রাজা তৃতীয় চার্লস শনিবারই (১০ সেপ্টেম্বর) ব্রিটেনের সিংহাসনে বসেছেন। তাঁর মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। তারই সঙ্গে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড চার্লসকে তাঁদের দেশেরও রাজা বলে ঘোষণা করেছে। তার মধ্যে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক বিবৃতিতে বলেছেন, "কানাডা সরকারের পক্ষ থেকে, আমরা কানাডার নতুন রাজা, মহামান্য রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রতি আমাদের আনুগত্য নিশ্চিত করছি। তাঁকে আমাদের পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি।"
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন, গভর্নর জেনারেল সিন্ডি কিরো, স্পিকার অ্যাড্রিয়ান রুরাওয়ের সঙ্গে পার্লামেন্টে তৃতীয় চার্লসের দেশের রাজা হওয়ার কথা ঘোষণা করেন। অস্ট্রেলিয়ার গভর্নর জেনারেল ডেভিড হার্লি সংসদ ভবনে রাজা চার্লসকে ২১ বন্দুকের স্যালুট-সহ দেশের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় ব্রিটিশ রাজার প্রতিনিধি হলেন গভর্নর জেনারেল।
"কমনওয়েলথভুক্ত রাজ্য" কী?
কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড- এই তিনটি দেশই "কমনওয়েলথভুক্ত রাজ্য"। কমনওয়েলথ হল ১৪টি দেশের একটি গোষ্ঠী (ব্রিটেন বাদে)। যারা ব্রিটেনের রাজাকে তাদের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এটা সেসব দেশের সংবিধান এবং আইনেও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। তালিকায় কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড ছাড়াও রয়েছে অ্যান্টিগুয়া এবং বারবুডা, বাহামা, বেলিজ, গ্রেনাডা, জ্যামাইকা, পাপুয়া নিউ গিনি, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডাইনস, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এবং টুভালু।
এরমধ্যে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে রয়েছে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। এই সব দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাগুলো এমন যে ব্রিটেনের নতুন রাজা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবে এই সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে ওঠেন। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় যদিও একটি শক্তিশালী প্রজাতন্ত্রী মনোভাব রয়েছে। চলতি বছরের জুনেই, প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজের নেতৃত্বে নতুন সরকার ম্যাট থিসলওয়েটকে দেশের প্রথম মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেছে। তাঁর দায়িত্ব, দেশকে প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত করা। এই আলোচনার সূত্রপাতে উঠে এসেছে যে একটি গণভোট দরকার। যা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রানিকে অপসারণ করতে পারে।
একইভাবে তৃতীয় চার্লসকে রাষ্ট্রপ্রধানের পদ থেকে সরাতে হলেও অস্ট্রেলিয়ায় গণভোট প্রয়োজন। অথবা বিধিবদ্ধ আইন দরকার। যা গণভোটের রাস্তা খুলে দেবে। এই ব্যাপারে জ্যামাইকা অন্যতম উদাহরণ। কারণ, জ্যামাইকা তার প্রতিবেশী বার্বাডোসকে অনুসরণ করতে চায়। বার্বাডোস ২০২১ সালে প্রজাতন্ত্র হওয়ার পরে কমনওয়েলথ গোষ্ঠী ত্যাগ করেছে।
আরও পড়ুন- রাজভক্ত ব্রিটেনবাসী আগেই এমনটা দেখতে চেয়েছিলেন, শেষে রানির মৃত্যু জুড়ল ভাঙা রাজপরিবার
কমনওয়েলথ অফ নেশনস কী?
এটি ৫৬টি সদস্য দেশের একটি গোষ্ঠী। যার মধ্যে বেশিরভাগই প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশ। তারা বেশিরভাগই আফ্রিকা, এশিয়া, আমেরিকা এবং প্রশান্ত মহাসাগরের। তিনটি ইউরোপীয় দেশও কমনওয়েলথ অফ নেশনসের অংশ- সাইপ্রাস, মাল্টা এবং অবশ্যই ব্রিটেন।
১৪টি কমনওয়েলথ রাজ্যও বৃহত্তর কমনওয়েলথের অংশ। অবশিষ্ট ৪১টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ৩৬টি প্রজাতন্ত্র। এই গোষ্ঠীতে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা। অন্য পাঁচটি দেশ ব্রুনাই দারুসসালাম, লেসোথো, মালয়েশিয়া, এসওয়াতিনি (পূর্বে সোয়াজিল্যান্ড) এবং টোঙ্গার নিজস্ব রাজা রয়েছে।
বৃহত্তর কমনওয়েলথের বৈশিষ্ট্য হল কমনওয়েলথ গেমসে অংশগ্রহণ। আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতা প্রতি চার বছর অন্তর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। কমনওয়েলথ গেমস ২০১০ ভারতে আয়োজিত হয়েছিল। সর্বশেষ কমনওয়েলথ গেমস গত মাসে ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে শেষ হয়েছে। তবে, শুধু খেলাই না। এই গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃসরকারি সহযোগিতা অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোয় মোট ২৫০ কোটি মানুষের বসবাস। যা, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ। যাঁদের বেশিরভাগেরই বসবাস ভারতীয় উপমহাদেশে। ছোট কমনওয়েলথ রাজ্যগুলো ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের শেষ নিদর্শনের প্রতিনিধি। এই গোষ্ঠী ব্রিটিশরাজকে ব্রিটেনের বাইরের প্রায় ২৫০ কোটি মানুষের সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ করে। মজার ব্যাপার হল, এতকিছুর পরও কমনওয়েলথ রাজ্যের অধিকাংশ জীবিত বাসিন্দাই ব্রিটেনের সঙ্গে সরাসরি কোনও সম্পর্ক অনুভব করেন না।
Read full story in English