/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/06/mamata-1.jpg)
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য রাজ্যপালের বদলে মুখ্যমন্ত্রী। এই বিল পাশ হয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে রাজ্যপালের ক্ষমতা খর্ব করার পদক্ষেপ করেছে কয়েকটি রাজ্য, কিন্তু আচার্যের পদ যায়নি রাজ্যপালের। বর্তমানে এ রাজ্যের এই লাফ ঐতিহাসিক-- কিন্তু… অতঃ কিম! পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধনী আইন নামে বিলটি বিধানসভায় পাশ হলেই তো হবে না, এবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সম্মতি পেতে হবে। যাঁকে সরানোর জন্য বিল তাঁরই সম্মতির অপেক্ষা এবার, এটা বিদ্রুপাত্মক বটে! কিন্তু কিচ্ছুটি করবার নেই, এমনই এটাই ,সাংবিধানিক পথ!
রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক 'বন্ধুর'। ফলে যদি পাশ হওয়া বিলে স্বাক্ষর নিয়ে রাজ্যপালের তরফে ঠান্ডাঘর-প্রবণতা দেখা যায়, তা হলে অর্ডিন্যান্স এনে এই কাজটি সারা হতে পারে, এমনও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে রাজ্যের তরফে। কিন্তু অর্ডিন্যান্স একটি স্টপ-গ্যাপ বন্দোবস্ত। দুই অধিবেশনের ফাঁকে, বা যখন অধিবেশন চলছে না, সেই সময় এটি আনা হয়ে থাকে। এর মেয়াদ ছ'সপ্তাহ।
কী করতে পারেন ধনখড়?
রাজ্যপাল বিলে সম্মতি দিতে পারেন। এবং তা হলে তো ল্যাটা চুকেই গেল। সম্মতির সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখতে পারেন। যেমন অনেক বিলই অপেক্ষায় রয়েছে। ফের বিলটিকে বিধানসভায় পাঠাতে পারেন। বদলের লক্ষ্যে। কিন্তু যদি সংশোধন করে কিংবা অবিকৃত ভাবেই বিধানসভায় ফের বিলটি পাশ হয়ে যায়, তার পর রাজ্যপালের কাছে সেইটি এসে পৌঁছলে তাঁর হাতে বিলে স্বাক্ষর ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই।
তবে এখানে একটি চতুর্থ পথ রয়েছে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা। রাজ্যপাল বিল-কে বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারেন। রাষ্ট্রপতি বিলে সম্মতি দিতে পারেন আবার বিল-কে পুনর্বিবেচনার জন্য ফের বিধানসভায় পাঠানোর নির্দেশ দিতে পারেন। বিধানসভায় পরিবর্তন করে বা না করে বিল পাশ করার পর ফের তা যদি যায় রাষ্ট্রপতির কাছে, তা হলে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রাখতে পারেন রাষ্ট্রপতি, সংবিধানে স্থগিত রাখার এই ব্যাপারে কোনও সময়সীমা নির্ধারণ করা নেই।
আচার্য হিসেবে কী ক্ষমতা রাজ্যপালের ?
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য নিয়োগের ক্ষমতা রয়েছে রাজ্যপাল তথা আচার্যের। বেশির ভাগ রাজ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। এবং সেই কমিটির নিয়োগ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও আচার্যের আছে। তিনিই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সমাবর্তনের সভাপতি হয়ে থাকেন। কয়েকটি রাজ্যে অবশ্য উপাচার্য নিয়োগের কোনও ক্ষমতা কার্যত নেই রাজ্যপালের, যদিও তিনিই কিন্তু আচার্য। আবার কয়েকটি রাজ্যে এ ব্যাপারে রাজ্যপালের ক্ষমতা একেবারে সীমাবদ্ধ। তেলেঙ্গানা এবং গুজরাতের ক্ষেত্রে, যে গুটিকয় নাম রাজ্য সরকার মনোনীত করে পাঠায়, রাজ্যপালকে তার মধ্য থেকেই উপাচার্যের নামটি বেছে নিতে হয়।
১৯৪৯ সালের গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয় আইন বলছে, সার্চ-কাম-সিলেকশন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী রাজ্য সরকার যে তিন জনের নাম পাঠাবে, তার মধ্য থেকেই উপাচার্যকে বেছে নিতে হবে। ১৯৯১ সালের তেলেঙ্গনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বলছে, সরকারের কাছে তিন জনের একটি প্যানেল পেশ করতে হবে বর্ণানুক্রমিক ভাবে, সরকার তার মধ্য থেকে উপাচার্য নিয়োগ করবে।
আরও কয়েকটি রাজ্যেও একই বিসংবাদ
এখনও পর্যন্ত কোনও রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার কোনও আইন না হলেও, আচার্যের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। এপ্রিলে ডিএমকে শাসিত তামিলনাড়ুতে দুটি বিল পাশ হয়েছে, যাতে সেখানকার ১৩টি রাজ্য চালিত বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
মহারাষ্ট্র ও কেরলের পথ কী?
গত ডিসেম্বরে মহারাষ্ট্র বিধানসভায় মহারাষ্ট্র পাবলিক ইউনিভার্সিটিস অ্যাক্ট পাশ হয়েছে। তাতে উপাচার্য নিয়োগে রাজ্যপালের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। যদি আইনের এই বদল কার্যকর হয়, তা হলে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস শাসিত এই রাজ্যে দুটি নামের মধ্য থেকে উপাচার্য বেছে নিতে হবে রাজ্যপালকে। কেরলে কান্নুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বাম শাসিত এই রাজ্যের রাজ্যপালের অভিযোগ, তাঁর অনিচ্ছায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছে। ওড়িশায় বিজেডি সরকারও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে চেয়েছে। কিন্তু সেইটি ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন ইউজিসি-তে প্রতিরোধের মুখে পড়েছে।
আরও পড়ুন- সেনা নিয়োগে ‘অগ্নিপথ’, কী এই প্রকল্প, কীভাবে করবে নিয়োগ?
কী বলছে ইউজিসি?
শিক্ষা কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ তালিকায়। ফলে এ নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য দু'পক্ষই আইন আনতে পারে। যদিও কেন্দ্রীয় তালিকায় ৬৬ নম্বর অনুযায়ী, উচ্চশিক্ষায় কেন্দ্রের উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা রয়েছে। ইউজিসি-র কাজটা হচ্ছে মান নির্ধারণ করে দেওয়া। এমনকি নিয়োগের ক্ষেত্রেও। ইউজিসি রেগুলেশন ২০১৮ অনুযায়ী-- সার্চ-কাম-সিলেকশন কমিটির প্রস্তাবিত নাম থেকে কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল উপাচার্য নিয়োগ করবেন। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি, বিশেষ করে যারা ইউজিসি-র গ্রান্ট পেয়ে থাকে, তাদের ইউজিসি-র নিয়মাবলি মেনে চলতেই হয়।
Read full story in English