জিশান এ মির্জা এবং রাজেশ সনপ নামের দুই গবেষকের একটি গবেষণা অনুসারে এই এলাকায় ৮৬ রকমের প্রজাপতি, ৯০ ধরনের মাকড়শা, ৪৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩৪ ধরনের বন্য ফুল এবং ৯টি চিতাবাঘ রয়েছে।
জিশান এ মির্জা এবং রাজেশ সনপ নামের দুই গবেষকের একটি গবেষণা অনুসারে এই এলাকায় ৮৬ রকমের প্রজাপতি, ৯০ ধরনের মাকড়শা, ৪৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩৪ ধরনের বন্য ফুল এবং ৯টি চিতাবাঘ রয়েছে।
আরে এলাকার এখানেই গাছ কাটা হয়েছে (ছবি- প্রশান্ত নাডকার)
পরিবেশকর্মী ও সরকারের মধ্যের সংঘাত শুরু হয়েছে ২০১৪ সাল থেকে। শুক্রবার বম্বে হাইকোর্ট আরে এলাকার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে যে চারটি আবেদন জমা পড়েছিল, সেগুলি খারিজ করে দেয়। আবেদনকারীরা বম্বে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন বৃক্ষ কর্তৃপক্ষের গাছ কাটার সিদ্ধান্তের যাথার্থ্য ও আইনি অনুমতিকে চ্যালেঞ্জ করে আরে এলাকাকে বনাঞ্চল ঘোষণা করার দাবি তোলেন। পরিবেশকর্মীদের যুক্তি, আরে এলাকা সঞ্জয় গান্ধী ন্যাশনাল পার্কের অংশ এবং সেখানে মেট্রোর কারশেড নির্মাণ করা হলে ওই এলাকায় সমস্ত গাছ বৃহত্তর বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহৃত হবে।
Advertisment
মেট্রো এখানে কারশেড চায় কেন?
এমএমআরসিএল-এর দাবি, এই জমি সরকারের, মালিক ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড। ফলে এখানে কারশেড বানালে দীর্ঘ, জটিল ও খরচসাপেক্ষ জমি অধিগ্রহণের পর্যায়টি বাদ দেওয়া যাবে এবং নাগরিকদের অতিরিক্ত কোনও খরচও পোহাতে হবে না।
আরে মুম্বইয়ের সান্টাক্রুজ ইলেকট্রনিক্স এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (এসইইপিজেড)-এর ৮০০ মিটার দূরে অবস্থিত, কোলাবা এসইইপিজেড লাইনের এটি অন্তিম স্টেশন। এখান থেকে সবচেয়ে দ্রুত কাজকর্ম চালানো সম্ভব। আপৎকালীন সময়ে বিকল্প উপায়ে কর্মীদের এখান থেকে যাতায়াতের সুবিধে রয়েছে।
পরিবেশকর্মীরা চান এ ডিপো তৈরি হোক এসইইপিজেড থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কাঞ্জুমার্গে। এখানে জমি অধিগ্রহণ করতে হলে ২৩০০০ কোটি টাকার মেট্রো লাইন ৩ প্রকল্প (কোলাবা-এসইইপিজেড লাইন, যে প্রকল্পের জন্য এই কার শেড নির্মাণ করা হচ্ছে)-এর খরচ আরও ৫০০০ কোটি টাকা বেড়ে যাবে।
এর আগে সরকার বলেছিল, কাঞ্জুমার্গ এলাকা নিয়ে আইনি সমস্যা রয়েছে। কিন্তু বম্বে হাইকোর্টে যখন মামলা চলছিল, তখন সরকার বলে এই এলাকা অন্য একটি মেট্রো লাইনের জন্য ব্যবহার করা হবে।
আরে এলাকায় কী ধরনের সুবিধাযুক্ত প্রকল্প নির্মিত করার কথা বলা হয়েছে?
এই প্রস্তাবিত কারশেডে সাফাই, রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতির সুবিধা থাকবে। রেলওয়ের কোনও কারশেড কে রেড ক্যাটিগরি শিল্প বলে বর্ণনা করা হয়, যেখানে সবচেয়ে বেশি দূষণ ঘটে। পরিবেশকর্মীরা বলেন, এই শেড থেকে তেল, গ্যাস, বৈদ্যুতিক বর্জ্য, তো নির্গত হবে, এ ছাড়া অ্যাসিড এবং রঙের মত বিপজ্জনক পদার্থ তো রয়েছেই। সমস্ত বর্জ্যই যাবে মিথি নদীতে, যার ফলে ভূগর্ভস্থ জলও দূষিত হয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন পরিবেশকর্মীরা। এ ছাড়াও তাঁদের দাবি, ডিপো নির্মাণে ভূগর্ভস্থ জল অপব্যবহৃত হবে।
এমএমআরসিএল বলেছে, দূষণ এড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তারা। নদীর পাশে রেড ক্যাটিগরি শিল্প স্থাপনে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা ২০১৫ সালে প্রত্যাহৃত হয়েছে।
এই প্রকল্পের জন্য পরিবেশকে কী মূল্য দিতে হবে বলে দাবি করা হচ্ছে?
জিশান এ মির্জা এবং রাজেশ সনপ নামের দুই গবেষকের একটি গবেষণা অনুসারে এই এলাকায় ৮৬ রকমের প্রজাপতি, ৯০ ধরনের মাকড়শা, ৪৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩৪ ধরনের বন্য ফুল এবং ৯টি চিতাবাঘ রয়েছে।
বিএমসি-র বৃক্ষগণনা অনুসারে, এখানে ৪.৫ লক্ষ গাছ রয়েছে, যা মুম্বইয়ের হরিৎ ফুসফুস বলে পরিচিত। পরিবেশবিদরা বলছেন, আরে ডিপো যে প্লটের উপর নির্মিত হতে চলেছে, সেটিই এখন মিথি নদীর একমাত্র স্বাভাবিক প্লাবনভূমি। এখানে নির্মাণকাজ গলে এবং গাছ খাটা হলে বর্ষাকালে বন্যার পরিমাণ বাড়বে।
তবে প্রস্তাবিত কারশেডটি নির্মিত হবে মাত্র ৩৩ হেক্টর এলাকা জুড়ে, যা গ্রিন বেল্টের মোট ১২৭৮ হেক্টর এলাকার মাত্র ২ শতাংশ। এমএমআরসিএল বলেছে, এই ৩৩ হেক্টর এলাকা ছাড়া আরের অন্য কোনও এলাকা বিঘ্নিত হবে না তারণ তিন দিকে সড়কপথে এখানে পৌঁছনো সম্ভব।
এমএমআরসিএল বলছে, যেসব গাছ কাটা হয়েছে, তার অর্ধেকের বেশি গাছই ছিল বিদেশি, যা দেশি গাছের মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত করা সম্ভব।
বম্বে হাইকোর্টের বাইরে বিক্ষোভ (ছবি গণেশ শ্রীশেখর)
সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের বটানির অধ্যাপক ডক্টর রাজেন্দ্র শিণ্ডের দেওয়া এক রিপোর্ট অনুসারে ওই এলাকার ৮৭টি প্রজাতির গাছের মধ্যে ৩৬টি দেশি, যার মধ্যে রয়েছে ধমন (৫০২), সেহমত (৪৪৫), আম (৮২), মহুয়া (২১), পলাশ (৮), তেণ্ডু (৮) প্রভৃতি। হাইকোর্টে করা এক আবেদনে বলা হয়েছে এখানে বিদেশি গাছের মধ্যে রয়েছে সুবাবুল (৫২২), রেইন ট্রি (১৬৯), এবং গুলমোহর (২৬)টি।
এমএমআরসিএলের দাবি, মেট্রো নির্মিত হলে কার্বন ফুটপ্রিন্ট ব্যাপক হ্রাস পাবে এবং তাতে পরিবেশের প্রভূত উন্নতি হবে। বলা হয়েছে, সাত দিনের মেট্রো চলাচলের যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাস পাবে, এক বছরে ২৭ হাজার গাছ তা গ্রহণ করে।
এই এলাকাকে বনভূমি ঘোষণা করা নিয়ে এত বিতর্ক কেন?
২০১৫ সালে বনশক্তি নামক এনজিও-র তরফে স্ট্যালিন ডি আরে এলাকাকে বনভূমি ঘোষণার জন্য জাতীয় পরিবেশ ট্রাইবুনালে আবেদন করেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সে আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
২০১৭ সালে আরে কনজার্ভেশন গ্রুপের তরফে অমৃতা ভট্টাচার্য আরের জমিকে নো ডেভেলপমেন্ট জোন থেকে মেট্রো কারশেডে পরিণত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন করেন। বম্বে হাইকোর্ট ২০১৮ সালে সে আবেদন খারিজ করে দেয়।
সুপ্রিম কোর্টে অমৃতা ভট্টাচার্য এবং স্ট্যালিন স্পেশাল লিভ পিটিশন দাখিল করেন ২০১৮ সালে। এই পিটিশনের শুনানি হবে ২১ অক্টোবর।