/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/10/sunni-waqf.jpg)
ফাইল ছবি
বুধবার অযোধ্যায় রামজন্মভূমি মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। এদিকে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত মধ্যস্থতাকারী প্যানেল বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে মতৈক্যের ভিত্তিতে একটি নতুন সমঝোতা রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এ ধরনের যে কোনও সমঝোতাতেই এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ পার্টি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ ওয়াকফ সম্পত্তির প্রশাসনিক বিষয়টি আইনি উপায়ে স্থিরীকৃত হয়ে থাকে।
ওয়াকফ কী?
ওয়াকফ হল ঈশ্বরের নামাঙ্কিত সম্পত্তি যা ধর্মীয় ও দাতব্য কারণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আইনি পরিভাষায় এ হল ইসলাম পক্ষাবলম্বী কারও স্থায়ী রূপে দান করা কোনও স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি যা মুসলিম আইনানুসারে ধার্মিক, বা দাতব্য। কোনও দলিলের মাধ্যমেও যেমন কোনও ওয়াকফ তৈরি করা যেতে পারে, তেমনই দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় বা দাতব্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসা কোনও সম্পত্তিও ওয়াকফ বলে গণ্য হতে পারে। সাধারণভাবে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোনও সমাধিস্ত, মসজিদ এবং এতিমখানা চালানোয় অর্থসাহায্য করার জন্য এ পদ্ধতি গৃহীত হয়।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: মহারাষ্ট্র বিজেপির নির্বাচনী ইস্তেহারে কেন সাভারকরের ভারতরত্ন প্রসঙ্গ
কোনও ব্যক্তি ওয়াকফ করার পর আর সেই সম্পত্তি ফেরত নিতে পারেন না এবং ওয়াকফ চলতেই থাকে। কোনও অমুসলিম ব্যক্তিও ওয়াকফ তৈরি করতে পারেন, তবে সেই ব্যক্তিতে ইসলামের পক্ষাবলম্বী হতে হবে এবং ওয়াকফ তৈরির উদ্দেশ্যও ইসলামি হতে হবে।
ওয়াকফ প্রশাসিত হয় কীভাবে?
ভারতে ওয়াকফ আইন ১৯৯৫ অনুসারে ওয়াকফ প্রশাসন চালিত হয়। এই আইনের আওতায় একজন সার্ভে কমিশনার ওয়াকফ হিসেবে ঘোষিত সমস্ত সম্পত্তি স্থানীয় ভাবে তদন্ত করে, সাক্ষীদের ডেকে পাঠিয়ে এবং কাগজপত্র পরীক্ষা করার পর এই সম্পত্তি তালিকাভুক্ত করেন। ওয়াকফের ম্যানেজার হিসেবে যিনি কাজ করেন তাঁকে বলা হয় মুতাওয়ালি, যিনি সুপারভাইজরের দায়িত্ব পালন করেন। এটা অনেকটা ১৯৮২ সালের ভারতীয় ট্রাস্ট আইনের মতই, তবে ট্রাস্ট ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যের চেয়ে বৃহত্তর উদ্দেশ্যেও গঠিত হতে পারে। কোনও ট্রাস্ট গঠিত হওয়ার পর ভেঙে দেওয়াও যেতে পারে, যা ওয়াকফের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়।
ওয়াকফ বোর্ড কী?
ওয়াকফ বোর্ড আইনিভাবে কোনও সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও দখল করতে পারে এবং সে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে। এটি আইনি বিধিমতে তৈরি বলে আদালতে সে নিজেও মামলা করতে পারে বা তার বিরুদ্ধেও মামলা হতে পারে।
সমস্ত রাজ্যেরই একটি করে ওয়াকফ বোর্ড রয়েছে। এ বোর্ডের শীর্ষে রয়েছেন একজন চেয়ারপার্সন। এ ছাড়া রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এক বা দুজন মনোনীত ব্যক্তি, মুসলিম ধর্মাবলম্বী বিধায়ক বা সাংসদ, রাজ্য বার কাউন্সিলের মুসলিম সদস্য, পরিচিত ইসলাম ধর্মবিশারদ এবং ওয়াকফের মুতওয়ালিরা এই বোর্ডের সদস্য। মুতওয়ালিদের বার্ষিক আয় এক লক্ষ টাকা বা তার বেশি হতে হবে।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: প্রধানমন্ত্রী মোদীর জঞ্জাল সাফ
ওয়াকফ বোর্ডের হাতে আইনগত ভাবে সম্পত্তির দেখভালের ক্ষমতা রয়েছে, তাঁরা ওয়াকফের হৃত সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যবস্থাগ্রহণ করতে পারেন, ওয়াকফের অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি, উপহার, বন্ধক, বদলাবদলি বা লিজ দেবার অনুমতি দিতে পারেন। তবে এই অনুমতির ব্যাপারে ওয়াকফ বোর্ডের দুই তৃতীয়াংশের সম্মতি থাকতে হবে।
অযোধ্যার বিতর্কিত এলাকার সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের সম্পর্ক কী?
ওয়াকফ আইনানুসারে উত্তর প্রদেশ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের হাতে বিতর্কিত জমি তদারকির ক্ষমতা রয়েছে। ১৯৪৫ সালে ফৈজাবাদের বিচারকের এজলাশে সুন্নি বনাম শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের মামলায় স্থির হয় বাবরি মসজিদ একটি সুন্নি ওয়াকফ। ১৯৮৯ সালে উত্তর প্রদেশের সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড বিবাদী হয়।
বিতর্কিত জমির অধিকার কি ওয়াকফ বোর্ড ছেড়ে দিতে পারে?
সুন্নি ওয়াকফ একতরফা ভাবে হস্তান্তর করা যায় না, ফলে ওয়াকফের চেয়ারপার্সনের কোনও একতরফা দাবির কোনও আইনি মূল্য নেই বা মুসলিম সম্প্রদায়কেও তা মেনে চলতে বাধ্য করা যায় না। রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের সম্মতি ছাড়া ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তর একটি অপরাধ এবং এ ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য ওয়াকফ আইনানুযায়ী বিশেষ ট্রাইবুন্যালও রয়েছে।
অযোধ্যা মামলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করছে সাতটি পক্ষ। এর মধ্যে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড ছাড়া রয়েছেন ৬জন ব্যক্তিবিশেষ। শুনানি শেষ হয়ে যাবার পর যখন রায়দান মুলতুবি রয়েছে, সে সময়ে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের পক্ষে মামলা প্রত্যাহারের যথেষ্ট দেরি হয়ে গিয়েছে। এখন যদি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড মামলা প্রত্যাহার করতেও চায়, তাহলে বোর্ডের দুই-তৃতীয়াংশের সম্মতি লাগবে, যার মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরাও রয়েছেন। অন্য আবেদনকারীরা তাঁদের সম্প্রদায়ের হয়ে মামলা চালাতে পারবেন।
Read the story in English