Bengali Serial Alochhaya Review: ছোটদের মুখে ভারী সংলাপ, পরিবারের সদস্যদের কূটকচালি, ভারতীয় টেলিড্রামার সব বৈশিষ্ট্যই রয়েছে 'আলোছায়া' ধারাবাহিকে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে সংস্কারমুক্ত শিক্ষার আলো দেখানোর প্রচেষ্টা রয়েছে। জি বাংলা-র ধারাবাহিক 'আলোছায়া'-র সম্প্রচার শুরু হওয়ার আগে প্রযোজক-চিত্রনাট্যকার সুশান্ত দাস ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানিয়েছিলেন, বর্তমান সমাজে শিক্ষার গুরুত্ব কতখানি এবং অভিভাবকত্ব বলতে কী বোঝায়, সেই প্রশ্নের সন্ধান করবে এই ধারাবাহিক। খনও পর্যন্ত গল্প যতদূর এগিয়েছে, তাতে এই ভাবনার প্রতিফলন বেশ স্পষ্ট। স্কুল-কলেজের পাঠক্রমের পড়াশোনার পাশাপাশি সার্বিক ভাবে শিক্ষিত হয়ে ওঠার প্রসঙ্গটিও রয়েছে ধারাবাহিকের গল্পে।
গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র আলো ঘটনাচক্রে আশ্রিত এমন একটি বাড়িতে যেখানে বিভিন্ন ধরনের চরিত্রের বাস। বিদ্বান, জ্ঞানী, শিক্ষার প্রসারে ব্রতী এমন মানুষও রয়েছে আবার জ্ঞান নেই, শিষ্টাচার নেই, কোনও রকম মূল্যবোধও নেই-- এমন চরিত্রের উপস্থিতিও খুব প্রখর। ঠিক যেমন সমাজে আমাদের বাস, তারই একটি খণ্ডচিত্র ধরা পড়ছে ধারাবাহিক। সেই প্রতিফলনের মধ্যে চিরাচরিত ক্লিশে রয়েছে ঠিকই, তবু ধারাবাহিকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ সংবেদনশীল এবং সৎ দর্শকের মনে খুবই যুগোপযোগী কিছু প্রশ্ন তুলতে সক্ষম এই ধারাবাহিক--
আরও পড়ুন: Mitin Mashi Review: ছবি মনোরঞ্জক কিন্তু গল্পের মিতিনের চেয়ে অনেকটাই আলাদা
১) ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বা সরকারী অফিসার হওয়াই কি সন্তানের সাফল্যের লক্ষণ? তবে অমিতাভ বচ্চন, ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় থেকে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী গণেশ পাইন কি জীবনে অসফল?
২) ডিগ্রির সঙ্গে শিক্ষার সম্পর্ক কি সব সময় সমানুপাতিক? অর্থাৎ যে মানুষ যত বড় ডিগ্রিধারী, সেই মানুষ কি তত বড় শিক্ষিত? বিরাট ডিগ্রি কিন্তু অসৎ ও মানবিক মূল্যবোধহীন মানুষকে কি শিক্ষিত বলা চলে?
৩) স্কুল-কলেজের পাঠক্রম কি আসলে সন্তানের উপর চাপিয়ে দেওয়া বোঝা নাকি তার মনের অজস্র জানালা খুলে দেওয়ার চাবিকাঠি?
ধারাবাহিকটি মন দিয়ে দেখলে এমন অজস্র প্রশ্ন উঁকি দেবে এবং সৎ দর্শক কিন্তু তাঁর নিজের অথবা তাঁর কাছের বহু মানুষের প্রতিবিম্ব দেখবেন ধারাবাহিকের চরিত্রগুলিতে। এবার আসা যাক ক্লিশের প্রসঙ্গে। বাংলা ধারাবাহিকের কয়েকটি বহুল-প্রচলিত ফর্মুলা রয়েছে, তার কিছু কিছু এই ধারাবাহিকে বর্তমান। যেমন মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে থাকতে আসা মহিলারা বিদ্বেষ-পরিপূর্ণ এবং কুচক্রী, আবার তারই দুই মেয়ের মধ্যে একজন অতিরিক্ত ভালো আর অন্যজন অতিরিক্ত খারাপ। তাছাড়া ছোটদের মুখে এমন কিছু ভারী এবং পরিশীলিত সংলাপ দেওয়া হয় কখনও কখনও যে তা একটু অস্বস্তিকর লাগে।
আরও পড়ুন: দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক: সবটাই ছিল কিন্তু মন ভরল না
কিন্তু যে চারটি কারণে এই ধারাবাহিকের প্রশংসা করা যায়, সেগুলি একে একে বলা যাক--
প্রথমত, ধারাবাহিকের চলন বেশ কৌতূহলোদ্দীপক এবং গতিময়। প্রতি দু-তিনটি এপিসোডেই নিত্যনতুন ক্রাইসিস তৈরি করেন চিত্রনাট্যকারেরা, মূল বিষয়বস্তুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই যা দর্শকের আকর্ষণ জিইয়ে রাখতে সক্ষম।
দ্বিতীয়ত, পুরোপুরি রিয়্যালিস্টিক সোশাল ড্রামা। কোনও রকম লৌকিক-অলৌকিক ছায়া-মায়া বা ভণিতা নেই এখনও পর্যন্ত যা খুবই প্রশংসনীয়। সাধারণের ঈশ্বরবিশ্বাসে আঘাত না করেই বিজ্ঞান এবং যুক্তির প্রতি আগ্রহ তৈরি করার প্রচেষ্টা রয়েছে।
তৃতীয়ত, অভিভাবকত্বের ভুলভ্রান্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলে এই ধারাবাহিক কিন্তু পাশাপাশি অভিভাবকত্বের গুরুত্বকেও প্রাধান্য দেয়। সন্তানকে দমবন্ধ করা শাসনে রেখে প্রতিপালনের বিরোধিতা করে আবার নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলার সুফলের কথাও বলে। ধারাবাহিকের কনটেন্টে এই ভারসাম্য রাখাটা বেশ শক্ত। যা বেশ ভালোভাবেই করতে সক্ষম হয়েছে 'আলোছায়া'।
চতুর্থত, প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, বন্ধুত্বের সম্পর্কের মধুর দিকগুলির দিকে জোর দেয় এই ধারাবাহিক, যেখানে দুই বোন পরস্পরের দোষ ঢাকে, পরস্পরের আশ্রয় হয়ে ওঠে, দুজন দুজনের স্বপ্নকে লালন করে।
এখনও পর্যন্ত এই ধারাবাহিকের টিআরপি-ও বেশ ভালো। যদিও ধারাবাহিকের আসল ড্রামা এখনও সেভাবে শুরু হয়নি। সাম্প্রতিক প্রোমো বলছে, অচিরেই সেই পর্যায়টি শুরু হতে চলেছে। তার পরে ধারাবাহিকটি কতটা তার মূল ভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে পারে, সেটাই চ্যালেঞ্জ।