Advertisment

কোভিড-১৯ উপসর্গবিহীন সংক্রমণ কতটা গুরুতর, তথ্যপ্রমাণ কী বলছে

ICMR-র সংক্রামক রোগ বিষয়ক প্রধান ডক্টর আরআর গঙ্গাখেড়েকর এপ্রিল মাসে বলেছিলেন ভারতে কোভিড-১৯ রোগীদের ৬৯ শতাংশ উপসর্গবিহীন। ওই সংস্থারই একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ৩০ এপ্রিল ২৮ শতাংশ উপসর্গবিহীন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Covid 19 Asymptomatic

সাধারণভাবে উপসর্গবিহীন সংক্রমণ যাঁদের অন্য অসুস্থতা নেই তেমন অল্পবয়সীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে

সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড ১৯ বিষয়ক টেকনিক্যাল টিমের প্রধান মারিয়া ভ্যান কেরখোভে দাবি করেন উপসর্গবিহীন সংক্রমণ অতি দুর্লভ। এ নিয়ে বহুরকম প্রশ্ন ওঠার পর হুয়ের তরফ থেকে সোশাল মিডিয়ায় এক কথোপকথনের আহ্বান করা হয়, যেখানে মারিয়া বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেছেন উপসর্গবিহীন সংক্রমণ ঘটে এবং কিছু গবেষণায় এ ধরনের সংক্রমণের পরিমাণ ৪০ শতাংশের মত।

Advertisment

কোভিড১০ অতিমারীর সময়ে উপসর্গবিহীন সংক্রমণের মত ঘটনা কেন গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যপ্রমাণ কী বলছে একবার দেখে নেওয়া যাক।

উপসর্গবিহীন সংক্রমণ কী?

যেসব ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তির জ্বর, গায়ে ব্যথা, কাশির মত কোনও উপসর্গ নেই, তখন তাঁর থেকে অন্য ব্যক্তিতে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঘটনাই উপসর্গবিহীন সংক্রমণ।

বর্তমানে সংক্রমিত ও মোট সুস্থের সংখ্যা তুলনাযোগ্য নয়

বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই ভাইরাস অতি সংক্রামক। যদি হুয়ের প্রাথমিক দাবি মত উপসর্গবিহীন সংক্রমণ দুর্লভ হত, তাহলে সার্বজনীন ভাবে মাস্কের ব্যবহার কমত। সেরকম ক্ষেত্রে যাঁদের উপসর্গ রয়েছে তাঁরাই কেবল মাস্ক ব্যবহার করতেন যাতে তাঁদের থেকে সংক্রমণ না ছড়ায়। একই সঙ্গে এই ভাইরাসকে আটকে রাখাও সহজতর হত, যদি ওই ব্যক্তি নিজেকে আইসোলেট করে রাখতেন।

উপসর্গবিহীন সংক্রমণ কত দূর হতে পারে?

এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত রয়েছে, তবে সব হিসেবই বলছে এরকম ঘটে। চিন থেকে নেচার মেডিসিনে ১৫ এপ্রিল প্রকাশিত এক গবেষণায় দেওয়া হিসেব মত যাঁদের অসুখ হয়েছে, তাঁদের ৪৪ শতাংশের ক্ষেত্রে সংক্রমণ হয়েছে উপসর্গবিহীনদের কাছ থেকে।

হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ে এই গবেষণা করেছেন গুয়াংঝাউ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি এবং হু কোলাবোরেটিং সেন্টার ফৎ ইনফেকশাস ডিজিজ এপিডেমিওলজি অ্যান্ড কন্ট্রোল। গুয়াংঝাউ এইটথ পিপলস হাসপাতালে ভর্তি ৯৪ জন কোভিড-১৯ রোগীর উপর এই গবেষণা করা হয়েছে।

হোম কোয়ারান্টিনের সেরা অভ্যাস

হুয়ের দ্বিতীয় কথোপকথনে মারিয়া ভ্যান কেরখোভে বলেছেন উপসর্গবিহীন সংক্রমণ নিয়ে তাঁর বিবৃতি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।

নিজের অবস্থান বদল করে তিনি বলেন, “দু-তিনটি গবেষণা রয়েছে যা উপসর্গবিহীন সংক্রমণের কেউ বেশ কিছু সময় ধরে অনুধাবন করে আসছে এবং সমস্ত সংস্পর্শিতদের উপর লক্ষ্য রেখে সিদ্ধান্তে পৌঁছিয়েছে যে এ ধরনের সংক্রমণ হয়নি, কিন্তু এই গবেষণার সংখ্যা নেহাৎই কম। আমরা যা জানি তা বলতে চেয়ে আমি অতি দুর্লভ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছি এবং তা নিয়ে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে... আমি গতকাল যা বলিনি তা হল বেশ কিছু মডেলিং স্টাডি রয়েছে যেখানে দেখানো হচ্ছে ৪০ শতাংশ সংক্রমণ উপসর্গবিহীনদের থেকে হতে পারে। তবে এটা একটা মডেলিং স্টাডি, সে কারণে আমি গতকাল আমার উত্তরে এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করিনি।” তবে তিনি বলেন, কত শতাংশ উপসর্গবিহীন অন্যদের সংক্রমিত করেছেন, এটা একটা খোলা প্রশ্ন। তিনি সংখ্যা হিসেবে ৬-৪১ শতাংশের উল্লেখ করেছেন।

উপসর্গবিহীনদের ব্যাপারে ভারতের হিসেব কী?

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) দেশের উপসর্গবিহীন সংক্রমিতদের নিয়ে বিভিন্ন সংখ্যা দিয়েছে। সংস্থার সংক্রামক রোগ বিষয়ক প্রধান ডক্টর আরআর গঙ্গাখেড়েকর এপ্রিল মাসে বলেছিলেন ভারতে কোভিড-১৯ রোগীদের ৬৯ শতাংশ উপসর্গবিহীন। ওই সংস্থারই একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সমস্ত পজিটিভ কেসে ৪০১৮৪ জনের মধ্যে ২৮ শতাংশ উপসর্গবিহীন। পরের সংখ্যার সঙ্গে হুয়ের হিসেবের মিল রয়েছে। সাধারণভাবে উপসর্গবিহীন সংক্রমণ যাঁদের অন্য অসুস্থতা নেই তেমন অল্পবয়সীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে।

যে উপসর্গবিহীন ব্যক্তির হাঁচি বা কাশি হচ্ছে না, তিনি কীভাবে ড্রপলেটের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়াতে পারেন?

করোনাভাইরাস সার্স কোভ ২ ভাইরাস ঊর্ধ্বশ্বাসনালীতে বাসা বাঁধে। সে কারণেই মনুষ্য শরীর থেকে নির্গত ড্রপলেটের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়।

গত অগাস্ট থেকেই করোনাভাইরাস চিনে? ইঙ্গিত গবেষণায়

হুয়ের হেলথ এমার্জেন্সি প্রোগ্রামের একজিকিউটিভ ডিরেক্টর ডক্টর মাইকেল রায়ান বলেছেন, “সাধারণত উপসর্গযুক্তদের থেকে হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে। কিন্তু উপসর্গবিহীনদের থেকেও এই রোগ ছড়াতে পারে যেমন তিনি যখন গান করছেন বা জিমে ভারী শ্বাস নিচ্ছেন, বা নাইটক্লাবে যখন খুব নিকটে থাকা কাউকে নিজের কথা শোনানোর জন্য  চিৎকার করছেন। মূলত বিষয়টা হল যখন চাপের মধ্যে থেকে আপনি বায়ু নিঃসরণ করেন, তখন ড্রপলেট সংক্রমণ ঘটতে পারে।”

 যদি কোভিড ১৯-এর উপসর্গবিহীনরাও রোগ ছড়ান, তাহলে কী করে নিরাপদে থাকা যায়?

মাস্কের সার্বজনীন ব্যবহার শুরুর পক্ষে সবচেয়ে ভাল। এর ফলে উপসর্গবিহীন যাঁরা নিজেদের সংক্রমণ সম্পর্কে অবহিত নন তাঁদের থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা কমবে। যে কোনও ব্যক্তির থেকে এক মিটারের দূরত্ব বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়, এ ছাড়া হাত ধোয়া ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য রক্ষা করা তো রয়েইছে।

যেসব ওষুধ নিয়ে কোভিডের সঙ্গে লড়াই করছে ভারত

বাড়িতেও মাস্ক পরা ভাল, বিশেষ করে যদি বয়স্ক মানুষ থাকেন। কিন্তু তা যদি সম্ভব নাও হয়, হাঁচি বা কাশির সময়ে বাহু দিয়ে মুখ ঢাকা উচিত। যাঁরা সংক্রমিত এলাকায় বাস করেন কিন্তু গণপরিবহণ বা জনপরিসরের মত ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারেন না, তাঁদের কাপড়ের মাস্ক ব্যবহারের সুপারিশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

WHO COVID-19
Advertisment