পাঞ্জাবে চমকপ্রদ উত্থান হতে চলেছে আম আদমি পার্টির। গণনার শুরু থেকেই বেশিরভাগ আসনে এগিয়ে আপ। গত সাত দশক ধরে পঞ্চ নদের তীরের রাজ্যে শাসকের আসনে বসেছে কখনও কংগ্রেস, অথবা শিরোমণি আকালি দল (এসএডি)। কিন্তু এবার এই দুই দলের প্রতিই মানুষের অনাস্থার ইঙ্গিত স্পষ্ট। কেন পাঞ্জাবে এগিয়ে আপ? রইল তার পাঁচটি কারণ…
১. পরিবর্তনের তাগিদ
গত কয়েক দশক ধরে পাঞ্জাবের ক্ষমতার রাশ মূলত শিরোমণি অকালি দলের হাতেই ঘোরাফেরা করেছিল। কখনও বিজেপি আবার কখনও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে রাজ্য শাসক করেছে অকালিরা। এরপর ২০১৭ সালে এই রাজ্যে এককভাবে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। বিরোধী দলে বসে অকালিরা। অভিযোগ যে, ক্যাপটেন অমরিন্দর সিং সরকারের নানা সিদ্ধান্তে বিরোধীতার ক্ষেত্রে অকালিরা খুব একটা দৃঢ় ছিল না। মানুষের মনে ধারণা হয় যে, কংগ্রেস ও শিরোমণি অকালি দল- এই দুই দলই একই মুদ্রার দুটি দিক মাত্রা। এবার পাঞ্জাববাসী, বিশেষ করে মালওয়া পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছে। রাজ্য জুড়ে যে বার্তাটি ঘোরাফেরা করছিল তা হল যে, ভোটাররা দুটি বড় দলকে বিগত সাত দশক ধরে পাঞ্জাবের ক্ষমতায় দেখেছে, কিন্তু খুব ভালো ফল হয়নি। তাই এবার পরিবর্তনের সময় এসেছে। প্রচারে আপের স্লোগান ছিল, 'এবার আমরা বোকা হব না, ভগবন্ত মান এবং কেজরিওয়ালকে সুযোগ দেব'। যা ভোটারদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে।
২. দিল্লি মডেল
দিল্লিতে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরেই ভালো মানের সরকারি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ এবং সস্তায় জল পরিষেবা চালু করেছে আপ সরকার। যা মূলত মুখ্যমন্ত্রী তথা আপের জাতীয় আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মস্তিষ্কপ্রসূত। জিতলে পাঞ্জাবেও দিল্লি মডেলের আঁচ মিলবে বলে প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন কেজরিওয়াল। মানুষ তাঁর এই প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রেখেছেন।
৩. যুব ও মহিলা
আম আদমি পার্টি পাঞ্জাবের যুব সম্প্রদায় এবং মহিলা ভোটারদের কাছ থেকে ভালো সমর্থন পেয়েছে। এঁরা নতুন দল এবং 'আম আদমি'কে রাজ্য শাসনের সুযোগ করে দেওয়ার পক্ষে ছিল। কেজরিওয়াল- দুর্নীতি দূরীকরণ, রাজ্যে স্থানীয়স্তরে প্রশাসনে নতুন ব্যবস্থার সূচনা, শাসন ব্যবস্থার বদলের দিশা দেখিয়েছিলেন। তরুণ প্রজন্ম মনে করেছে এইসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হলে শিক্ষা ও কর্মসংস্থান সদর্থক প্রভাব পড়বে। আপ মহিলা ক্ষমতায়ণের কথা বলেছিল প্রচারে। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, দল ক্ষমতায় এলে মহিলাদের অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে হাজার টাকা করে জমা পড়বে। অনেকেই তখন এই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু, বেশিরভাগ মহিলা আপের প্রতিশ্রুতিতে ভরসা রেখেছে।
৪. মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে ভগবন্ত মান
মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণার আগে ভোটের মাধ্যমে ভগবন্ত মানকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। তখনই তাঁর জনপ্রয়তা পরখ করা যায়। তাঁকে বিরোধীরাযে বহিরগত তকমা দিয়েছিল সেঠাও নস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল। ভগবন্ত মান, জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা যিনি তার রাজনৈতিক এবং সামাজিক ব্যঙ্গের মাধ্যমে অনেক পাঞ্জাবিদের হৃদয়ে জিতেছেন, তাঁর ইমেজও চিত্তাকর্ষক, পরিচ্ছন্ন এবং মাটির কাছাকাছি মনোভাবাপন্ন বলে বিবেচিত। প্রথাগত রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ভগবন্ত মানের পার্থক্য এখানেই। প্রচারে মান বারে বারেই বলেছিলেন যে, তিনি কীভাবে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এবং নির্বাচনের ফলে তার জমানো অর্থ কমছে।
৫. কৃষক আন্দোলন ও মালওয়া
এক বছরের বেশি সময় ধরে কৃষকরা কেন্দ্রের তিন নয়া জনি আইনের বিপক্ষে আন্দোলন করেছিল। আন্দোলনকারীদের বেশিরভাগই ছিল পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের। শেষে গত নভেম্বরে তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারে বাধ্য হয় মোদী সরকার। সেই আন্দোলনের প্রভাব এবার পাঞ্জাবের ভোটেও লক্ষ্য করা গেল।
এই কৃষক আন্দোলনের অন্যতম চালিকা শক্তি ছিল ভারত কিষাণ ইউনিয়ন (উগরাহন)। এই সমগঠনের সভাপতি যোগিন্দর সিং উগরাহন। মূলত এই সংগঠনের বেশিরভাগ সভ্য ও সমর্থকই মালওয়া অ়্চলে বসবাসকারী। এরাই রাজ্যের ৬৯ আসনের নির্ণায়ক শক্তি। এই সংগঠনের নেতারা মানুষের মনে এই প্রশ্নের উদ্রেক করতে পেরেছিল যে, কেন বদলের পক্ষে ভোট দেব না? আপ হপারলেও সমস্যার সমাধান করতে পারবে। তাই একবার নতুন দলকে ভোট দিয়েই দেখা যাক। প্রসঙ্গত আপ কৃষকদের দাবি-দাওয়ার পক্ষে সোচ্চার ছিল।
Read in English