পদবীর জন্যই কি বারবার শাহরুখ খানের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন ওঠে? দীর্ঘকাল ধরেই এই প্রশ্ন ভাবিয়ে এসেছে কিং-অনুরাগীদের। বহুবার শাহরুখকে শিখণ্ডী করেছে এই সেক্যুলার দেশেরই জনগন। ধর্ম নিয়ে কটাক্ষও শুনতে হয়েছে। একটা সময় ছিল যখন দেশের সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে দিলখোলাভাবে মন্তব্য পেশ করতেন শাহরুখ (Shah Rukh Khan)। তবে ২০১০ সালের পর থেকেই খানিক তটস্থ থাকেন। এই বুঝি মুখ খুললেই বিতর্কে জড়াতে হয়! তবে শাহরুখের দেশপ্রেম নিয়ে যতই বিতর্ক, সমালোচনা হোক না কেন, এখনও বিদেশের মানুষের কাছে বলিউড মানেই যে কিং খান, তার প্রমাণ তাঁকে ঘিরে দুনিয়াজোড়া ভক্তদের উন্মাদনা। আজ কিং খানের জন্মদিনে রইল অজানা তথ্য।
পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের হয়ে শাহরুখ (SRK Birthday) একবার আওয়াজ তুলেছিলেন। আইপিএল-এর গোড়ার দিক তখন। আইপিএল-এর নিলাম অনুষ্ঠান থেকে বাদ পড়েছিলেন পাক-ক্রিকেটাররা। তখনই কিং খান প্রশ্ন তোলেন, 'যে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা কেন আইপিএলে খেলতে পারবেন না?' যার জেরে কম ভুগতে হয়নি শাহরুখ খানকে। আবারও তার পদবীকে হাতিয়ার করে পুরনো ক্ষোভ উগরে দেওয়া হয় 'মাই নেম ইজ খান' রিলিজের সময়।
বেজায় বিতর্কে জড়ান কিং খান। শিবসেনা অভিনেতার আইপিএল মন্তব্যকে হাতিয়ার করে 'মাই নেম ইজ খান' ছবি বয়কটের ডাক দেয়। সেই সিনেমার প্রচারের সময়ই শাহরুখ বলেছিলেন, "নিজের মাতৃভূমিকে কে কতটা ভালবাসে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই অনুচিত। মাতৃভূমির প্রতি ভালবাসা কাউকে বোঝানোর প্রয়োজন পড়ে না। তবে আমার বাবা যেহেতু স্বাধীনতা যোদ্ধা, তাই নিয়ে আমি ভীষণ গর্বিত। আমি গর্বিত যে আমি একজন ভারতীয়।"
স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের সম্মান হিসেবে শাহরুখ খানের বাবা মীর তাজ মহম্মদ (Meer Taj Mohammed Khan) তাম্রপত্রও পেয়েছিলেন। শাহরুখ যে বাবার সেই সম্মান নিয়ে বেজায় গর্বিত সেকথাও জানান তখন। তবে অনেকেরই অজানা যে শাহরুখের আরেক পূর্বপুরুষ শাহনওয়াজ খানও (Shah Nawaz Khan) স্বাধীনতা সংগ্রামী। নেতাজির খুবই প্রিয় পাত্র।
<আরও পড়ুন: ফের কাশ্মীরি পণ্ডিত খুন! সোপিয়ান-‘সন্ত্রাসবাদে’ গর্জে উঠলেন ভরত কল>
১৯৪৫ সালে লাহোরের মিন্টো পার্কে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির তিন সৈনিক আওয়াজ তুলেছিলেন-"চালিশ করোরো কি আওয়াজ, শেহগাল-ধিলোন-শাহনওয়াজ…" আজাদ হিন্দ বাহিনীর মেজর ছিলেন এই শাহনওয়াজ। যিনি শাহরুখের মা লতিফ ফাতিমা খানকে দত্তক নেওয়ার পাশাপাশি মীর তাজ মহম্মদের সঙ্গে বিয়েও দেন নিজে হাতে। সেই সূত্রেই তিনি শাহরুখ খানের দাদু। এই শাহনওয়াজই লালকেল্লা থেকে প্রথম ব্রিটিশ পতাকা ছুঁড়ে ফেলে সেখানে তিরঙ্গা জাতীয় পতাকা উড়িয়েছিলেন। শুধু তাই নয়..
শাহনওয়াজের নেতৃত্ব ও বক্তৃতা দেওয়ার ক্ষমতাও ছিল অসাধারণ। তাই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর লালকেল্লায় লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শোয়ে নেতাজির পাশাপাশি শোনা যেত শাহরুখের দাদুর দৃঢ়-কণ্ঠী বক্তৃতাও। দেশভাগের সময় গোটা পরিবার ফেলে ভারতে চলে আসেন তিনি। স্বাধীন দেশে উত্তরপ্রদেশের মেরঠ থেকে তিনবার নির্বাচনে জেতেন শাহনওয়াজ। মন্ত্রীত্বও পান। তবে ১৯৬৫ সালে ভয়ঙ্কর কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যান। সেইসময়ে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধে শাহনাওয়াজের ছেলে মেহমুদ ছিলেন পাক-সেনাদলের আধিকারিক। খবর রটতেই তাঁকে নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন