Ram Mandir and Rajiv Gandhi: কংগ্রেস পার্টি বুধবার (১০ জানুয়ারি) জানিয়েছে, তারা ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রাম মন্দিরের অভিষেক এড়িয়ে যাবে। দলের তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'বিজেপি এবং আরএসএস নেতাদের দ্বারা অসম্পূর্ণ মন্দিরের উদ্বোধন স্পষ্টতই নির্বাচনী লাভের জন্য এগিয়ে আনা হয়েছে।' এটি রাম জন্মভূমি ইস্যুতে কংগ্রেসের অস্থির অবস্থানের সর্বশেষ অধ্যায়। হিন্দু এবং মুসলমান, উভয়কেই খুশি রাখার একটি প্রচেষ্টা। যা শেষ পর্যন্ত হিন্দু বা মুসলিম, কোনও পক্ষেরই সমর্থন পায়নি। এখানে তারই একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
- সংঘ ও বিজেপি রাম মন্দির ইস্যুতে অবস্থান ক্রমশই কট্টর করেছে।
- কংগ্রেস উভয় সম্প্রদায়কেই খুশি করার চেষ্টা চালিয়েছে।
- উত্তরপ্রদেশে ক্রমশই জমি হারিয়েছে কংগ্রেস, জমি বেড়েছে বিজেপির।
সংঘ পরিবারের রামমন্দির ইস্যুতে ভাবনা
১৯৮০-এর দশকে, যখন রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্ক কয়েক দশক ধরে আদালতে চলছিল, তখন আরএসএস এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) প্রচার শুরু করেছিল যে মন্দির নির্মাণ বিশ্বাসের ব্যাপার, মামলার নয়। ১৯৮৬ সালে, আরএসএস প্রতিনিধি সভা সরকারকে, 'রাম জন্মভূমির স্থান এবং সংলগ্ন জমি রাম জন্মভূমি ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করার' অনুরোধ করেছিল। পরের বছর, আরএসএস প্রতিনিধি সভা বলেছিল যে গুজরাতের সোমনাথ মন্দিরের মত, 'প্রাচীন কিন্তু জরাজীর্ণ রাম জন্মভূমি মন্দিরটিরও তার পুরোনো গৌরব ফিরিয়ে আনা দরকার।' বিজেপিরও ধারণা, এই বিরোধ আদালতের বাইরেই মিটিয়ে নেওয়া যেত। ১৯৮৯ সালের পালমপুর রেজোলিউশনে বলা হয়েছে এটি, 'দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। অথবা, যদি এটি সম্ভব না-হয়, তাহলে একটি সক্রিয় আইনের মাধ্যমে করা উচিত। মামলা-মোকদ্দমা কোনওভাবেই এই সমস্যার সমাধান নয়।' পরবর্তী বছরগুলোতে, জোট ধর্মের সঙ্গে মিল রেখে, বিজেপি আদালতে বা 'আপসি বাতচিত'-এর (পরামর্শ) মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পক্ষে তার সংশোধিত অবস্থান স্থির করে।
আরও পড়ুন- শীঘ্রই অযোধ্যার রাম মন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা, কী এই অনুষ্ঠান, কীভাবে হবে আয়োজন?
মন্দিরের তালা খুলে দেওয়া হয়
রামমন্দির আন্দোলনের জন্য ভিএইচপি (VHP) তাদের সংগঠনে- অশোক সিংঘল (Ashok Singhal), প্রাক্তন ইউপি কংগ্রেস নেতা এবং মন্ত্রী দাউদয়াল খন্না, প্রাক্তন আইপিএস অফিসার শ্রীশচন্দ্র দীক্ষিতকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। ভিএইচপি রাজীব গান্ধীর সরকারের আধিকারিকদের সঙ্গেও একাধিকবার বৈঠক করেছে। কিন্তু কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছয়নি। ভিএইচপি বাবরি মসজিদের তালা খোলার দাবিতে অনড় ছিল। কংগ্রেস, মন্দিরের আশপাশের হিন্দুদের অনুভূতির সমাধান করতে বা তার মুসলিম ভোটারদের শান্ত করতে পারেনি। ১৯৮৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর, কংগ্রেস এই পরিস্থিতি সামলাতে এনডি তিওয়ারির পরিবর্তে বীর বাহাদুর সিংকে (অবিভক্ত) উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ করে। ১৯৮৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, ফৈজাবাদের (বর্তমানে অযোধ্যা) একটি স্থানীয় আদালত রাম জন্মভূমির তালা খোলার নির্দেশ দেয়। কংগ্রেস নেতারা প্রকাশ্যে এই অগ্রগতির কৃতিত্ব দাবি করতে পারেননি। কিন্তু, নীরবে এই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করেছিলেন যে, তাঁদের সরকারই তালা খুলেছে।
বিজেপির কট্টরবাদ বনাম কংগ্রেসের দ্বৈত অবস্থান
এল কে আদবানির নেতৃত্বে বিজেপি, 'ছদ্ম-ধর্মনিরপেক্ষতা' অভিযোগ ইস্যুতে চাপ বাড়ায় এবং প্রকাশ্যে রামমন্দির আন্দোলনে যোগ দেয়। বাবরি মসজিদের তালা খোলার পর, সঙ্ঘ 'গণ জাগরণ'-এর কর্মসূচির মাধ্যমে মন্দিরের জন্য তার প্রচারকে ত্বরান্বিত করেছিল। বারাবাঁকি এবং এলাহাবাদ (বর্তমানে প্রয়াগরাজ)-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল। ১৯৮৭ সালে, প্রাদেশিক আর্মড কনস্ট্যাবুলারি (PAC)-এর কর্মীরা মিরাটের কাছে হাশিমপুরায় মুসলমানদের গণহত্যা করেছিল। বেশ কয়েকজন কংগ্রেস নেতা বীর বাহাদুর সিং সরকারকে রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিবাদে হিন্দুপন্থী লাইনের অনুমতি দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। সিং অবশ্য সে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কংগ্রেসের হিন্দু উচ্চবর্ণ এবং মুসলিম- উভয় ঘাঁটি অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টায় বীর বাহাদুর উভয়পক্ষের হয়েই খেলার চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৮৬ সালের জুন মাসে, তাঁর সরকার অযোধ্যায় ভিএইচপি-র 'রাম জন্মভূমি মুক্তি যজ্ঞ সমিতি'র তিনটি রথ আটক করে। কিন্তু, ২২ নভেম্বর ভিএইচপি-কে সন্তুষ্ট করার জন্য রথগুলোকে পুলিশি পাহারায় লখনউতে প্রেরণ করে। এর আগে ১৯৮৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর, সিং অযোধ্যায় একটি তিন দিনের 'রামায়ণ মেলা'য় যোগ দিয়েছিলেন। সন্ত ও মহন্তদের এই বার্ষিক সমাবেশ তাঁর পূর্বসূরি শ্রীপতি মিশ্র ১৯৮২ সালে শুরু করেছিলেন।
আরও পড়ুন- এ এক অন্য রামমন্দির, যেখানে শ্রীরামের রং কালো, পিছনে বিরাট ইতিহাস, কী সেটা?
উত্তরপ্রদেশে জমি হারায় কংগ্রেস
কংগ্রেস এই সময়ে একাধিক সংকটের সঙ্গে লড়াই করেছিল। যার মধ্যে ছিল ভিপি সিং-এর বিদ্রোহ। ইউপিতে তাদের অন্যতম নামী নেতা ভিপি সিং ১৯৮০-৮২ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৮৮ সালের জুনে, ভিপি সিং এলাহাবাদ থেকে লোকসভা উপনির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর, বীর বাহাদুরকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে রাজীব গান্ধী দিল্লিতে ডেকেছিলেন। আর, এনডি তিওয়ারি চতুর্থবারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। কংগ্রেস ততক্ষণে ভাঙনের মুখে পড়েছে। উত্তরপ্রদেশের বেশ কয়েকজন নেতা ভিপি সিংদের দলে এবং আরও কিছু নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৮৯ সালে, কংগ্রেস পার্টি দিল্লি এবং লখনউ, দুই জায়গাতেই তাদের ক্ষমতা হারিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী ভিপি সিংয়ের সরকার মুলায়ম সিং যাদব এবং ভিএইচপির নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের সঙ্গে একাধিক আলোচনা করেছে। বিজেপি ভিপি সিং এবং মুলায়ম সিংয়ের সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করার পরে, কংগ্রেস দিল্লিতে চন্দ্রশেখরের সরকারকে সমর্থন করে এবং ইউপিতে মুলায়মের সরকারকে রক্ষা করে। তারপরও কিন্তু, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা দিনকে দিন কমছিল। মুলায়ম মন্দিরের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেন। আর, কংগ্রেসের সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক দখল করেন। বিজেপির সামাজিক কৌশলের প্রকল্পটি মণ্ডল রাজনীতির সঙ্গে কমণ্ডলের রাজনীতিকে একত্রিত করেছিল। ১৯৯১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, বিজেপি হিন্দু ভোটকে একত্রিত করে ৪২৫টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ২২১টি আসনে জয়লাভ করেছিল। মন্দির সমস্যা সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমহা রাওয়ের প্রচেষ্টা সফল হয়নি। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়। চারটি রাজ্যে বিজেপির সরকারকে বরখাস্ত করেও কংগ্রেস কোনও রাজনৈতিক সুবিধা পায়নি। বরং ইউপিতে, রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটে বিজেপি, এসপি (সপা) এবং বিএসপি (বসপা)-র মত দলগুলোর মধ্যে।
এটি গত বছর প্রকাশিত একটি ব্যাখ্যার আপডেট সংস্করণ।