Advertisment

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা ক্যাব আসলে কী?

ভারতের প্রতিবেশী মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলির অমুসলিম অভিবাসীদের সহজে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবার জন্য এই বিলের অবতারণা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
CAB, What is CAB

কলকাতায় ক্যাব বিরোধী আন্দোলন (ছবি- শশী ঘোষ)

রাজ্যসভাতেও পাশ হয়ে গেল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল।বিলের বিরুদ্ধে উত্তর-পূর্ব ভারতে আন্দোলন জোরদার হয়েছে। আসাম অগ্নিগর্ভ। ত্রিপুরাও তথৈবচ। ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনকারী এ বিল রাজ্যসভায় পাশ হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করবার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে একবার দেখে নেওয়া যাক কী রয়েছে এই বিলে।

Advertisment

নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল কী?

এ বিলের উদ্দেশ্য ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী অবৈধ অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরকিত্ব দেবার জন্যই এই বিল। অন্যভাবে বললে, ভারতের প্রতিবেশী মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলির অমুসলিম অভিবাসীদের সহজে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবার জন্য এই বিলের অবতারণা।

আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: এনপিআর কী, এ নিয়ে এত বিতর্ক কেন?

১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ১২ মাস টানা ভারতে থাকার নিয়মের সঙ্গে বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতবাস জরুরি ছিল। এবারের সংশোধনীতে দ্বিতীয় অংশে পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে। উপরোক্ত দেশগুলি থেকে আনা নির্দিষ্ট ৬টি ধর্মাবলম্বীদের জন্য ১১ বছর সময়কালটিকে নামিয়ে আনা হচ্ছে ৬ বছরে।

১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের আওতায় ভারতে বসবাসকারী কোনও ব্যক্তি অথবা যাঁর বাবা মা ভারতীয়, অথবা যিনি ভারতে একটি নির্দিষ্ট সময়কাল জুড়ে বাস করে এসেছেন, তাঁরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবার যোগ্য।

বেআইনি অভিবাসীরা ভারতের নাগরিক হতে পারে না। এই আইনের আওতায়, ১) যদি পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়া কেউ দেশে প্রবেশ করে থাকেন অথবা ২) বৈধ নথি নিয়ে প্রবেশ করার পর নির্দিষ্ট সময়কালের বেশি এ দেশে বাস করে থাকেন, তাহলে তিনি বিদেশি অবৈধ অভিবাসী বলে গণ্য হবেন।

বিদেশি আইন ১৯৪৬ এবং পাসপোর্ট আইন, ১৯২০ মোতাবেক অবৈধ অভিবাসীকে জেলে পাঠানো বা প্রত্যর্পণ করা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন, আমেরিকায় অমিত শাহের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চায় কারা?

২০১৫ ও ২০১৬ সালে সরকার ১৯৪৬ ও ১৯২০ সালের আইনানুসারে অবৈধ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে কিছু গোষ্ঠীকে ছাড় দিয়েছে। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ও তার আগে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভারতে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টানদের ছাড় দেওয়া হয়েছে।

অর্থাৎ অবৈধ অভিবাসীদের ওই ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির সদস্যরা বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে বাস করলেও তাঁদের জেলে বা নিজেদের দেশে পাঠানো হবে না।

২০১৬ সালের নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল সংসদে আনা হয়েছে যাতে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব বিল সংশোধন করে এই ব্যক্তিদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া যায়।

বিল নিয়ে এ যাবৎ কী হয়েছে?

লোকসভায় এ বিল প্রথমবার পেশ হয় ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই। সে বছরের ১২ অগাস্ট বিল পাঠানো হয় যৌথ সংসদীয় কমিটিতে। কমিটি তার রিপোর্ট জমা দেয় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি। পরের দিন, ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি লোকসভায় সে বিল পাশ হয়।

ষোড়শ লোকসভা অধিবেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময়ে সরকার এ বিল রাজ্যসভায় আনার জন্য অতি তৎপর হয়ে ওঠে। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে বিলের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দেওয়ায় সরকার সংযত হয় এবং ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজ্যসভা সিনে ডাই হয়ে যায়। বিল আর পেশ করা হয়নি।

আরও পড়ুন, কোথায় কোথায়, কেন লাগু হবে না ক্যাব?

সংসদের কার্য প্রণালী অনুসারে লোকসভায় পাশ হওয়া বিল রাজ্য সভায় পেশ না হলে তামাদি হয়ে যায়। সে নিয়ম অনুসারে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলও তামাদি হয়ে যায়।

বিল নিয়ে বিতর্ক কেন?

এ বিল নিয়ে প্রধান আপত্তির বিষয় হল এখানে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের টার্গেট করা হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদে যে সমতার অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে, এ বিল তার পরিপন্থী।

তবে সরকারের বক্তব্য, মুসলিম প্রধান বিদেশে যেসব সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীরা ধর্মীয় কারণে হিংসার শিকার হন তাঁদের নাগরিকত্বদানই এ বিলের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ বিজেপি নেতারা বলে চলেছেন, দেশভাগের ফলে যাঁরা অসহায় হয়ে পড়েছিলেন, "মা ভারতী"র সেই সব পুত্র কন্যাদের আশ্রয়দানের মাধ্যমে ইতিহাসের ভুলকে সংশোধন করাই বিলের লক্ষ্য।

আরও পড়ুন, কেন ক্যাব প্রসঙ্গে বারবার উঠছে নেহরু-লিয়াকত চুক্তির কথা?

উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিকে এ বিলের ফলে বহুসংখ্যক বেআইনি বাংলাদেশিরা নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন বলে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে পাল্টে যাবে জনবিন্যাসের ধরন, কাজের সুযোগ কমবে, এবং নিজস্ব সংস্কৃতির ক্ষয় হবে।

রাজ্যসভায় বিল পেশের আশঙ্কায় এ বছরের শুরুতে প্রায় পুরো উত্তরপূর্ব ভারত জুড়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে ব্যাপক বিক্ষোভ সংঘটিত হয়।

তবে বিজেপি এ বিল পাশ করানোর ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

Citizenship Bill
Advertisment