্যের অভাব বোধ করতাম যে সেই সময় থেকেই সৌন্দর্যের প্রতি একটা আলাদা ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আর সেটাই সিনেমায় প্রতিফলিত হয়। এই যেমন ধরুন আমার সেট ডিজাইনিংয়ে। এত বিশালাকার, ঝকঝকে সেটের ধারণা শৈশবের সেই অভাববোধ থেকেই তৈরি হয়েছে।"
<আরও পড়ুন: হিন্দুত্ববাদীদের রোষে কেরিয়ার খতম! মুনাবর ফারুকিকে জেলে পুরবেন কঙ্গনা রানাউত>
আমার মনে হয়, "প্রতিটা শিল্পীর-ই জীবনে কোথাও না কোথাও বঞ্চনার শিকার হওয়া উচিত। সেই বঞ্চনা থেকেই শিল্পী তাঁর সৃজনশীলতার হদিশ পায়", মন্তব্য পরিচালকের।
প্রসঙ্গত, ছোটবেলায় মুম্বইয়ের এক চাউলেই স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে বেড়ে ওঠা বনশালির। শৈশবে যে জিনিসগুলো থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, নিজের সিনেমার মধ্য দিয়ে সেই অভাবগুলোকেই পূরণ করার চেষ্টা করেন তিনি। এমনকী, তাঁর সিনেমার গল্প লেখক বন্ধু প্রকাশ রাঞ্জিত কাপাডিয়াও সেই চাউলেই বনশালির প্রতিবেশী ছিলেন। কিন্তু শৈশবে তার সঙ্গে আলাপ হয়নি। পরে দেবদাস করার সময় একে-অপরের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পড়েন।
উল্লেখ্য, 'হাম দিল দে চুকে সনম', 'ব্ল্যাক', 'দেবদাস', 'গুজারিশ', 'বাজিরাও মাস্তানি', 'রামলীলা' থেকে শুরু করে 'পদ্মাবত', প্রত্যেকটা সিনেমার দৃশ্যেই বনশালি নিজস্ব সৃজনশৈলীর ছাপ রেখেছেন। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে তাঁর পরিচালিত 'গাঙ্গুবাঈ কাঠিয়াওয়াড়ি'। ইতিমধ্যেই কামাথিপুরার ডাকসাইটে গণিকা, যিনি কিনা ষাটের দশকে মুম্বইয়ের মাফিয়া ক্যুইন নামে খ্যাত ছিলেন, তাঁর ভূমিকায় বনশালির পরিচালনায় অভিনয় করে ট্রেলার উত্তেজনার পারদ চড়িয়েছেন আলিয়া ভাট।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন