Karkat Rogue Cast: চিত্রাঙ্গদা শতরূপা, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, সুদীপ সরকার, রাজেশ শর্মা, চান্দ্রেয়ী ঘোষ, জয়ন্ত কৃপালনী
Karkat Rogue Director: উৎসব মুখোপাধ্যায়
Karkat Rogue Rating: ৩.৫/৫
ইন্দ্রনীল সান্যালের উপন্যাস 'কর্কটক্রান্তি' অবলম্বনে তৈরি হয়েছে জিফাইভ-এর দ্বিভাষিক (হিন্দি ও বাংলা) ওয়েবসিরিজ 'কর্কট রোগ'। বাংলায় নামটি লিখলে কিঞ্চিৎ বিভ্রান্তি হয়। ঠিক সেই কারণেই নামটা এমন রাখা। এই সিরিজের প্রেক্ষাপটে রয়েছে ক্যানসার অর্থাৎ যা বাংলায় কর্কট রোগ। কিন্তু সিরিজের নামকরণে যে রোগ রয়েছে, তা হল Rogue। বিশেষ্য ধরলে মানে হয় অসাধু ব্যক্তি। কিন্তু ইংরেজিতে এই শব্দটি যখন ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তার মানে দাঁড়ায় অবাঞ্ছিত কোনও কিছুকে জড় থেকে উপড়ে ফেলা। এক্ষেত্রে দুটি মানেই প্রযোজ্য এবং সেই জন্যই নামকরণে ভাল একটা পানিং তৈরি হয়েছে।
গত ১০ জানুয়ারি থেকে স্ট্রিমিং শুরু হয়েছে। বাংলা ওয়েব মাধ্যমের তো বটেই, সম্ভবত ভারতীয় ওয়েব মাধ্যমের প্রথম মেডিকাল থ্রিলার এই সিরিজ। ফ্যাটফিশ এন্টারটেনমেন্ট প্রযোজিত এই সিরিজটি কেমন সেই আলোচনা এক কথায় সারা যায় আবার বিশদেও বলা যায়। এককথায় বলতে গেলে, এই সিরিজটি দেখতে বসলে ছাড়তে ইচ্ছে করবে না। কিন্তু সম্ভবত এডিটিংয়ের খানিক গাফিলতির কারণেই সিরিজটি শুরুতে যতটা 'দমদার', যত এগোয় ততই শিহরণ ফ্যাক্টরটি হারাতে থাকে। কিন্তু যা অবশ্য উল্লেখ্য তা হল, এই সিরিজ দর্শককে এমন একটি জগতের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়, যার সম্পর্কে খুবই ওপর-ওপর ধারণা রয়েছে সাধারণ মানুষের।
আরও পড়ুন: Chhapaak movie review: বলিষ্ঠ দীপিকা প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছেন চরিত্রে
সিরিজের কেন্দ্রীয় চরিত্র একজন অটোপ্সি সার্জন। সাধারণত এঁদের আমরা মড়াকাটা ডাক্তার বলে থাকি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই শাখাটিকে সে বেছে নিয়েছে কারণ চরিত্রটি অত্যন্ত আদর্শবান। চিকিৎসাজগতে কোনও রকম দুর্নীতি সে বরদাস্ত করে না। প্রত্যেকটা পোস্টমর্টেম তার কাছে একটি নতুন আবিষ্কার। আর তার এই স্বভাবই তাকে নিয়ে যাবে একটি শিহরণ-জাগানো সত্যের দিকে।
প্রথম ওয়েবিসোড থেকেই দর্শক সেই শিহরণে উৎফুল্ল হবেন। নাহলে আর সময় খরচ করে ওয়েবসিরিজ দেখতে বসার মানে কী! পঞ্চম ওয়েবিসোড পর্যন্ত সেই শিহরণ বজায় থাকবে বিলকুল। প্রথমদিকে যখন রহস্য ঘনীভূত হয়, তখন চিত্রনাট্যে সব চরিত্রের প্যারালাল ব্লেন্ডিংটি চমৎকার। ট্রিটমেন্টও আকর্ষণীয়। কিন্তু ষষ্ঠ ওয়েবিসোড থেকে শিহরণ মোটামুটি 'ল অফ ডিমিনিশিং রিটার্ন্স'-এর হাতে নিজেকে সমর্পণ করে দেবে। তবে তার পরেও দর্শককে টেনে রাখবে অভিনয় এবং কৌতূহল অবসানের প্রতীক্ষা।
ডক্টর বিয়াস বন্দ্যোপাধ্যায় দর্শকের অভ্যন্তরে ঢুকে যাবে। চিত্রাঙ্গদা এই চরিত্রটিতে অনবদ্য। তিনি স্বতঃস্ফূর্ত, স্বাভাবিক। মনে হয় চরিত্রটি তিনি যাপন করছেন তাঁর সম্পূর্ণ সত্তা দিয়ে। বিয়াসের বয়ফ্রেন্ডের চরিত্রে সুদীপ সরকারও ভাল। মধ্যবিত্ত মানুষের উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর সততার দ্বন্দ্ব সুদীপ অত্যন্ত ভাল ভাবে তুলে ধরেছেন এই সিরিজে। তবে চিত্রাঙ্গদার পরেই যে অভিনেতা দর্শককে ধরে রাখবেন তিনি হলেন রাজেশ শর্মা।
এই চরিত্রটি উপন্যাসে ছিল না। সিরিজের আরও দুতিনটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রয়েছে যারা ক্লাইম্যাক্সের দিকে গল্পটিকে এগিয়ে নিয়ে যায় কিন্তু উপন্যাসে সেই চরিত্রগুলি নেই। চিত্রনাট্যকারেরা এই চরিত্রগুলিকে তৈরি করেছেন এবং উপন্যাসের এই অ্যাডাপ্টেশনটি ওই কারণেই নতুন মাত্রা পেয়েছে। আর এই চরিত্রগুলিতে যে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দর্শক দেখেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের অভিনয়ই অত্যন্ত ভাল।
তবে চিত্রনাট্য যদি কিঞ্চিৎ টলোমলো হয়ে যায় শেষের এপিসোডগুলিতে, সেক্ষেত্রে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কিছু করার থাকে না। যে চাইনিজ গ্যাংটি সিরিজের শুরু থেকে দর্শকের মধ্যে থ্রিল এনে দেয়, সেই গ্যাংয়ের চূড়ান্ত পরিণতির জায়গাগুলি কেমন অপেশাদার লাগে। প্রথমদিকে চিত্রনাট্য যতটা টানটান, ঋজু এবং স্মার্ট, শেষ দুটি এপিসোডে, বিশেষ করে শেষ এপিসোডে ততটাই জোলো। ২০ বছর আগেকার হিন্দি-বাংলা অ্যাকশন মুভির ছকে তৈরি হয়েছে ক্লাইম্যাক্স। শেষটা অনেকটাই 'মেলাবেন তিনি মেলাবেন' ধাঁচের। ওই যেমন হঠাৎ সব গ্রে শেডের চরিত্রগুলি তাদের ভুল বুঝতে পেরে নায়ক বা নায়িকার পাশে দাঁড়ায় এবং ভিলেনের মুখোশ খুলে দেয়, সেরকম আর কী!
আরও পড়ুন: Ghost Stories review: ‘ভয়’-বাবু গেলেন কোথায়?
সিরিজের টাইটেল মন্তাজটি ভাল কিন্ত গ্রাফিক্স কাঁকড়াটি হাস্যকর। সে আবার হেঁটে চলে বেড়ানোর সময় কী সব আওয়াজ করে। অথচ সিরিজটি তো বাচ্চাদের থ্রিলার নয়, খুব সিরিয়াস একটি বিষয়বস্তু নিয়ে গল্প যা দেখার পরে চিকিৎসাজগতের উপর দর্শকের আস্থা খানিকটা ধাক্কা খাবে। এরকম একটি সিরিজের মন্তাজে গ্রাফিক্স কাঁকড়ার কড়কড়টি মোটেই বরদাস্ত করা যায় না।
বাংলা ওয়েব এখনও শিশু অবস্থাতেই রয়েছে। হাঁটি-হাঁটি-পা-পা অবস্থা। বিগত কয়েক বছরে বেশ কিছু ওয়েবসিরিজ বাজারে হিট ঠিকই কিন্তু বেশিরভাগের মান একেবারেই জাতীয় স্তরের মতো নয়। তবু মানুষ দেখেন কারণ দর্শক ওয়েবে বাংলা কনটেন্ট দেখতে চান। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বাংলা থ্রিলার সিরিজগুলির। কয়েকটি অতিনাটকীয়তা দোষে দুষ্ট আর কিছু অত্যন্ত হাস্যকর।
সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, এটা বলতেই হবে, 'কর্কট রোগ' এখনও পর্যন্ত বাংলা ওয়েব মাধ্যমের সবচেয়ে ভাল থ্রিলার সিরিজ। বুদ্ধিমান দর্শক হয়তো কিছুটা দেখার পরে বুঝে ফেলবেন যে কোন গন্তব্যের দিকে যেতে চলেছে এই সিরিজ, তবুও শেষ পর্যন্ত দেখতে চাইবেন।