বুধবার আসামের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছেন আসামের চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বাতিল করা উচিত এবং সারা ভারতের জন্য এনআরসি প্রস্তুত করা উচিত, যার একটি নির্দিষ্ট কাট অফ তারিখ থাকা উচিত। তাঁর এই বক্তব্যের আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে সারা দেশে এনআরসি নিয়ে বক্তব্য রাখেন। গুয়াহাটির এক সাংবাদিক সম্মেলনে হিমন্ত বিশ্বশর্মা অমিত শাহের বক্তব্যকে স্বাগত জানান। অমিত শাহের বক্তব্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলেরও উল্লেখ করা হয়েছে।
আসাম এনআরসি-র কাট অফ তারিখ কী?
আসামের অবৈধ অভিবাসী স্থির করার জন্য ২৪ মার্চ, ১৯৭১ দিনটিকে স্থির করা হয়েছে। ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তির ভিত্তিতেই এই তারিখ নির্দিষ্ট। ওই দিনটিকেই আসাম এনআরসি-র কাট অফ তারিখ নির্ধারিত করা হয়। যেসব আবেদনকারীরা ওই দিনে বা তার আগে নিজের বা পূর্বপুরুষের উপস্থিতি প্রমাণ করতে পেরেছেন, তাঁদের এনআরসি অনুসারে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ধরা হবে।
আরও পড়ুন, এনআরসি চালুর আগে কেন নাগরিত্ব সংশোধনী বিল(CAB) পাশ করাতে উদগ্রীব কেন্দ্র?
দেশে প্রথম এনআরসি তৈরি হয়েছিল আসামে, ১৯৫১ সালে। এবারের এনআরসি-তে ১৯৭১ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরে যোগ্য ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। ১৯৫১ সালের এনআরসি-তে যাঁদের নামছিল তাঁরা এবং তাঁদের উত্তর প্রজন্ম আপডেটেড এনআরসি-তে স্বাভাবিক ভাবেই স্থান পাবেন। একই সঙ্গে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাত্রি পর্যন্ত যাঁদের বা যাঁদের উত্তরসূরীদের নাম ভোটারলিস্টে রয়েছে তাঁরাও এনআরসি-তে স্থান পাবেন।
গত ৩১ অগাস্ট চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশিত হয়েছে। তাতে ১৯ লক্ষ আবেদনকারীর নাম বাদ গিয়েছে। তাঁরা এর বিরুদ্ধে রাজ্যের ফরেনার্স ট্রাইবুনালে আবেদন করার অনুমতি পাবেন।
নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল এই আলোচনায় কীভাবে ঢুকে পড়ল?
অমিত শাহ এর আগে বলেছেন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) সারা ভারতে এনআরসি লাগুর আগে পাশ করানো হবে। সংসদের এবারের শীতকালীন অধিবেশনেই ক্যাব আনার কথা।
এ বছরের গোড়ায় রাজ্যসভায় আনার আগেই বিল তামাদি হয়ে যায়। এই বিলে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আফগানিস্থান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসা ওই দেশগুলির ৬টি সংখ্যালঘু (অমুসলিম) সম্প্রদায়ের মানুষকে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ ছাড় দেবার কথা বলা হয়েছে বিলে। ওই ছটি ধর্ম হল, হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং ক্রিশ্চান।
আসাম এনআরসি-তে এর কী প্রভাব পড়বে?
উত্তরপূর্ব ভারতের প্রভাবশালী অংশ এবং রাজনৈতিক দলগুলি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধী এবং শুরু থেকেই এ ব্যাপারে তাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছেন। তাঁদের দাবি, ক্যাব ও এনআরসি পরস্পরবিরোধী।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: এনপিআর কী, এ নিয়ে এত বিতর্ক কেন?
বিল যদি পাশ হয়, আসামে তার সবচেয়ে প্রভাব পড়বে এনআরসি তালিকাছুট হিন্দুদের উপরে। তাঁরা নির্দিষ্ট নিয়মের সুযোগবলে নাগরিকত্ব অর্জন করে ফেলবেন, অন্যদিকে মুসলমানরা বিদেশি হিসেবে গণ্য হবেন। এরকম পরিস্থিতিতে বর্তমান এনআরসি অর্থহীন হয়ে পড়বে।
বর্তমান এনআরসি নিয়ে বিজেপি অখুশি কেন?
হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছেন, বর্তমান এনআরসি রাজ্য সরকারের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয় কারণ এতে বাদ দেওয়া উচিত এমন বহু মানুযের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং পাশাপাশি যথার্থ ভারতীয় নাগরিকরা বাদ পড়েছেন। রাজ্য সরকার এবং বিজেপির রাজ্য শাখা চূড়ান্ত এনআরসি নিয়ে তাদের অসন্তোষ ব্যক্ত করেছে এবং বারবার প্রাক্তন এনআরসি কো অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলার সমালোচনা করেছেন। প্রতীক হাজেলাকে সুপ্রিম কোর্ট বদলিও করে দিয়েছে।
চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশের দিন রাজ্যের বিজেপি সভাপতি রঞ্জিত দাস বলেন, সরকার এর আগে আসামে যত বিদেশি নাগরিক রয়েছে বলে ধারণা করেছিল, ১৯ লক্ষ সংখ্যাটা তার চেয়ে অনেকটাই কম। তিনি বলেন ভূমিপুত্র এবং যথার্থ নাগরিকদের নাম বাদ পড়েছে।