১৯৮৪ সালের ভোপালের ভয়াবহ গ্যাস দুর্ঘটনার কথা মনে করিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপতনমের এক গ্যাস লিকের ঘটনায় পাঁচটি গ্রামের হাজার হাজার বাসিন্দা অসুস্থ, অন্তত ১০ জন মৃত। বিশাখাপতনম থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে গোপালপাতনমের আরআরভি পুরমে দক্ষিণ কোরিয়ার বিশাল ইলেকট্রনিক সংস্থা এলজি-র একটি স্টাইরিন প্ল্যান্টে এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী আরআরভিপুরম, ভেঙ্কটপুরম, বিসি কলোনি, পদ্মপুরম এবং কামপারাপালেম গ্রামের বাসিন্দারা রাস্তার উপরেই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। দীর্ঘক্ষণ গ্যাসের মধ্যে থাকার জেরে ৬ জন মারা যান, দুজনের মৃত্যু হয় পালাতে গিয়ে।
স্টাইরিন কী?
এটি একটি দাহ্য তরল পদার্থ যা পলিস্টাইরিন প্লাস্টিকস, ফাইবার গ্লাস, রাবার ও ল্যাটেক্স তৈরিতে কাজে লাগে। মার্কিন ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন পরিচালিত ওয়েবসাইট টক্স টাউনে বলা হয়েছে, গাড়ির নিষ্কাশন, সিগারেটের ধোঁয়া এবং সবজি ও ফলের মত প্রাকৃতিক খাদ্যেও স্টাইরিন থাকে।
নর্দমার জল থেকে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কার কথা বলছেন গবেষকরা
স্টাইরিনের জেরে কী ক্ষতি হতে পারে ?
মার্কিন সংস্থা এনভায়ার্নমেন্ট প্রটেকশন এজেন্সি (EPA)-র বক্তব্য অনুসারে, স্বল্পসময়ের জন্য এই গ্যাসের মধ্যে থাকলে শ্বাসকষ্ট, চোখে অস্বস্তি, মিউকাস মেমব্রেনে অসুবিধা এবং খাদ্যযন্ত্রের সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘকালীন এক্সপোজারে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।
কিছু ক্ষেত্রে এর ফলে ক্যানসার ও ডিপ্রেশনের মত অসুস্থতাও দেখা দিতে পারে। তবে স্টাইরিনের জেরে লিউকোমিয়া বা লিম্ফোমিয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে যথেষ্ট প্রমাণ নেই বলে জানিয়েছে EPA।
উপসর্গ কী?
উপসর্গের মধ্যে রয়েছে মাথা ব্যথা, শ্রবণক্ষমতা লুপ্তি, ক্লান্তি, দুর্বলতা, মনঃসংযোগে সমস্যা।
EPA-র মতে পশুর উপর পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, লিভার, কিডনি এবং চোখ ও নাকে অসুবিধা বোধ হতে পারে।
বুদ্ধ পূর্ণিমা: কেন আম্বেদকর বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন?
বিশাখাপতনমের পরিস্থিতি কতটা খারাপ?
মৃত্যুর ঘটনা সরাসরি স্টাইরিনের প্রভাবে ঘটেছে নাকি তার অন্যকোনও বাইপ্রোডাক্টের ফলে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিশাখাপতনমের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার মীনা বলেছেন এই গ্যাস বিষাক্ত নয়, কেবলমাত্র দীর্ঘক্ষণ এই গ্যাসের মধ্যে থাকলে মৃত্যু ঘটতে পারে।
তবে বহু শিশু সহ কয়েকশ মানুষ হাসপাতালে ভর্তি। গ্যাস লিকের ঘটনা ভোর তিনটের সময়ে ঘটায় নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থা নিতে দেরি হয়েছে এবং ঘুমন্ত মানুষের মধ্যে গ্যাস ছড়িয়ে গিয়েছে বলে এত বেশি অসুস্থতার ঘটনা ঘটেছে।
আধিকারিকরা বলছেন, তাঁরা সঙ্গে সঙ্গেই স্পিকারে বিষয়টি ঘোষণা করেন, কিন্তু ততক্ষণে অনেকেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ পুলিশকে দরজা ভেঙে মানুষজনকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়।
গ্যাস লিকের কারণ কী?
এলজি পলিমার্সের তরফ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে স্টোরেজ ট্যাঙ্কের ভিতর আবদ্ধতা এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পলিমারাইজেশনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে, যার জেরে এই কাণ্ড। এক বিবৃতিতে সংস্থা জানিয়েছে আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। সিল করে দেওয়ায় এখন আর গ্যাস লিক ঘটছে না। চার ঘণ্টা অপেক্ষা করব, এর পর পুরো খুঁটিয়ে পরিদর্শন করে তবেই আমরা অল ক্লিয়ার সিগন্যাল দেব।
গ্যাস লিকের সময়ে ১৮০০ টন স্টাইরিন ওই প্ল্যান্টে মজুত ছিল।
পরিস্থিতি কি এখন নিয়ন্ত্রণে?
লিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এনডিআরএফ-এর একটি দল পাঁচটি গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে দেখছে কেউ কোথাও আটক রয়েছেন কিনা। আধিকারিকরা বলেছেন, কোভিড-১৯-এর প্রস্তুতির জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ভেন্টিলেটর সহ বেশ কিছু অ্যাম্বুলেন্স সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া গিয়েছে। একনও পর্যন্ত মনে করা হচ্ছে ঘটনাস্থলের পাঁচ কিলোমিটার ব্যাস পর্যন্ত এই ঘটনার প্রভাব পড়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন