মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) মহারাষ্ট্রের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী সুধীর মুনগান্টিওয়ার ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের কিংবদন্তি বাঘনখ রাজ্যে ফিরিয়ে আনার জন্য লন্ডনের ভিক্টোরিয়া এবং অ্যালবার্ট মিউজিয়ামের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছেন। এমওইউতে বলা হয়েছে যে কিংবদন্তি ওই অস্ত্রটি তিন বছরের জন্য ঋণের ভিত্তিতে মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে, এই সময়কালে এটি মহারাষ্ট্রজুড়ে জাদুঘরে প্রদর্শিত হবে।
বাঘনখ কী?
আক্ষরিক অর্থে 'বাঘের নখ'। মধ্যযুগীয় নখের মত খঞ্জর। যা, ভারতীয় উপমহাদেশজুড়ে ব্যবহৃত হত। নখের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য বা হাতের তালুর নিচে লুকিয়ে রাখার জন্য নকশা করা অস্ত্রটিতে চার বা পাঁচটি বাঁকানো শিকের মত ধারাল অংশ থাকে। যা একটি দস্তানা বা একটি দণ্ডের মাধ্যমে যুক্ত থাকে। এটি ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা বা হামলা রোখার জন্য ব্যবহৃত অস্ত্র। এর সাহায্যে চামড়া এবং মাংস সহজেই টুকরো টুকরো করা যেত।
ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের কিংবদন্তিতে বাঘনখের গুরুত্ব কী?
ইতিহাসে বাঘনখের সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যবহার করেছেন শিবাজি। তিনি আফজল খানকে ওই বাঘনখের সাহায্যে হত্যা করেছিলেন। আফজল খান ছিলেন বিজাপুরের আদিলশাহি রাজ্যের একজন সেনাপতি। কিংবদন্তি অনুসারে, তিনি প্রচণ্ড হিংস্র যোদ্ধা ছিলেন এবং ৭ ফুটেরও বেশি লম্বা ছিলেন। বিজাপুর রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্রোহ হয়। মারাঠারা বিভিন্ন অঞ্চল ছিনিয়ে নেয়। এরপরই শিবাজিকে ধরে আনার দায়িত্ব আফজল খানকে দিয়েছিলেন বিজাপুরের সুলতান।
শিবাজির বিরুদ্ধে আফজলকে পাঠিয়েছিলেন সুলতান
শিবাজির বাবা শাহজি ছিলেন আদিল শাহদের একজন জায়গিরদার। কিন্তু, ১৬৫০-এর দশকের মধ্যে, শিবাজি ক্রমশ বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। কোঙ্কনজুড়ে তিনি বিভিন্ন দুর্গ দখল করেন। আর, আদিলশাহি অঞ্চলের বিশাল অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনেন। দক্ষিণে আফজল খানের সাফল্যের পরিপ্রেক্ষিতে, মারাঠা নেতা শিবাজিকে পরাজিত করার জন্য বিজাপুরের সুলতান আফজল খানকে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী-সহ পাঠিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- কীভাবে ঘটেছিল দিল্লির আবগারি দুর্নীতি? কী অভিযোগ ইডির?
আফজলের বৈঠকের প্রস্তাব
আফজল খান কোঙ্কনের দিকে অগ্রসর হন। তিনি শিবাজির সঙ্গে বৈঠকের দাবি জানান। তিনি বলেন, 'অপ্রয়োজনীয় রক্তপাত এড়াতে এবং সমস্যা মেটানোর জন্য দু'জনের পরস্পরের সঙ্গে কথা বলা উচিত।' কিন্তু, শিবাজি বিশ্বাসঘাতকতার গন্ধ পেয়েছিলেন। তিনি তাঁর আস্তিনে একটি বাঘনখ লুকিয়ে বৈঠকে যান। বৈঠকের আগে আফজল খান শিবাজিকে আলিঙ্গন করার ছদ্মবেশে মারাঠা নেতাকে ছুরিকাঘাত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু, শিবাজি বর্ম পরেছিলেন। তিনি বাঘনখ আফজল খানের শরীরে ঢুকিয়ে দেন। আর, শিবাজির একজন সঙ্গী আফজল খানের শিরশ্ছেদ করেন। এরপর শিবাজির সৈন্যরা হামলা চালালে আফজল খানের সৈন্যরা ভয়ে পালিয়ে যান।