নোভেল করোনাভাইরাস রুখতে দেশ লকডাউন হলেও অর্থনীতিকে চালু রাখতে, বাজারকে চালু রাখতে চালু ছিল দেশের সব ব্যাঙ্ক। রীতিমতো 'এমারজেন্সি' সার্ভিসের তকমা এঁটেই জনসাধারণের জন্য খোলা রাখা হয়েছিল পরিষেবা। তবে করোনার ধাক্কা যে একেবারে লাগেনি ব্যাঙ্কের গায়ে তা নয়। বাজার বন্ধ হওয়ায় 'ক্যাশ ফ্লো' বা নগদ অর্থের লেনদেনে ধস নামে। ধাক্কা খায় লোকবলও। সবটাই দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিতে পারলেও চলতি অর্থবর্ষে কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি কীভাবে সামাল দেবে ব্যাঙ্ক, ওয়াকিবহাল মহলে এখন চর্চিত বিষয় এটাই।
তিন বছর ধরে চলা ব্যাঙ্কের কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির বিতর্কিত সমস্যার নিষ্পত্তি করতে ভারতের ব্যাঙ্কগুলির শীর্ষ সংস্থা ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ) এবং ইউনাইটেড ফোরাম অফ ব্যাঙ্ক ইউনিয়ন (ইউবিএফইউ)-এর মধ্যে একটি মৌ-চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তি মোতাবেক চলতি বছরে প্রায় ৮ লক্ষ ৫০ হাজার কর্মচারীর ১৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করতে হবে ব্যাঙ্কগুলিকে। এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিও। নিয়মানুসারে পারফরম্যান্স-লিংঙ্কড ইন্সেন্টিভ (পিএলআই)-এর ভিত্তিতে বেতন বৃদ্ধি হবে। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে এই নয়া নিয়ম চালু হয়েছে। কর্মীদের মধ্যে কাজের উদ্দীপনাকে বাড়িয়ে তুলতে এই ইনসেন্টিভ সিস্টেম চালু করে ব্যাঙ্ক ম্যানেজমেন্ট এবং ইউনিয়নগুলি। এর ফলে পুরোনো বেসরকারি ব্যাঙ্ক, বিদেশি ব্যাঙ্কের কর্মীরা উপকৃত হবে। তবে নতুনদের মধ্যে এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক এই নিয়মের আওতায় পড়ে না।
এর ফলে ব্যাঙ্কগুলির কত ব্যয় হবে?
আইবিএ এবং ইউনিয়ঙ্গুলির মধ্যে যে মৌ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল সেই মোতাবেক বার্ষিক মজুরি বিলের ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। যদিও ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বার্ষিক ১৫ শতাংশ করেই বেতন বৃদ্ধি হত। এই বিষয়টিকে উল্লেখ করেই ইউনাইটেড ফোরাম অফ ব্যাংক ইউনিয়ন প্রাথমিকভাবে ২০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছিল। যদিও আইবিএ এই দাবি অস্বীকার করেছিল। দীর্ঘ আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে কর্মী এবং অফিসারদের মধ্যে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি বন্টন পৃথকভাবে করা হবে।
আরও পড়ুন, ক্রমশ বাড়ছে সোনার দাম! সোনা কিনে রাখা কতটা যুক্তিপূর্ণ?
যদিও এই সিদ্ধান্ত যেই সময় নেওয়া হয়েছিল তখন অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাঙ্ক জানায় যে তারা অনেকটা ক্ষতির মধ্যে দিয়ে চলেছে বেশ কয়েক মাস ধরে। এদিকে এখন করোনা অতিমারীর প্রভাব মোকাবিলা করতে প্রাপ্ত ঋণে স্থগিতাদেশ দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। অন্যদিকে, নন পারফর্মিং অ্যাসেট-এর পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে বলে জানান হয়েছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়বে মজুরি বৃদ্ধিতে এমনটাই মত বিশেষজ্ঞ মহলে। তাঁদের কথায়, কোভিড পরিস্থিতিতে নির্ধারিত মজুরি বৃদ্ধি নাও হতে পারে। কারণ ব্যাঙ্কগুলি নিজেরাই লাভের মুখ দেখতে পারছে না। লোন নেওয়া, ফিক্সড ডিপোজিট জমার পরিমাণ কমেছে। আর্থিক ধাক্কা সামলে তাই কতটা বেতন বৃদ্ধি হবে তা ভাবিয়ে তুলছে। তবে ব্যাঙ্কের এক সূত্র বলেন, "এই বেতন বৃদ্ধি ব্যাঙ্কের কাছে এমন কিছু দায়ভার নয়। যা ভাবা হচ্ছে তেমনটা হবে না। যে নিয়ম ছিল সেই মতোই কাজ হবে।"
এই পারফরম্যান্স লিঙ্কড ইনসেন্টিভ কী? কীভাবে বেতন বাড়ছে?
ব্যাঙ্কের বেতন বৃদ্ধির দীর্ঘ সমস্যার সুরাহা হয় এই সিদ্ধান্তে। যেখানে একটি নির্দিষ্ট পাবলি সেক্টর ব্যাঙ্কে লোভ এবং মোট মুনাফার উপর ভিত্তি করে পারফরম্যান্স লিঙ্কড ইনসেন্টিভ দেওয়া হয় কর্মীদের। যদিও বেসরকারি এবং বিদেশি ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে এই নিয়ম ঐচ্ছিক। মৌ-চুক্ত্যিতে বলা হয়েছে, "পিএলআই সকল কর্মীদের জন্য বার্ষিক এবং তার চেয়েও বেশি বেতনের উপরে প্রদানযোগ্য হবে। পিএলআই ম্যাট্রিক্স ব্যাঙ্কের বার্ষিক পারফরম্যান্সের উপর নির্ভর করে কর্মীদের কত হারে তা দেওয়া হবে তা সিদ্ধান্ত নেবে।"
আরও পড়ুন, আয়করের নয়া ‘ফর্ম ২৬এএস’ কী? কর রিটার্নে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
যে ফর্মুলা রয়েছে তাই মোতাবেক যদি ব্যাঙ্কের বার্ষিক (year-on-year) প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের কম হয় তাহলে সেখানে কোনও ইনসেন্টিভ দেওয়া হবে না। যদি প্রবৃদ্ধি ৫ থেকে ১০ শতাংশ থাকে তাহলে ৫ দিনের বেতন ইনসেন্টিভ হিসেবে দেওয়া হবে। যদি প্রবৃদ্ধি ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হয় সেক্ষেত্রে ১০ দিনের বেতন ইনসেন্টিভ হিসেবে দেওয়া হবে আর যদি ১৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয় তাহলে ১৫ দিনের বেতন ইনসেন্টিভ হিসেবে দেওয়া হবে কর্মীদের।
এই পিএলআই আদতে ব্যাঙ্ক কর্মীদের কাজে উৎসাহ জোগানোর প্রয়াস এমনটাই বলা হয়েছে মৌ-চুক্তিতে। সেখানে বলা হয়, “আজকের ব্যাঙ্কিং সেক্টরে বিভিন্ন শ্রেণির ব্যাঙ্ক - সরকারি, বেসরকারি এবং বিদেশী ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে রয়েছে কঠোর প্রতিযোগিতা রয়েছে। সেখান থেকে কর্মীদের নিজেদের ব্যাঙ্ককে আরও বড় করে তোলার লক্ষ্যে যে পারফরম্যান্স করবে সেই মতই তাঁদের পুরস্কৃত করা হবে।"
Read the story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন