ফের পৃথিবীর আকাশে হাজির হয়েছে এক বিরল প্রজাতির ধূমকেতু। ৫০ হাজার বছর আগে ওই ধূমকেতুকে পৃথিবীর বুকে দেখা গিয়েছিল। এই ধূমকেতুর বিশেষত্ব যে তা দেখতে সবুজ রঙের। আগামী সপ্তাহে এই বিরল ধূমকেতু দেখা যেতে পারে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের আশা, ২ ফেব্রুয়ারি ওই ধূমকেতুকে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি জায়গায় দেখা যাবে। ২০২২ সালের মার্চে Zwicky Transient Facility (ZTF) থেকে ওয়াইড ফিল্ড সার্ভে ক্যামেরায় প্রথম এই ধূমকেতুকে দেখা গিয়েছিল। এই ধূমকেতুর নাম দেওয়া হয়েছে C/2022 E3 (ZTF)। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, এই ধূমকেতু টেলিস্কোপ এবং দূরবীণ, দুটো দিয়েই দেখা যাবে। পাশাপাশি, পরিষ্কার রাতের আকাশে দেখা যাবে খালি চোখেও। এখন যে বিষয়গুলো জানা জরুরি-
সবুজ ধূমকেতু কী?
জানুয়ারির মাঝামাঝি সূর্যের কাছে আসার পর, এটি এখন তার নিজস্ব কক্ষপথ বরাবর সূর্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ZTF-এর সহ-প্রধান তদন্তকারীরা হলেন ধূমকেতু বিশেষজ্ঞ টম প্রিন্স এবং মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইকেল কেলি। কেলি Space.com কে বলেছেন: 'ধূমকেতুর কক্ষপথটিই বলে দিচ্ছে যে এটি আমাদের সৌরজগতের প্রান্ত থেকে এসেছে। ধূমকেতুতে ভরা দূরবর্তী এক ভাণ্ডার থেকে, যাকে আমরা ওর্ট ক্লাউড বলি।' ওর্ট ক্লাউড মহাকাশের এক বৃহৎ, গোলাকার অঞ্চল। যা সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়তে বাধা দেয়। এই ওর্ট ক্লাউডে ধূমকেতু এবং গ্রহাণুর মতো অসংখ্য ছোট বস্তু আছে। নাসা এই ওর্ট ক্লাউডকে 'আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে দূরবর্তী অঞ্চল' এবং 'ধূমকেতুর বাড়ি' বলে জানিয়েছে। দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে যে বর্তমানে এই সবুজ ধূমকেতু পৃথিবী থেকে ২.৫ আলোক মিনিট দূরত্বে থাকতে পারে, যার অর্থ 'শুধু' ২৭ মিলিয়ন মাইল।
কোথায় এবং কখন সবুজ ধূমকেতু দেখা যাবে?
নাসা জানিয়েছে যে এই ধূমকেতুর বর্তমান উজ্জ্বলতার প্রবণতা বজায় থাকলে, টেলিস্কোপ, দূরবীণ এবং কিছু ক্ষেত্রে অন্ধকার আকাশের নীচে খালি চোখেও একে দেখা যাবে। উত্তর গোলার্ধের পর্যবেক্ষকরা সকালের আকাশে ধূমকেতুটিকে দেখতে পাবেন। কারণ তা জানুয়ারিতে উত্তর-পশ্চিম দিকে দ্রুত চলে যায়। এটি ফেব্রুয়ারির শুরুতে দক্ষিণ গোলার্ধে দেখা যাবে। Weather.com-এর মতে, ভারতীয় আকাশে, উত্তর-পশ্চিম দিকে তাকালে, বুটস নক্ষত্রমণ্ডলে দিগন্তের ১৬° ওপরে এই ধূমকেতু দেখা যাবে। কিন্তু, বহুতল এবং রাস্তার আলো জ্বলে থাকলে দূরবীণ এবং টেলিস্কোপ ছাড়া এই ধূমকেতু দেখা কঠিন হবে। দ্য ভার্চুয়াল টেলিস্কোপ প্রজেক্ট ধূমকেতু C/2022 E3 (ZTF) এর একটি লাইভস্ট্রিম বিনামূল্যে ৩১ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৩০-এ অথবা বুধবার ১ ফেব্রুয়ারি রাত ১১:00 টায়। সংস্থার ওয়েবসাইট বা ইউটিউব চ্যানেলে এই লাইভ দেখা যাবে।
এর রং সবুজ কেন?
ধূমকেতু হল হিমায়িত পাথুরে বা গ্যাস-ভর্তি বস্তু যা সৌরজগতের গঠনের অবশিষ্টাংশ। তাদের গঠন, বৈশিষ্ট্য এবং তারা যে পথে চলে সেই কারণে, ধূমকেতুর 'পিছনে' একটি আলো দেখা যায়। এক্ষেত্রে, ধূমকেতুটি নিজেই সবুজ (যাকে ধূমকেতুর মাথা বলা হয়)। আর, এর পিছনের বা লেজের অংশ থেকে একটি সাদা আলো বেরোতে দেখা যায়।
মহাকাশের অন্যান্য বস্তুর মতই ধূমকেতুরও কক্ষপথ রয়েছে। সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ তাদের ওপর কাজ করার জন্যই তারা কখনও কখনও সূর্যের কাছে চলে আসে। NASA ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ধূমকেতু সূর্যের কাছাকাছি প্রদক্ষিণ করার সময় উত্তপ্ত হয়ে গ্যাস এবং ধূলিকণার ছড়িয়ে পড়া অংশকে উজ্জ্বল করে তোলে। যা দেখতে একটি গ্রহের চেয়েও বড় হতে পারে। এই জ্বলে ওঠার পরে ধূলিকণার অবশিষ্টাংশ, দূর থেকে, পৃথিবীবাসীর কাছে আলোর পথের মতো দেখায়। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে এই ধূমকেতুকে প্রায়শই নীল বা সাদা বা সবুজ আলোর মত দেখায়।
এই ক্ষেত্রে, সবুজ আভা 'ডায়াটমিক কার্বনের উপস্থিতি থেকে উদ্ভূত বলে মনে করা হয়। যা আসলে জোড়া কার্বন পরমাণু বা একসঙ্গে আবদ্ধ কার্বন পরমাণু। আর, এই পরমাণু থাকে ধূমকেতুর মাথায়। সূর্যের আলো বিকিরণে অতিবেগুনি রশ্মি দ্বারা উত্তেজিত হয়ে এই ডায়াটমিক কার্বনের অণু সবুজ আলো নির্গত করে।'
আরও পড়ুন- গণহারে ছাঁটাই, চাকরি খুইয়ে মার্কিন মুলুকে বিপাকে কয়েক হাজার ভারতীয়
সবুজ ধূমকেতু কি বিরল?
কক্ষপথ অনেকটা দূরে। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে ধূমকেতুর তাই ২০০ বছরেরও বেশি সময় লাগে। কিন্তু, এমন দীর্ঘসময়ের ধূমকেতুর মধ্যেও সবুজ ধূমকেতুকে সহজে দেখা যায় না। ধূমকেতুর কক্ষপথ উপবৃত্তাকার। বর্তমান সবুজ ধূমকেতুটিও এখন ধূমকেতুটি ওর্ট ক্লাউড বা মেঘের দিকে ফিরে যাবে। আবার প্রায় ৫০,০০০ বছর পরে তাকে দেখা যাবে। তাই নিজের কক্ষপথের জন্যই সবুজ ধূমকেতুর আবার পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসা কোনও বিরল ঘটনা নয়।
Read full story in English