Sunny Deol and Dharmendra: বলিউড ও রাজনীতি সম্পূর্ণ আলাদা দুই ময়দান। টিকে থাকার লড়াইটা আলাদা। সাফল্য়ের সমীকরণও আলাদা। আশির দশকে সানি দেওল পা রাখেন বলিউডে। প্রায় তিন দশক পাওয়া গিয়েছে 'হিরো' সানি দেওলকে। কিন্তু মিলেনিয়ামের এক দশক পেরোতে না পেরোতেই তাঁর নায়ক-অভিনেতা কেরিয়ারের ছন্দপতন ঘটে। ২০১১ সালের পর থেকে বলিউডে আর তেমন কোনও ছাপ রাখতে পারেননি সানি। এই বছর পরিচালক হিসেবে চলছে তাঁর 'পল পল দিল কে পাস' ছবির কাজ। এর মধ্য়েই রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়লেন সানি। তিনি কি পারবেন এই নতুন ময়দানে উল্লেখযোগ্য জায়গা তৈরি করতে? তাঁর বাবা ধরম সিং দেওল (ধর্মেন্দ্র) কিন্তু রাজনীতির ময়দানে খুব বেশিদিন সাফল্য়ের সঙ্গে টিঁকে থাকতে পারেননি।
২০০৪ সালে বিকানের সিট থেকে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ধর্মেন্দ্র। নির্বাচিত হয়ে লোকসভার সদস্য় হিসেবে ২০০৯ পর্যন্ত কাজ করেন। কিন্তু সাংসদ হিসেবে তাঁকে বেশ অসফলই বলা যায়। বরং নির্বাচনের ঠিক আগেই একটি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে তিনি নাকি বলেছিলেন যে পাঁচ বছরের মেয়াদ নয়, তাঁকে আজীবন একনায়ক হিসেবেই দায়িত্ব দেওয়া উচিত। তবেই গণতান্ত্রিক আচরণ বলতে আসলে কী বোঝায়, মানুষকে সেই শিক্ষা দিতে পারবেন তিনি। তবে এ বিতর্কের খুব একটা প্রভাব পড়েনি নির্বাচনে বোঝাই যায় কারণ শেষ পর্যন্ত ওই সিটে তিনিই বিজয়ী হন। শোনা যায় যে তিনি তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদকালে সংসদে হাজিরা দিয়েছেন কালেভদ্রে। যখনই সংসদ অধিবেশন বসেছে, বেশিরভাগ সময়ে তিনি শ্যুটিং অথবা তাঁর ফার্মহাউস নিয়ে ব্য়স্ত থেকেছেন।
আরও পড়ুন: সত্যজিতের জীবনে ইন্দিরা গান্ধী ও মারির ভূমিকা ঠিক কী?
লেগাসি বড় বিচিত্র বস্তু। কেউ ভাল কাজ করলে যেমন তার পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আরও ভাল কাজের আশা থাকে। কেউ তেমন ভাল কিছু না করলে বা 'খারাপ' কাজ করলে কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আরও খারাপ কিছুর আশা থাকে না! বরং উল্টোটাই আশা করে বসেন মানুষ। তাই ধর্মেন্দ্র রাজনীতির ময়দানে খুব একটা সফল হননি বলে বা সাংসদ হিসেবে তেমন কোনও ছাপ রেখে যেতে পারেননি বলে সানি-ও পারবেন না এমনটা ভাবা যুক্তিযুক্ত নয়। বলিউড কেরিয়ারের দিকটি যদি দেখা যায় তবে ধর্মেন্দ্র বলিউড লেজেন্ড, সানি কিন্তু তাঁর অভিনয় কেরিয়ারে কখনও লেজেন্ড হতে পারেননি। প্রথম সারির নায়ক থেকে দ্বিতীয় সারির নায়ক থেকে আরও পিছিয়ে পড়েছেন। অর্থাৎ অভিনয়ের কেরিয়ারে বাবাকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি সানি। রাজনীতির কেরিয়ারে পারবেন কি?
বলিউড থেকে তো কম তারকা রাজনীতিতে আসেননি। নারগিস, সুনীল দত্ত থেকে কিরণ খের, জয়া বচ্চন, ধর্মেন্দ্র, হেমা মালিনী-- তালিকাটি বেশ লম্বা। এর পরেও রয়েছেন অপেক্ষাকৃত কম খ্য়াতিসম্পন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রী-প্রযোজক-কলাকুশলীরা। কিন্তু এই দ্বিতীয় স্তরের প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আসা-না আসা নিয়ে সাধারণ মানুষ অতটাও মাথা ঘামান না। সাধারণ মানুষ, যাঁরা কি না আবার বলিউড ছবির দর্শকও, তাঁরা বিচলিত, উৎসাহিত অথবা ক্ষুব্ধ হন তারকাদের রাজনৈতিক অনুমোদন নিয়ে। কোন তারকা কোন শিবিরে গেলেন, কেন গেলেন, কে বা কারা তাঁকে সেই দিকে নিয়ে গেলেন, আলোচনা ঘুরতে থাকে, চলতে থাকে।
আরও পড়ুন: অভিযোগ ইসলাম-বিরোধী মন্তব্য! ক্ষমা চাইতে হল বাংলাদেশের অভিনেত্রীকে
অজয় সিং দেওল (সানি দেওল)-ও তাই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। গত সপ্তাহেই বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেন সানি। তখনই বোঝা গিয়েছিল যে শুধু বলিউড কেরিয়ার নয়, রাজনীতির ময়দানেও বাবার দেখানো পথেই হাঁটতে চলেছেন তিনি। ২৩ এপ্রিল দিল্লিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপি শিবিরে এলেন। শোনা গিয়েছে, পঞ্চাবের কোনও সিট থেকেই নির্বাচনে দাঁড়াবেন তিনি। আশা করা যায়, নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে 'গদর' বা 'যো বোলে সো নিহাল'-এর কোনও সংলাপ বললেও বাবার মতো একনায়কতন্ত্রের ধ্বজা তুলে ধরবেন না! গণতান্ত্রিক নির্বাচনের কোনও প্রার্থীর ক্ষেত্রে এর চেয়ে বড় বিরোধাভাস আর কিছু হয় না!