যৌন নিগ্রহের দায়ে পকসো আইনে অভিযুক্ত এক অল্পবয়সীকে শুক্রবার মুক্তি গিয়েছে মাদ্রাজ হাই কোর্ট। একই সঙ্গে আদালতের তরফ থেকে দুটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, শিশুর সংজ্ঞা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করা হোক, এবং সম্মতিসূচক যৌনতার ক্ষেত্রে অভিযুক্ত এবং মেয়ের বয়সের ফারাকও বিবেচনা করা হোক।
বিচারপতি পরতিবন তাঁর রায়ে বলেছেন, "পকসো আইনের ২ ডি ধারায় শিশুর সংজ্ঞা নির্ধারণে বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করা হোক। ১৬ বছর বয়সের পর কোনও রকম যৌন সংসর্গ বা শারীরিক স্পর্শ অথবা তৎসংক্রান্ত যে কোনও রকম ক্রিয়ার জন্যে কঠোর শাস্তির সংস্থান পকসো আইন থেকে বাদ দেওয়া হোক, এ সম্পর্কিত বিচার করা হোক আরও উদারভাবে। সে জন্য এই আইনেই নতুন সংস্থান তৈরি করা যেতে পারে ১৬ থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত বয়স পর্যন্ত সম্পর্কের ক্ষেত্রে যাতে ১৬-র কম শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের সঙ্গে তার তফাৎ করা যায়।"
আরও পড়ুন, আইসিসের নয়া ভিডিও: কী বার্তা দিতে চায় আল বাগদাদি
বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে আইনের সংশোধনী এমনভাবে করার প্রস্তাব দিয়েছেন যাতে নিগৃহীতা ১৬ বছর বয়সী বা তদূর্ধ্ব মেয়েটির থেকে অপরাধীর বয়স ৫ বছরের বেশি না হয়। আদালতের এই প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট সকলের পক্ষে গ্রহণযোগ্য কিনা তা জানার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি পেশ করার জন্যসরকারি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
আইন বিশেষজ্ঞ এবং শিশু অধিকার কর্মীরা শিশুর সংজ্ঞা পুনর্নির্মাণের বিষয়টিকে স্বাগত জানালেও তাঁদের মধ্যে কয়েকজন এই প্রস্তাবের ওপর আরও আলোচনা চেয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে সম্মতিসূচক যৌনতাকে অপরাধ বলে গণ্য না করার পক্ষে। তিনি বলেছেন, "আইনের এই সংস্থানের ফলে এই নির্দিষ্ট বয়সীরা সম্মতিসূচক যৌনতায় লিপ্ত হতে পারে না, এবং অনেক সময়েই জাতিগত বা সাম্প্রদায়িক বা গোঁড়া পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে।"
আরও পড়ুন, গুজরাটে ভোটদানের ব্যাপক হার কিসের ইঙ্গিতবাহী
ক্রিমিন্যাল আইনজীবী এবং সিনিয়র অ্যাডভোকেট রেবেকা জৈন বলেন, "একের পর এক গবেষণা দেখা যাচ্ছে যে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে বহু যৌন সংসর্গ ঘটছে সম্মতিক্রমেই। এরা যখন ধরা পড়ে যাচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেয়েটি মা-বাবা অসম্মতিতে যৌন সংসর্গের অভিযোগ আনছে।"
শিশু অধিকার বিশেষজ্ঞ তথা দিল্লি হাইকোর্টের আইনজীবী অনন্ত কুমার আস্থানার বক্তব্য, "২০১২ সালের পকসো আইনে সম্মতির বয়স ১৬ থেকে ১৮য় বাড়িয়ে দেওয়ার পর সারা দেশে অল্প বয়সী বন্দির সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে, এমনকি বহু ক্ষেত্রে যৌন সংসর্গ যদি সম্মতিক্রমেও হয়ে থাকে বা প্রেমজ কারণে হয়ে থাকে তাহলেও। মাদ্রাজ হাই কোর্টের রায় আশার আলো। এর ফলে আশা দেখা যাচ্ছে যে সরকার এবার প্রেমজ বা সম্মতি মূলক যৌন সংসর্গকে অপরাধের আওতায় না ফেলার ব্যাপারে পদক্ষেপ করবে।"
জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন শান্তা সিনহা এই বয়সীদের যৌনতাকে অপরাধ আখ্যা দেওয়ার বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, "সম্মতির বিষয়টি প্রেক্ষিত অনুসারে বিবেচনা করা দরকার, নিগৃহীতাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তার সম্মতি ছিল কিনা সে ব্যাপারে প্রশ্ন করে নয়। সংশোধনীর বিষয়টিকে আরও খুঁটিয়ে দেখা প্রয়োজন, শিশুকে জেরা করার মাধ্যমে নয়।"
আরও পড়ুন, মুসলমানদের সাহায্য না করা নিয়ে মানেকা গান্ধীর মন্তব্য: ধর্ম প্রসঙ্গে আদর্শ আচরণবিধি
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ডিন, অধ্যাপক বেদ কুমারী বলেন, "এই বয়সের যৌন সংসর্গের ক্ষেত্রে হয় দুজনেই অপরাধী নয়তো দুজনেই নিগৃহীত। আমি দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি যে এরকম ক্ষেত্রে হয় দুজনকেই জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টে বিচার করা হোক নাহলে দুজনকেই চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিতে পাঠানো হোক। সাধারণত ছেলেটিকে জুভেনাইল জাস্টিসের আওতায় ফেলে বিচার করা হয়ে থাকে এবং মেয়েটিকে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিতে পাঠানো হয়। এরা দুজনেই একই কাজ করেছে। তাহলে এদের আলাদা ভাবে বিবেচনা করা হবে কেন?"
বৃন্দা গ্রোভার বয়সের তফাৎ নিয়ে আরও আলোচনার পক্ষপাতী। তিনি বলেন, "আমি বয়সের ফারাকের ব্যাপারে খুব নিশ্চিত নই। এটা একেবারেই ভারতীয় ও পিতৃতান্ত্রিক ধারণা। যদি কোনও বয়স্ক পুরুষ তার ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে কোনও অল্প বয়সী মেয়ের উপর সুযোগ নেয়, তাহলে ব্যাপারটা আমি ভিন্ন চোখে দেখাব। কিন্তু শুধু বয়সের কারণেই আমি বিষয়টিকে অপরাধ হিসেবে দেখব না। আমি ক্ষমতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টি দেখব এবং সেখান থেকেই বিচার করব যে নিগৃহীতাকে শোষণ করা হয়েছে কি না।"
আস্থানা বলেছেন, "অভিযুক্ত অপরাধী এবং নিগৃহীতার বয়সের ফারাকের বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন। কিন্তু তার চেয়ে বেশি জরুরি এ কথা মেনে নেওয়া যে বর্তমান আইন অত্যন্ত কঠোর এবং সম্পর্কের খুঁটিনাটি এবং অন্য়ান্য বিষয় আদালতগ্রাহ্য নয়।"
Read the Full Story in English