কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের জনসাধারণের মধ্যে যে ধকল তৈরি হয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেবার জন্য একটি তালিকা তৈরি করেছে।
করোনা প্রাদুর্ভাবের ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ধকল কীভাবে তৈরি হচ্ছে?
১২ মার্চ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, ক্রমাগত করোনার খবরের জেরে মুম্বইয়ের বেশ কিছু চিকৎসকের কাছে উদ্বেগ ও আতঙ্ক নিয়ে রোগীরা আসতে শুরু করেছেন। এরকম একটা সময়ে, যাঁদের উদ্বেগ (অ্যাংজাইটি) জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা রয়েছে তাঁরা বিশেষ করে সমস্যাতাড়িত হয়ে পড়ছেন।
সারা দুনিয়ার বহু মানুষকে বাড়ি থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে এবং আগামী অন্তত দু সপ্তাহ সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে বলা হয়েছে। মানুষজন গৃহবন্দি, যার অর্থ বাইরের জগতের সঙ্গে দৈনন্দিন যোগাযোগ কমে যাচ্ছে।
করোনা উপসর্গে আইবুপ্রোফেন খেতে নিষেধ করছেন চিকিৎসকরা
আমেরিকান ফাউন্ডেশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন সংস্থার ওয়েবসাইটে এক নিবন্ধে সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট ডক্টর ডোরিন মার্শাল লিখেছেন, কী ঘটছে আর কিসের মাধ্যমে তাদের জীবনে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে তার দিকে নজর রাখা মানুষের প্রকৃতি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই যখন নিশ্চয়তার পরিমাণ স্বল্প হয়ে পড়ে, তখন তাদের মনে ধকল তৈরি হয়। তিনি বলেছেন, এই উদ্বেগের কারণ হল, নিয়ন্ত্রণক্ষমতা নিয়ে মানুষের মনে যে ধারণা রয়েছে তা যে নেই, তা বুঝতে পারা।
মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে কী ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে?
ডক্টর মার্শাল বলছেন সংবাদের সঙ্গে যোগাযোগ কমাতে, ভিড় এড়িয়ে প্রকৃতির সঙ্গে যতদূর সম্ভব যোগাযোগ গড়তে এবং বন্ধু ও পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, মেন্টাল হেলথ ইউরোপ সহ প্রায় প্রতিটি স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা মানুষের কাছে রোগের খবরে চোখ-কান রাখা কমানোর অনুরোধ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে যে খবরে উদ্বেগ হচ্ছে, ধকল হচ্ছে, সে খবর দেখবেন না, শুনবেন না, পড়বেন না। করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বাস্তবোচিত যে সব খবর, সেগুলি ছাড়া অন্য খবর এড়িয়ে যাবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, হঠাৎ ক্রমাগত রোগের খবরে যে কোউ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তে পারেন।
আমেরিকার আরেকটি সংস্থা অ্যাবিউজ অ্যান্ড মেন্টাল হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন মানুষজনকে পরামর্শ দিয়েছে কেবলমাত্র বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের উপর ভরসা করতে এবং ২৪ ৭ খবর এড়িয়ে চলতে। ওই সংস্থার আরও পরামর্শ, উদ্বেগ, ডিপ্রেশন ও একাকিত্ব কাটানোর সেরা উপায় হল টেলিফোন, ইমেল ও টেক্সট।
আমেরিকার মেন্টাল হেলথ অ্যাসোসিয়েশন বলছে যাঁরা বাড়িতে রয়েছেন তাঁদের উচিত নিজেদের জন্য অন্য আরেকধরনের দৈনন্দিন রুটিন তৈরি করা, সে রুটিন মেনে চলা এবং অবসর বিনোদনের নতুন পদ্ধতি খুঁজে বের করা।
এর মধ্যে যেন দাঁতে ব্যথা না হয়
যাঁরা আইসোলেশনে রয়েছেন, তাঁদের কী হবে?
যাঁর সংক্রমিত তাঁদের দ্বারা যাতে অন্য কেউ সংক্রমিত না হয়ে পড়েন, সে জন্য তাঁদের আলাদা রাখা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ, সোশাল নেটওয়ার্কিং চালু রাখুন তাঁরা, যোগাযোগের মধ্যে থাকুন। বলা হয়েছে, "ধকলের এই সময়ে নিজের প্রয়োজন ও অনুভূতির ব্যাপারে খেয়াল রাখুন। যেসব কাজ উপভোগ করেন, তেমন স্বাস্থ্যকর কাজকর্মে থাকুন এবং হালকা থাকুন। নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন, নিয়মিত ঘুমোন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান।"