Advertisment

Explained: তৃতীয় তরঙ্গ এলে, শিশুরা বেশি আক্রান্ত হবে, এই ভবিষ্যদ্বাণী অবাস্তব, অনুমান নির্ভর, অবৈজ্ঞানিক

মহামারি বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কী জ্ঞান অর্জন করলাম? প্রবীণ চিকিৎসক তথা সেন্ট স্টিফেন'স হসপিটালের কনসালট্যান্ট ম্যাথু ভার্গিসের মতামত।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Corona third wave oxygen shortage covid cases in children india

হামারি বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কী জ্ঞান অর্জন করলাম?

কোভিডের ভয়ঙ্কর দ্বিতীয় তরঙ্গে নাভিশ্বাস। চারদিকে প্রাণবায়ুর হাহাকার। অক্সিজেনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হলেন বহু। মৃত্যুমিছিলের দৈঘ্য বাড়ছিলই। আমরা কী শিখলাম এই তরঙ্গ থেকে? মহামারি বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কী জ্ঞান অর্জন করলাম? প্রবীণ চিকিৎসক তথা সেন্ট স্টিফেন'স হসপিটালের কনসালট্যান্ট ম্যাথু ভার্গিসের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কোনান শেরিফ এম এবং মনোজিৎ মজুমদার। অনলাইন Explained.Live ইভেন্টে হয়েছিল কথাবার্তা। তারই সম্পাদিত অংশ আপনাদের জন্য:

Advertisment

দ্বিতীয় তরঙ্গে অক্সিজেন মাত্রার পতন সম্পর্কে…

কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিরাট সংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে-- এমন রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। সংক্রমণ যখন শীর্ষে, তখন করোনা পরীক্ষার সুযোগ সহজে পাননি অনেকে, পরীক্ষায় দেরি হয়েছে।… টেস্টিং ও হাসপাতালের ক্ষমতার চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা হয়ে উঠেছিল অনেক বেশি। এই তরঙ্গে কত মানুষের অক্সিজেন লেগেছিল, তা জানার প্রয়োজন রয়েছে। যদি আমরা ডোর-টু-ডোর সমীক্ষা করি, কোন বাড়িতে কত জন কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন, কত জনের শ্বাসকষ্ট হয়েছিল, কত জনের অক্সিজেন প্রয়োজন হয়েছিল, তা সামনে এসে যাবে সমীক্ষায়। এর পর দুই তরঙ্গের মধ্যে তুলনা করলে ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। এটা খুবই জটিল পদ্ধতি। সময় ও খরচ সাপেক্ষ। তা ছাড়া যাঁদের এই সমীক্ষার কাজে নিয়োগ করা হবে, তাঁদের পক্ষেও ঝুঁকির। তবে একটা কথা, শ্বাসকষ্ট এবং অক্সজেনের অভাব থেকে স্পষ্ট, কোভিড হলে ফুসফুসের ক্ষতিই সবচেয়ে বেশি হচ্ছে, এটাই এক সম্বর সমস্যা। এটাই বেসলাইন।

উপসর্গের অগ্রগতি

৩৫০টি-র বেশি করোনা-কেসের নিখুঁত তথ্য রয়েছে আমার কাছে। দেখছি, আগের তরঙ্গে নবম কিংবা দশম দিনে পেটখারাপ হয়েছিল, এই তরঙ্গে এটি প্রথম উপসর্গ হিসেবে দেখতে পেয়েছি। সংক্রমণের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় দিন পরে হয়েছে। স্বাদ চলে যাওয়া এবং গন্ধ চলে যাওয়ার মতো উপসর্গ প্রথম দফায় অষ্টম ও নবম দিনে দেখা গিয়েছিল, এই দফায় তা দেখা গিয়েছে তৃতীয় এবং চতুর্থ দিনে। বোঝাই যাচ্ছে, গত বারের তুলনায় উপসর্গ এগিয়ে এসেছে বা ফার্স্টফরওয়ার্ড হয়েছে। স্পষ্ট: এই তরঙ্গে ভাইরাস আরও বেশি সংক্রামক। গত বার কোনও পরিবারের এক জন কিংবা দু'জন সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। এবার গোটা পরিবার আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকী উচ্চবিত্ত পরিবারে গাড়ির চালক ও কাজের লোকও বাদ যাননি।

ভেন্টিলেটরের ব্যবহার

ভেন্টিলেটর ব্যবহার সম্পর্কে এই দফায় আমাদের দুটি শিক্ষা হয়েছে। প্রথমত, করোনার ফলে প্রকৃত অর্থে ভাইরাল নিউমোনিয়া হয় না। অটো-ইমিউন অ্যাটাক হয়। ফুসফুসের রক্তনালীগুলিতে রক্ত জমাট বেঁধে যায় তাতে, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। নিউমোনিয়া বলে মনে হয়। যেহেতু নিউমোনিয়া হয় না, তাই রোগীর পক্ষে ভাল নয় ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন ( রোগীর শ্বাসনালীতে একটি নলের এক প্রান্ত লাগানো হয়, অন্য প্রান্ত একটি যন্ত্র বা মেকানিকাল ভেন্টিলেটরের সঙ্গে জোড়া, এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ঢুকিয়ে দেওয়া হয় ফুসফুসে)। এভাবে ভেন্টিলেশনের ফলে অ্যালভিওলাই (ফুসফুসের শ্বাসনালীগুলির শেষে কতগুলো বেলুন-আকৃতির থলি থাকে, তাকে বলে অ্যালভিওলাই। রক্ত ও ফুসফুসের মধ্যে অক্সিজেন ও কার্বনডাই অক্সাইডের আদানপ্রদানের কাজ করে এরা। নিউমোনিয়ায় অ্যালভিওলাইগুলি সংক্রমিত হয়। ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে সংক্রমিত নয় ও অক্সিজেনের অভাবে নির্জীব হয়ে পড়া অ্যালভিওলাইকে পুনর্জীবিত করে তোলার চেষ্টা করা হয়)। কিন্তু করোনায় অ্যালভিওলাইগুলিতে কোনও সমস্যা হয় না, রক্তনালীগুলিতে ব্লাড ক্লটের কারণে এগুলির সঙ্গে ফুসফুসের টিউবগুলির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে থাকে। ফলে, ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে অ্যালভিওলাইতে জোর করে অক্সিজেন ঢোকানোর চেষ্টা করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। হ্যাঁ, আমরা এটাও স্পষ্ট বুঝতে পেরেছি মহামারির দ্বিতীয় তরঙ্গে। ফলে নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে অক্সিজেন দেওয়া উচিত। মানে, নাকের মাধ্যমে প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন দেওয়া উচিত। এর বেশ-কটি ভাগ রয়েছে। এই ভাবে ৬০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন দেওয়া যায় কোনও রোগীকে।

কার্যকরী হোম আইসোলেশন

মৃদু বা মাইল্ড, মাঝারি বা মডারেট এবং গুরুতর বা সিভিয়ার। প্রোটোকল অনুযায়ী করোনা সংক্রমিত রোগীকে এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। মাঝারি বা মডারেট সংক্রমণের রেসপিরেটরি রেট বা শ্বাসপ্রশ্বাসের হার মিনিটে ২৪-এর বেশি। কিন্তু আমরা কি রেসপিরেটরি রেটের হিসেব রাখতে পারি? তাই কী ভাবে এটা করা যায়, তার প্রচার চালানো দরকার। এ জন্য হেলথকেয়ার ভল্যান্টিয়ারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। আর একটি বিষয় হল, অক্সিজেন স্যাচুরেশন বা অক্সিজেনের মাত্রা বোঝা। মৃদু, মাঝারি, গুরুতর সংক্রমণ কোন ধাপে অক্সিজেনের মাত্রা কেমন হয়, তা বুঝতে হবে। কোভিডের স্পষ্ট টাইমলাইন প্যাটার্ন রয়েছে। জানতে হবে, অক্সিজেন লেভেল কোন স্তরে নামলে হাসপাতালে যেতে হবে। এর প্রশিক্ষণ দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।… যদি কারওর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯২-এর নীচে নেমে যায় , মানে, ফুসফুসের ক্ষমতার দুই-তৃতীয়াংশ ব্যবহার সে করে ফেলেছে। কারওর ক্ষেত্রে অবশ্য সেটা হতে পারে পঞ্চাশ শতাংশ।… এমন পরিস্থিতি হলে তাঁকে অক্সিজেন দিতে হবে, হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

স্টেরয়েডের ব্যবহার

আগের তরঙ্গে স্টেরয়েড সংক্রমণের সাপ্তম দিন পর দেওয়া যেত। এখন উপসর্গগুলি ফার্স্টফরওয়ার্ড হয়ে গিয়েছে বলে পঞ্চম কিংবা ষষ্ঠ দিনের আগে দেওয়া যাবে না স্টেরয়েড। এই সময়ের আগে এটি দেওয়াটা ঝুঁকির। কারণ স্টেরয়েড দেহের প্রতিরোধ শক্তিতে লাগাম দেয়, অ্যান্টিবডি তৈরিতে বাধা দেয়। করোনার ভাইরেমিয়া (ভাইরাস দেহে ছড়িয়ে পড়ার প্রাথমিক পর্যায়) বেশি দিন ধরে চলতে থাকে।

অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের ব্যবহার

রেমডেসিভির হল অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ। ইবোলাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে এর ব্যবহার হয়ে থাকে। করোনায় রেমডেসিভির কাজে আসছে বলে যথেষ্ট প্রমাণ মেলেনি এখনও। তা ছাড়া যেহেতু এটা অ্যান্টি ভাইরাল, ব্যবহার করতে হবে কোভিড সংক্রমণের পাঁচ-ছ' দিনে (ভাইরেমিয়া-পর্বে)। এর পর যদি ব্যবহার করা হয়, তা হলে কাজ করবে না। কারণ, তখন অটো-ইমিউন অ্যাটাক শুরু হয়ে গিয়েছে শরীরে (তখন দরকার স্টেরয়েড ও রক্ত জমাট-বাঁধা আটকানোর ওষুধ)। তা ছাড়া রেমডেসিভিরের মতো অত্যন্ত দামি ওষুধ কাজে আসছে কিনা স্পষ্ট করে না জানলে তো মুশকিল। এত দামি বলে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকে এই সব ওষুধ। রেমডেসিভির কিনে আনতে বলা হচ্ছে হাসপাতাল থেকে, অনেকেই পারছেন না, এতে যদি কোনও প্রিয়জনের মৃত্যু হয়, তা হলে প্রবল অপরাধ বোধে ভুগছেন তাঁরা।
মিউকরমাইকোসিস সম্পর্কে

মিউকরমাইকোসিস কেন হচ্ছে? পুরো উত্তর জানি না। এর সম্ভাব্য কারণ অনুমান করতে পারি। একজন সাধারণ চিকিৎসক হিসেবে দু'বছর আগে একটিও মিউকরমাইকোসিসের কেস দেখিনি। এখনও সংখ্যাটা সামান্য, এর মধ্যে গুরুতর অসুস্থের সংখ্যা আরও কম। যাঁদের অন্য কোনও কঠিন অসুখ রয়েছে, কোনও না কোনও ভাবে যাঁদের প্রতিরোধশক্তি হ্রাস পেয়ে গিয়েছে-- যেমন ডায়াবিটিস, সাপোর্ট সিস্টেমে থাকতে হচ্ছে, প্রচুর অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েছেন, কিংবা মাল্টি অর্গান ফেলিওর… তখন মিউকরমাইকোসিস হতে পারে। কেউ কেউ বলছেন, এটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন থেকে হচ্ছে, এর কারণ অক্সিজেন হিউমিডিফায়ার (অক্সিজেন সিলিন্ডারের মুখে ডিস্টিলওয়াটার ভরে লাগানো হয় একটি বোতল, অক্সিজেনের সঙ্গে সেই জল থেকে উৎপন্ন বাস্প টানেন রোগী। শুধু অক্সিজেন টানলে নাক-মুখ অত্যন্ত শুকনো হয়ে ওঠে, তাই এই ব্যবস্থা)। কিন্তু এই ছত্রাক সর্বত্র রয়েছে, মাটিতে, গাছে রয়েছে, হাওয়াতেও আছে। কোনও রোগী যদি ইমিউনোকম্প্রোমাইড হয়ে পড়েন, তখনই চিন্তার।
প্রশ্ন হল, কেন এখন দেখা যাচ্ছে মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হতে? করোনা থেকে বাঁচতে বহু রোগীকে স্ট্রেরয়েড দেওয়া হয়েছে, এঁদের অনেকের আবার ডায়াবিটিস ছিল, অনেকের মূত্রাশয়ের অসুখ ছিল, অনেকের ক্যানসার, অথবা কোনও এই ইমিউনোসাপ্রেসিভ থেরাপি চলছিল।…

তৃতীয় তরঙ্গ ও শিশুরা

ইনফ্লুয়েঞ্জা চিরকালের মতো চলে যায়নি, প্লেগ চলে যায়নি চিরকালের মতো। আর, করোনাভাইরাস দেড় বছর আমাদের সঙ্গে রয়েছে। অনেকের মৃত্যু হয়েছে এতে, বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। বড় সংখ্যক আক্রান্তের কোনও উপসর্গ ছিল না। উপসর্গহীন জনগোষ্ঠী হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিয়েছে। সাধারণত জনগোষ্ঠীর ৬০-৭০ শতাংশ সংক্রমিত হলে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে ওঠে। অনেক সময় এর চেয়ে কম সংক্রমণও হার্ড ইমিউনিটির দিকে নিয়ে যায়। সেই জন্য ভাইরাসের গতিপ্রতিকৃতি বোঝা দরকার। করোনাভাইরাস আমাদের সামনে গবেষণার এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে, আগামী হাজার বছরে যা আর আসবে কি না জানি না।


এখন প্রশ্ন- নতুন তরঙ্গ কি আসবে? এই ঢেউকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। এর পর আরও মারাত্মক কোনও স্ট্রেন আসবে বলে আমি ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি না। এলেও অদূর ভবিষ্যতে সেই সম্ভাবনা নেই বলেই আমার মনে হয়। কেন এটা বলছি? যে ৩৫০টি কেস স্টাডি করেছি, তাতে দ্বিতীয় বার সংক্রমিত হয়েছেন মাত্র তিন জন। যাঁদের এই অসুখ হয়েছে একবার, তাঁরা করোনা থেকে রক্ষা পাবেন পাঁচ-ছ' মাস। চলমান এই জনগোষ্ঠী, একে অপরকে দিয়ে যাচ্ছে ভাইরাস, এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে ভাইরাস পৌঁছে গিয়েছে। ফলে ওই পাঁচ-ছ' মাসের জন্য যথেষ্ট ইমিউনিটি তৈরি অনেকেরই। হতে পারে পাঁচ-ছ' মাস পর কোনও তরঙ্গ এল, কিন্তু তার প্রকোপ অনেক কম হবে বলেই মনে হয়। তবে আমাদের আত্মসন্তুষ্টি এসে গেলে, সমস্যায় পড়ব। মনে করবেন না ভ্যাকসিন ১০০ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে। এমন কোনও ভ্যাকসিন আসেনি, যা ১০০ শতাংশ সুরক্ষা দিয়েছে।

আরও পড়ুন- টিকা নিয়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করেনি সরকার, মমতাকে চিঠি চিকিৎসক মহলের

পরবর্তী তরঙ্গ এলে, শিশুরা বেশি আক্রান্ত হবে। এই ভাবনা অন্ধকারে গুলি চালানো ছাড়া আর কিছু নয়। এমন কোনও ইঙ্গিতও মেলেনি। এর মধ্যে কোনও বিজ্ঞানও নেই। এটা ঠিক দ্বিতীয় তরঙ্গে আগেরটির তুলনায় বেশি শিশু করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। কিন্তু প্রথম তরঙ্গ অনেক বেশি সময় ধরে ছিল, ফলে দুই তরঙ্গে মোট সংক্রমণের সংখ্যাটা জানা প্রয়োজন। এ থেকে অবশ্য তৃতীয় তরঙ্গ এলে শিশুরা বেশি কোপে পড়বে, সেই ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। দ্বিতীয় তরঙ্গের কথাই ভাবেননি কেউ, তা হলে কী ভাবে তৃতীয় তরঙ্গের বলা হচ্ছে, শিশুরা বেশি সংক্রমিত হবে, এর পিছনে যুক্তিটাই বা কী?

আমি অন্য ভাবে ভাবতে পারি। ১৫ বছরের কম বয়সীদের সংখ্যা এ দেশে ৩৮ শতাংশ, ৪০ কোটির বেশি। এদের ভ্যাকসিন দিতে হবে। আমরা শিশুদের উপর ভ্যাকসিনের পরীক্ষা শুরু করে দিয়েছি। এটা করার দরকার ছিল। কিন্তু এখনও তাদের জন্য প্রতিষেধক এসে পৌঁছয়নি বাজারে। তৃতীয় তরঙ্গে শিশুরা করোনা আক্রান্ত হবে বেশি করে, এই ভয় ছড়িয়ে দেওয়ার ফলে, হতে পারে বিদেশের বাজারে শিশুদের জন্য যে ভ্যাকসিন মিলছে, ধনী বাবামায়েরা যেন-তেন-প্রকারে তা-ই কিনে আনবেন। আমি মনে করি না এই ভাবে ফিয়ার সাইকোসিস তৈরির কোনও দরকার আছে।
ফলে বলাই যায়, পরবর্তী তরঙ্গের ভাবনা এবং শিশুরা বেশি আক্রান্ত হবে, এ সব বিশুদ্ধ অনুমান।

শ্রোতাদের প্রশ্ন

কোভিড পরবর্তী সমস্যা বা long covid-এ কী পরামর্শ?

আমরা বোঝার চেষ্টা করছি, কোভিড পরবর্তী উপসর্গগুলি কী। দেখতে পাচ্ছি, কোভিড হয়েছিল এমন অনেকেই আসছেন ক্লান্তি, গায়ে ব্যথা, পেশীর যন্ত্রণা নিয়ে। ফুসফুসের ক্ষতির কারণে এটা হচ্ছে।… যাঁদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল, অক্সিজেন দিতে হয়েছিল, তাঁদের বেশি সমস্যা দেখা যাচ্ছে। আমরা কষ্টকর ব্যায়াম করতে তাঁদের বারণ করছি। কোভিড হলে রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা থাকে। ফলে এর প্রতিরোধে ওষুধ দেওয়া হয় তিন চার সপ্তাহের জন্য। লং কোভিড উপসর্গের মধ্যে অন্ত্রে ক্লটিংয়ের সমস্যাও রয়েছে। দু-তিন সপ্তাহ পর অন্ত্রের এই সমস্যার সমাধানে অপারেশন করা যেতে পারে। আরেক ধরনের রোগী দেখতে পাচ্ছি আমরা, হাতে-গোনা দু-এক জনের দেখা গিয়েছে মিলার ফিশার সিন্ড্রোমের মতো অসুখ, বাচ্চাদের কাওয়াসাকি হতে দেখা গিয়েছে।

অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জন্য পরামর্শ কী?

সাধারণত অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের ভ্যাকসিন নিলে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা ভ্যাকসিন নিয়ে সুস্থ সন্তান প্রসব করেছেন বলেই দেখা গিয়েছে।.. কিন্তু ভ্যাকসিনের ট্রায়াল কি অন্ত্বঃসত্ত্বা মহিলাদের উপর হয়েছে? না, হয়নি। তাঁদের সুরক্ষার কারণেই হয়নি। কিন্তু ০.৫ শতাংশ মানে ২০০-র মধ্যে এক জনের ফলাফল খারাপ হয়েছে। ঝুঁকি বনাম লাভের মধ্যে তুলনা করলে লাভের পাল্লা ভ্যাকসিনে অনেক বেশি ভারি। তবে কয়েকটিতে যেহেতু খারাপ ফল হয়েছে, মা ও শিশু দু'জনেই মারা গিয়েছে কিংবা মা মৃত শিশুর জন্ম দিয়েছেন… । তাই রেকমেন্ডেশন হচ্ছে, যদি জানতে পারেন আপনি অন্তঃসত্ত্বা, তা হলে দশ সপ্তাহ পরে ভ্যাকসিন নিন।

Read in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus India Corona Corona India Oxygen Crisis
Advertisment