দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কলকাতায় জানিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের নাগরিকত্ব প্রথা সংশোধন করা তাঁদের প্রথম কাজ। প্রথমে তাঁরা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করবেন, তারপর দেশ জুড়ে চালু করবেন জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি)। কলকাতার সভায় তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষকে বিপথচালিত করার অভিযোগ আনেন।
অমিত শাহ সভায় বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন লাখ লাখ হিন্দু শরণার্থীকে দেশের বাইরে বের করে দেওয়া হবে। আমি আমার শরণার্থী ভাই বোনকে নিশ্চিন্ত করতে চাই যে তাঁদের চিন্তার কোনও কারণ নেই। কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের তাড়িয়ে দেবে না। আমি সমস্ত হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, এবং ক্রিশ্চান শরণার্থীদের বলতে চাই যে তাঁদের ভারত থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে না। গুজনে কান দেবেন না... মমতা দিদি বলেছেন বাংলায় এনআরসি হবে না। কিন্তু আমরা সমস্ত অনুপ্রবেশকারীদের খুঁজে বার করব এবং দেশ থেকে বের করে দেব। মমতা যখন বিরোধী ছিলেন তখন অনুপ্রবেশকারীদের তাড়িয়ে দেবার দাবি তিনিও তুলেছিলেন... কিন্তু এখন সেই অনুপ্রবেশকারীরা যেহেতু তাঁর ভোট ব্যাঙ্কে পরিণত হয়েছে, তিনি আর তাদের তাড়াতে চান না।"
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: এনপিআর কী, এ নিয়ে এত বিতর্ক কেন?
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল কী?
২০১৬ সালের ১৯ জুলাই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনা হয়। ১২ অগাস্ট, ২০১৬-য় সে বিল পাঠানো হয় যৌথ সংসদীয় কমিটিতে। সেই কমিটি এ বছর জানুয়ারি মাসে তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এই বিলে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করার প্রস্তাব আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে অবৈধভাবে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং ক্রিশ্চানরা ভারতীয় নাগরিকত্বের যোগ্য। এ ছাড়াও ওই তিন দেশ থেকে আসা উক্ত ছয় ধর্মাবলম্বীদের স্বাভাবিক নাগরিকত্বের জন্য আগে যে ১৪ বছরের সময়সীমা ছিল, তা কমিয়ে ৬ বছর করা হয়েছে।
এই বিতর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বেআইনি অভিবাসীদের নাগরিকত্বের যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে, যা ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নং অনু্চ্ছেদে সমতার অধিকারের পরিপন্থী বলে গণ্য হতে পারে।
এনআরসি কী?
এখনও পর্যন্ত কেবলমাত্র আসামে এনআরসি লাগু হয়েছে। এনআরসি-তে ধর্মের বাছবিচার ছাড়াই একটি নির্দিষ্ট দিনের ভিত্তিতে অবৈধ অভিবাসী স্থির করা হয়। আসামের ক্ষেত্রে সে তারিখ হল ২৪ মার্চ, ১৯৭১। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় নাগরিকত্ব দাবি করতে হলে প্রমাণ দিতে হবে যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা তাঁর পূর্বপুরুষ ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের আগে ভারতীয় নাগরিক ছিলেন।
আসাম এনআরসি-তে নথিভুক্তির জন্য আবেদন করেছিলেন ৩.১১ কোটি মানুষ। তাঁদের মধ্যে ১৯ লক্ষের নাম বাদ পড়েছে। তবে এই বাদ পড়াদের মধ্যে বড় সংখ্যক হিন্দুরাও রয়েছেন।
দেশ জুড়ে এনআরসি চালুর আগে নাগরিকত্ব সংশোধন হলে কী হবে?
যদি তেমনটা হয় তাহলে সব হিন্দু, জৈন প্রভৃতি, অর্থাৎ প্রতিবেশী দেশের অমুসলিম অভিবাসীরা এনআরসি থেকে যাঁদের বাদ পড়ার আশঙ্কা ছিল তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে সরকার এনআরসি কাজে লাগিয়ে, অমিত শাহের ভাষায় "প্রতিটি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে ও তাড়িয়ে দিতে" সক্ষম হবে।
Read the Full Story in English